সুবীর পাল, এডিটর, দ্য অফনিউজঃ
পুরীর রথ থেকে মহেশের রথ। সেকি পৃথিবী জোড়া উৎসবের রেশ ।সর্বত্র জয় জগন্নাথের জয় জয়াকার।এই হৈ হৈ রৈ রৈ ফ্যাণ্টমে কারও চোখে পড়ার কথা নয়
একটি খুব ছোট রথের এক অতি নামমাত্র আয়োজনের । তবু সেখানে পূজিত হল জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর ।একেবারে সার্থক ভাবে ।
পশ্চিম বর্ধমান জেলার অণ্ডাল থানার দক্ষিণখণ্ড এলাকা।অতি আটপৌরে এলাকা।আর সেখানেই খুব ছোট আকারের একটা রথ নিয়ে বাচ্চাদের আয় তবে সহচরী উচ্ছাস ।এ আর এমন কি ?
এরকম তো গ্রাম বাংলার প্রতিটি অলিগলির তস্য কথা । তবু অতি সামান্যর চেনা অচেনা জগতেও তো মানবতা কখনও থমকে এসে দাঁড়ায় ।এখানেও যে এক নগন্য রথ কে ঘিরে সূচিত হয়ে গেল হল মনুষ্যেত্বর অনন্য তুমি শুধু পটে লিখা ।
শ্রেয়সী হাজরা বছর ২৪ শের যুবতী ।বস্তির বাচ্চাদের সেই সঙ্গতি নেই যে একটা রথের আয়োজন করে ।তাহলে মুস্কিল আসান তবে কে? এই শ্রেয়সী ।শুধুই কি রথের দড়ি টানা ? তিনি সেখানে বসিয়ে দিলেন লাল নীল সবুজের মেলা বসেছের হাট।এলাকার দুস্থ কচিকাঁচাদের পেট ভরে খাওয়ালেন লুচি,তরকারি, ডাল, বোঁদে সঙ্গে আইসক্রিম থেকে চকলেটও উপহার দেওয়া ।তবে সেই ভোজ থেকে বাদ যাননি স্থানীয় দরিদ্র আবালবৃদ্ধবনিতাও। সবাইকে তৃপ্তি করে খাইয়েছেন তিনি ।এরপর মহানন্দে শুধুই রথের দড়ি টানা ।
আরে এটাও তো কত জায়গায় না হয় ? এসব নিয়ে এত দারুণ দারুণ বলার কি আছে তাই না ?
ঠিক কথা। কিন্তু বাচ্চা আর স্থানীয় দুস্থ বাসিন্দাদের আহারের আনন্দ দিয়েই কি তিনি থেমে গেলেন ? মোটেই না ।
গণদেবতার অন্ন সংস্থানে যখন তিনি ব্যস্ত, একটু কাছে যে তখন জড়ো হয়েছে একরাশ কুকুর ছাগল গরুরদল । অনেকটা লোলুপ চোখেই তারাও তাকিয়ে আছে খাবারের পাতার দিকে ।
যেই লক্ষ্য করা অমনি না মানুষ পশুবন্ধুদের জন্যও শুরু হল ঢালাও ভোজন পর্ব ।প্রতিটি প্রাণীর জন্য পৃথক ভোজনের ব্যবস্থা করা হল সঙ্গে সঙ্গে ।
এসব যে বছরের এই একটি দিনকে কেন্দ্র করেই শ্রেয়সী হাজরা করে থাকেন তা নয় কিন্তু ।প্রতিদিনই তাঁর রথের উৎসব।প্রতিনিয়ত । একেবারে নিজের মনের বাসনায় এলাকার ১৩৩ টি দুস্থ বাচ্চাদের তিনি শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করেন সারা বছর ।প্রতিবছর ।তাঁদের নাচ গান কম্প্যুটার শেখান নিজের হাতে ।ইতিমধ্যেই কয়েকজনের সহায়তায় গড়ে তুলেছেন মা ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন ।
এলাকায় কোনোও কুকুর গরু ছাগল অসুস্থ হলেই দৌড় শ্রেয়সীর।
পরম স্নেহেই তাদের সুস্থ করে তোলার দায়িত্ব যেন শুধুই তাঁরই ।
মেয়ের এমন স্বভাব কিন্তু ছোট থেকেই লক্ষ্য করেছেন ইসিএল কর্মী বিনয় হাজরা ও মণিকাঞ্চন দেবী। তাঁদের মতে ,আমদের এক মেয়ে শ্রেয়সী ।ওঁর একটাই শখ, সমাজের পিছিয়ে পড়া শিশুদের শিক্ষিত করে তোলা ।সঙ্গে পশুদের প্রতি অগত্য মমতা ।তাই ওঁর যাবতীয় শখের খরচ আমরা বহন করি ।তাঁরা বলেন, ' যুব সমাজের কতজনই তো কত ব্যয় করে দেখি।আমাদের মেয়ে না হয় এই কাজই করুক ।এই রথের আয়োজনেও আমরা পরিবার থেকেই সব ব্যয়ভার বহন করেছি।
আমাদেরও একটাই বিশ্বাস, জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর । '
Post A Comment:
0 comments so far,add yours