Foture
মুজতবা আল মামুন, সাংবাদিক, কলকাতা : মহাভারতের যুদ্ধে পাশে কাউকেই পান নি। শত্রুপক্ষ যখন দলবদ্ধ ভাবে ঘিরে ধরে, একাকী একটা বিক্রমী বাঘও তেজ হারিয়ে ফেলে। সদ্য শেষ হওয়া লোকসভা নির্বাচন ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই। বিপদটা কেমন তা জানতেন বিজেপি বিরোধী নেতৃত্ব । কিন্তু লড়াইয়ের ময়দানে জোটবদ্ধ হয়ে ভয়ংকর বিপদের মোকাবিলা করার সময় এলো যখন, দেখা গেল বিরোধীরা ছত্রভঙ্গ। বিরোধী নেতৃত্বের অনেকে রাহুলকে মেনে নিতে পারলেন না। যে যার মত লড়লেন এবং সবাই মিলে হারলেন। এটা মেনে নিতে পারেন নি রাহুল। মুখে ভালো ভালো কথা বলা নেতা-নেত্রীদের স্বরূপ চিনে ফেলার পর, রাজনীতিতে রাহুল যে বীতশ্রদ্ধ, তা স্পষ্ট। বিজেপির বিপুল ভাবে ফিরে আসা, সংঘ পরিবারের হিংস্রতার ভয়ংকর প্রকাশ..... দেশকে এক অগ্নিপথের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এ সময় শক্ত হাতে হাল ধরে, ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে লেফট অ্যান্ড রাইট ফাইট দিতে পারে একমাত্র সর্বভারতীয় কোনও দল। এবং তরুণ নেতৃত্ব। সেদিক দিয়ে যোগ্য দল ছিল জাতীয় কংগ্রেস এবং নেতা ছিলেন তরুণতুর্কি রাহুল গান্ধী। দলের দযিত্ব হাতে নিয়ে তিনি সাফল্য পেতে শুরু করেছিলেন। গোবলয়ের তিন রাজ্য বিজেপির হাত থেকে কেড়ে নিয়েছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে বিভিন্ন উপনির্বাচনে কংগ্রেস জয় পেতে শুরু করেছিল। হতাশার বিষাদ কাটিয়ে কংগ্রেস কর্মীদের মন চাঙ্গা হয়ে উঠছিল। সর্বোপরি দেশের গণতন্ত্রপ্রিয়, ধর্মনিরপেক্ষতায় আস্থাশীল মানুষও রাহুল ও কংগ্রেসকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল। এটাই হল কংগ্রেসের কাল। শুধু বিজেপি নয়, বিজেপি বিরোধী দলগুলোও রাহুলের পিছনে পড়ে গেল। কাঁকড়ার মত রাহুল ও তাঁর দলকে টেনে নামানো তথা এগোতে না দেওয়ার শপথ নিয়ে আদা-জল খেয়ে নেমে পড়েছিল। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির তো হঠাৎ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার শখ হলো। জনপ্রিয়তার শিখরে আছেন ভেবে, মাত্র বেয়াল্লিশ আসনের ওপর দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্নে মেতে উঠলেন। এতদিন ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের কথা বলে এসে, নির্বাচন ঘোষণা হতেই, তড়িঘড়ি সব আসনে প্রার্থী দিয়ে, জোট বা বোঝাপড়ার রাস্তায় পাঁচিল তুলে দিলেন। ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের শ্লোগানও ছিল, গড়া হবে অবিজেপি,অকংগ্রেসী সরকার। একই ছবি দেখা গেল অন্যান্য রাজ্যেও। মায়াবতী-অখিলেশ কংগ্রেসকে নিলেন না। আপও নিল না। মায়াবতীও প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। দক্ষিণেরও কেউ কেউ রাহুলকে নিলেন না। বামেরাও না। এই নির্বাচনে জিতলে বিজেপি আরও ভয়ংকর হবে, গণতন্ত্রের মূল কাঠামোয় ঘা দিতে পারে। এটা জানার পরও, অবিজেপি কোনও দল বলে নি যে, এখন লাভ-লোকসানের হিসেব ভুলে, বিজেপিকে রুখে দিতে, এসো এক সঙ্গে লড়ি।
রাহুলের দলের ঐতিহ্য ও সর্বভারতীয় গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে । রাহুলই নেতৃত্ব দিন। তার বদলে প্রধানমন্ত্রীর কুরশির জন্যে বিরোধী নেতৃত্বকে কামড়াকামড়ি করতে দেখলো দেশবাসী। এতে এটা স্পষ্ট হলো যে, বিজেপি-বিরোধী নেতৃত্ব চান নি, রাহুল প্রধানমন্ত্রী হোন। তাই কাঁকড়ার মত পিছন থেকে টেনে ধরে রাহুলকে ওপরে উঠতে দেওয়া হল না। শুধু তাই নয়, দেশকে বিপজ্জনক শক্তির হাতে তুলে দেওয়া হল। এটা আঞ্চলিক নেতৃত্বের ঈর্ষা ও লোভ। এবং তীব্র রাহুল-বিদ্বেষ। দলের ভিতরেও তাঁকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হল। দলের একাংশ পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ খুঁচিয়ে তুললো। তাতে বিরক্ত রাহুল পদ থেকে সরে গিয়ে বোঝাতে চাইলেন, আমাকে নিয়ে যখন এত আপত্তি, সরে দাঁড়াচ্ছি। এ সবের পরও রাহুল সংযমের পরিচয় দিয়ে, টুইটার বার্তায়, লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ভরাডুবির জন্য নিজেকে দায়ী করেছেন। বিজেপি যাতে অসহিষ্ণুতা ও হিংস্রতার চাষ করতে না পারে, সে লক্ষ্যে প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে কংগ্রেসকে, এটা মনে করিয়ে দিয়েছেন। রাহুল লিখেছেন, তার লাই ছিল প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং সংঘের বিরুদ্ধে। কারণ, তিনি ভালোবাসেন ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শকে। কিন্তু মোদি এবং আরএসএস-এর বিরুদ্ধে সংগ্রামে এক সময় তিনি সম্পূর্ণ একলা হয়ে পড়েছিলেন।
অথচ এটা সম্মিলিত লড়াই দেওয়ার বিষয় ছিল। তা হল না। এজন্যই তীব্র অভিমানে তাকে দলের সর্বোচ্চ পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিতে হলো।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours