রণজিৎ গুহ, লেখক ও সমাজকর্মীঃ স্বচ্ছল বনেদি পারিবারিক দুর্গাপূজা বা দুর্গোৎসব শুরু হত রথযাত্রার দিন।প্রতিমার
স্থায়ী কাঠামোয় আনুষ্ঠানিকভাবে কুড়ুল বা দাও ছোঁয়ানো হত।শুরু হয়ে যেত আনন্দ উৎসবের দিনগোনা। এখন বারোয়ারী
দুর্গোৎসবের খুব জাঁকজমক করে প্যাণ্ডেলের খুঁটি পুজো হয়।সংবাদ মাধ্যমে পুজোর কতদিন বাকী জানানো শুরু হয়ে যায়
১০০দিন আগে থেকে। উৎসবের প্রস্তুতি তো কম নয়।
ছোটবেলা থেকেই উৎসব মানে জানি মেলামেশার সুযোগ, হৈচৈ মজা আনন্দ। সৌহার্দ বিনিময়,প্রচুর খাওয়া দাওয়া।আড্ডা
গল্প,। সব উৎসবেরই কিছু আচার বিধি ছিল। সেসব বড়দের জন্য। ঐসব আচার আমরা বকুনির ভয়ে কিছু
মানতাম।অনেক কিছুই মানতাম না। উৎসব নিয়ে বা উৎসবের জাঁকজমক নিয়ে সর্বজনীন উদ্যোগে বড়দের আকচাআকচি
ছিল বটে তবে উদ্ভাবনা ও প্রয়োগ নৈপুণ্যর স্বীকৃতি জানাতেও কারই কার্পণ্য থাকত না।
অতি সম্প্রতি উৎসবের অছিলায় রাজনৈতিক দলগুলির হিংসা হুল্লোরের দাপট, সাম্প্রদায়িক বিভেদের উস্কানি আমাদের
ছোটবেলায় শেখা উৎসবের সংজ্ঞাই যেন জবরদস্তি বদলে দিতে চাইছে। উৎসবের প্রস্তুতির খবর আনন্দের পরিবর্তে
আশংকার বুক দুরদুর ডঙ্কা নিনাদের ভয় জাগাচ্ছে। সব উৎসবেই এক আন্তরিক প্রার্থনা যুক্ত থাকে।সকলের জন্য মঙ্গল
কামনা। এক অভেদ ভাবনা উৎসবের সুর বেঁধে দিত।
আমাদের পরম্পরাগত সামাজিক উৎসবগুলি ক্রমশই রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে পরিণত হচ্ছে।
এমনকি কে কোন
প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের কতটা শুভার্থী তার অশোভন ও বিপদজনক প্রতিযোগিতা জনজীবনে অশুভ প্রভাব ফেলছে।সকলকে
নিয়ে এগিয়ে চলার মানসিক গঠনটাই নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে।
অনেকে আবার এই উৎসবগুলি যেহেতু প্রাচীন বিশ্বাস বা পুরান কথার ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হয় সেকারণে সমাজে এর ভাল কিছু
দেখতে পান না। সমাজে এগুলির চলনই বন্ধ করে করে দিতে চান।পরম্পরাগত উৎসবগুলিতে যোগ না দিয়ে আত্মগরিমায়
ভোগেন। এমত অবস্থান উৎসবের সাম্প্রদায়িক উপাচারের যে বাড় বাড়ন্ত তার সামান্য ইতর বিশেষও ঘটেনা।বরং
উৎসবগুলিতে যারা কেবলই ধর্মীয় বদগন্ধ খুঁজে পান তারাই সমাজ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।
সর্বক্ষেত্রেই সমালোচনা বা নিন্দা মন্দ করার আগে সমাজগ্রাহ্য বিকল্প আয়োজনের স্পষ্ট ব্যবস্থা করা দরকার। যে আয়োজনে
সর্বস্তরের মানুষজন আনন্দে অংশ গ্রহন করবে। সর্বজনীন উৎসব মানে সর্ব জনের উৎসব।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours