Politics
সুবীর পাল, এডিটর, দ্য অফনিউজঃ মনে পড়ে মহামহিম মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতি মমতা বন্দ্যোপাধায়ায় ২০১১ সালের কথা। প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হয়েই হঠাৎ ঢুকে পড়েছিলেন মহানগরের এক সরকারি হাসপাতালে। এক চিকিৎসককে আপনি সাসপেন্ড করেছিলেন নিজের হাতে। তাঁর অপরাধ কি যেন ছিল? উনি স্রেফ বাম মতাদর্শের ছিলেন তাই না? আর বোধ হয় একটু তর্ক করেছিলেন? সেদিন আপনি ছিলেন বাংলার পরিবর্তনকামী মানুষের হৃদয়ের উজ্জ্বল হীরে। দেখতে দেখতে কেটে গেছে আটটা বছর। আজ এই বঙ্গের বেশির ভাগ মানুষ সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনে আপনাকে বর্জন করেছে। তবু গণতান্ত্রিক নিয়মে আপনি আজও মুখ্যমন্ত্রী। সোস্যাল সাইটে একাংশ বঙ্গবাসী সন্দেহ প্রকাশ করেন এই ভেবে যে আপনি বর্তমানে মানসিক অবসাদগ্রস্থ নয়তো? আসলে আপনার মুখের কিছু কদর্য ভাষা ও ধমকানো বা চমকানো আর সহ্য করতে পারছেন না এই রাজ্যের একটা বৃহত্তর অংশের মানুষ। ফেসবুক তো তাই বলে ঠিক না? এই তো বাচ্চা কিছু ছেলে। যাঁরা জুনিয়র ডাক্তার নিজেদের বলছে। আপমর জনগনও তাই বলছে। কিন্তু আপনি বলছেন তারা নাকি বহিরাগত। আচ্ছা বহিরাগত মানেটা কি? তাঁরা কি পাকিস্থানী জঙ্গি? তাঁরা কি সিরিয়ার উগ্রবাদী? নাকি তাঁরা দেশের নাগরিক নন? কোনটা ম্যাডাম। তবে তো আপনার কথায় বিশ্বের আনাচে কানাচের সমস্ত বাঙালিকে এই বাংলায় ফিরে আসতে আপনারই বলা উচিৎ।
কারণ বাংলার বাইরে তবে বাঙালিরাও সেখানে বহিরাগত? দায়িত্ব সহকারে প্রবাসী বাঙালিদের কি বাংলায় ফেরত আনা নিয়েও কি আপনার কোনও পরিকল্পনায় র‍য়েছে নাকি? ভবিতব্য আর আপনিই জানেন। আসলে আপনার তুলনা নাকি আপনি নিজেই। তাই কেউ কেউ আপনাকে আজকাল বলছেন, আপনি নাকি বাংলার যুগশ্রেষ্ঠ মনীষি। কি ঠিক, কোনটা ঠিক, কে ঠিক তা সময়ই বলবে। তবে ম্যাডাম প্রায় শ’দুয়েক দুধেল গরু আচ্ছা করে পিটিয়েছে সিপিএম বিজেপির তৈলসিক্ত বাচ্চা ডাক্তারদের। আসলে আপনিই বলেছেন ওঁরা নাকি ওই দুই দলের পেটোয়া। তা বেশ করেছে আপনার পছন্দের গরুতে লাথি মেরেছে তাঁদের। কাজে যোগ দেওয়া নিয়ে আপনি হুমকিও দিলেন অবাধ্য ছেলে ছোকড়াদের। কিন্তু কি সাহস বলুন ওঁরা শেষে কিনা বুড়ো আঙুল দেখালো আপনাকে। আপনার হুমকির ধার ও ভার কমে গেল নাকি? কি বলবেন বলুন তো? আসলে আটটা প্রশাসনিক বছর কেটে গেছে। এই তো সেদিন। আপনি বললেন ষষ্ঠ বেতন কমিশনের মেয়াদ বাড়ানো হল আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত কমিশনের অনুরোধে। ব্যাস ফোঁস করে উঠলেন বেতন কমিশনের সভাপতি অভিরূপ সরকার। তিনি একটি মিডিয়াতে বলে বসলেন, কমিশন মেয়াদ বৃদ্ধির কোনও অনুরোধ রাজ্য সরকারের কাছে করেনি। দিল তো হাটে হাঁড়িটা ভেঙ্গে। হয় আপনি নয়তো অভিরূপবাবু কেউ তো একজন অসত্য বলছেন তাই না? আর নয় তো যত দোষ নন্দ ঘোষ মিডিয়া রঙ চড়িয়ে হলুদ সাংবাদিকতা করছে তাই না, ম্যাডাম? আর আপনিও দেখলেন এই মোকা, চিকিৎসক আন্দোলনের ডামাডোল বাজারে বেতন কমিশনের মতো স্পর্শকাতর ইস্যুটাকে এক্কেবারে সামনে নিয়ে এলেন। কি বুদ্ধি মাইরি আপনার। কে বলে আপনি মানসিক অবসাদে ভুগছেন। আসলে যাঁরা বলছেন তাঁরা পাগল। এক দিকে একটা মিথ্যে ঢাকতে ও অন্যদিকে জুনিয়রদের দেশ ব্যাপী আন্দোলনের ফোকাস অন্যভাবে ঘুরিয়ে দিতে বেতন কমিশনের তুরুপের তাসটা কিন্তু দারুন খেলেছেন। ঘোষণা করলেন বেতন কমিশন শীঘ্রই কার্যকর হতে চলেছে। ভাবলেন খুশিতে ডগমগ হয়ে রাজ্যের কর্মচারীরা ঘেউ ঘেউ বন্ধ করে আপনার নামে মিউ মিউ করবে। কিন্তু কোথায় কি? রাজ্যের কর্মীরা কোথায় আপনার নামে জয়ধ্বনি দেবেন তা নয়। উলটে এখনও পর্যন্ত রাজ্য সরকারের শ’খানেক ডাক্তার আপনার মুখের ওপর পদত্যাগ পত্র ছুঁড়ে দিলেন! কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধনও কিনা আপনাকে জ্ঞান দিচ্ছেন, হুমকি ছেড়ে সহানুভুতির সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের সমস্যা মেটান। আসলে উনি জানেন না আপনি কত ভয়ঙ্কর। আপনি যে আহত বাঘের চেয়েও সাংঘাতিক তা কিন্তু এই বহিরাগতরা বোধ হয় বুঝতে পারছেন না। আপনার এক মিনিট লাগবে না যদি আপনার দলের ছেলেদের বলেন ব্যাপারটা একটু দেখ তো। কিন্তু আপনি কি ধৈর্য্যটাই না দেখাচ্ছেন বলুন। লে বাব্বা। এ যে আরেক উল্টোপুরাণ। ওই যে আপনার জোড়া ঘাসফুল বাগানেও যে নানা বিভীষনবৃন্দ কেমন কেমন বেসুরো কথা বলতে শুরু করেছে। আপনারই ভাইপো আবেশ বন্দ্যোপাধায়, কলকাতার মেয়র ববি হাকিমের মেয়ে সাব্বা হাকিম, সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারের ছেলে বৈদ্যনাথ ঘোষ দস্তিদার, সাংসদ শান্তনু সেনের স্ত্রী কাকলি সেন শেষ মেষ ওই বহিরাগতদের হাতে হাত মিলিয়েছেন। কি বেইমানি বলুন তো? এরা না আপনারই ঘরের ছেলে মেয়ে। ছ্যা ছ্যা। এতো দুধ দিয়ে কাল সাপ পোষার মতো হল দেখছি। দিদি এইখানেই নিমকের নিন্দার তালিকা সমাপ্ত নয়। আরও অবাক ব্যাপার, এই আপনার হাতের তালুর মধ্যে থাকা আপনারই সানাইয়ের পোঁ কিছু বুদ্ধিজীবী ও কিন্তু ঠিক করল না এবার। অপর্না সেন, কৌশিক সেন, বোলান গঙ্গোপাধ্যায়, দেব, ঋদ্ধি সেন, রাজ চক্রবর্তীও কিনা আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়ালো। এসব কি হচ্ছে? এনারাই না একদিন পরিবর্তন চেয়ে এই মহা মহিম মনীষির পাশে ছিলেন? আজ কেন দুই পা দুই নৌকায় রেখেছেন? সুযোগ বুঝে বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত আবার জানালেন নেত্রীকে খোঁচা মেরে, মুখ্যমন্ত্রীর বদলে আমি যদি ক্ষমা চাই সমস্যা নিরসনের জন্য তবে তা করতে আমি প্রস্তুত। আসলে হাতি গর্তে পরলে টিকটিকিতেও কি যেন মারে অনেকেই বলে থাকেন। আর পার্থ চট্টোপাধ্যায় শিল্পমন্ত্রী হিসেবে কি ভেবেছেন নিজেকে। এই গতকালও রাজভবণ থেকে সাংবাদিককুলের নাগাল এরিয়ে যিনি পালালেন, সেই তিনি কিনা আপনার ছকে দেওয়া লাইনের বাইরে গিয়ে আন্দোলনকারীদের প্রতি সহনশীল হয়েছেন ফেসবুকে। আবেগ আর হৃদয়ের কথা বলছেন এই অবাধ্য সিপিএম বিজেপির মদতপুষ্ট বহিরাগতদের। আপনার সুরে সুর মিলিয়ে এতদিন যাঁরা ‘মিলে সুর মেরে তুমহারা’ গাইতেন আজ কেন তারা হঠাৎ আওড়াচ্ছেন ‘অরুন প্রাতের তরুন দল, চল চল চল...’ দিদিমনির অন্তিম আশাতেও জল ঢেলে দিল কলকাতা হাইকোর্ট এই চল চল চল স্লোগান। এই জনস্বার্থ মামলায় প্রশাসন আশাবাদী ছিল এই আন্দোলনকে জনবিরোধী অ্যাখা দেবে আদালত। উল্টে ডিভিশন বেঞ্চ সাফ জানিয়ে দিল এই সমস্যার সমাধান রাজ্য সরকারকেই করতে হবে। ইসসসস যদি এই আন্দোলনকে একটিবার আদালত বেআইনি বলতো তবে পুলিশের লটঠম ঔষোধম কাকে বলে এতক্ষণে বুঝিয়ে দেওয়া যেত। কিন্তু এযাত্রায় আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রাখাটাও গেল না লাঠি যার মোষ তার তত্ত্বের। কি আর করার? ঠিকই কি আর করার? ম্যাডাম মুখ্যমন্ত্রী এই প্রথম আপনি জনসমক্ষে নিশ্চয় অনুভব করতে পারছেন আপনার চমকানো আর কাজ দিচ্ছে না। আপনি বুঝতে কি পারছেন দলের মধ্যেও আপনার বিরুদ্ধ অবস্থান প্রকাশ্যে এসে গেছে? আপনার কি এখনও মনে হচ্ছে না যে প্রশাসনের নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ আপনার মুঠো থেকে ক্রমেই আলগা হয়ে চলেছে? সোস্যাল মিডিয়ায় আপনাকে আর অনেকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না এটাও কি আপনার নজরে এসেছে? বিরোধী নেত্রী হিসেবে সফল মমতা আর প্রশাসক হিসেবে ব্যর্থ মমতার এই ফারাক লাইনটা কি আপনি উপলব্ধি করতে পারছেন? আসলে আপনার বিনাশের বাস্তিল দুর্গের ভাঙন শুরু হয়ে গিয়েছে। জানি এই দেওয়াল লিখন আপনাকে বা আপনার সমর্থকদের খুশি করতে পারবে না। তবু বলি সংযত হন, বিনয়ী হন। নচেৎ সেই দিন বেশি দেরী নেই যেদিন দেখবেন আপনার সব স্তাবকবৃন্দেরা আপনার থেকে বহু দূরে চলে গিয়েছে। আপনি হয়েও যেতে পারেন বাংলার এক ট্র্যাজিক একাকী পরাজিত নারী। যেমন এখনও পর্যন্ত পরম সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তিশালী বঙ্গ নারী হয়েও একরত্তি ছেলেদের কাছে গোহারা হেরেই গেলেন। ইগো ফাইটে। যে হার বিশ্ববাসী তাড়িয়ে তাড়িয়ে দেখছে কিন্তু। আগামী দিন তো রইলই...


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours