Pakhi
অমর কুমার নায়ক, প্রকৃতিপ্রেমী ও শিক্ষকঃ গ্রামগঞ্জের মাঠেঘাটে এক ধরণের সাদা সারস দেখা যায় যাদের গায়ের রঙ সাদা, লম্বা বাঁকান চঞ্চু এবং পিঠের দিক ধূসর হতে হতে লেজের দিক কালো হয়েছে। এরা শামুকখোল। এদের গাছের উপরে দল বেঁধে থাকা বা মুখে করে পাতা তুলে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য মনোরম। দীর্ঘ চঞ্চুতে থাকা ফাঁক ও এদের প্রধান খাদ্য শামুকের নাম মিলিয়ে এদের এই নাম শামুকখোল। মাঠের মধ্যে খাবারের খোঁজ করা দল দেখে মনে হয় যেন প্যারেড চলছে। ডানা ছড়িয়ে উড়বার দৃশ্যে যেকোনো প্রকৃতি প্রেমিক মুগ্ধ হন সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি দেখে। শামুকখোলের (Asian Openbill Stork) বিজ্ঞানসন্মত নাম Anastomus oscitans এবং এরা Ciconiidae পরিবারের সদস্য। এই সারস সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়াতে পাওয়া যায়। এদের চঞ্চু বাঁকানো ও তার মাঝে একটা ফাঁক থাকে যা এদের শামুক, কাঁকড়া ইত্যাদি শিকার করতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে। অন্যান্য সারসদের মত এরাও বড় ডানা যুক্ত ও অনেক উঁচুতে উড়তে সক্ষম। এরা স্বভাবে সামাজিক। এরা 68cm লম্বা ও 81cm দীর্ঘ হয় যা অবশ্য অন্য সারসদের থেকে ছোটই বলা চলে! এদের অনেক ছোট ছোট কলোনি নিয়ে একটা বড় পরিবার তৈরি করে এরা বসবাস করে যেখানে মাঝে মাঝে অন্যান্য হেরন যেমন পার্পল হেরন, এগ্রেট বা ইবিসেসদেরও দেখতে পাওয়া যায়। উঁচু উঁচু গাছের মাথাতে লতাপাতা ও ঘাস দিয়ে বাসা বানায়। বসবাসের সুবিধা ও খাবারের পর্যাপ্ততার জন্য এরা অনেক দূর দূর পর্যন্ত যাত্রা করে। এরা জলশয় ও মাঠঘাটের আশপাশে বসবাস করে। 
এরা দল বেঁধে বা একা শিকার করে থাকে। প্রধান খাদ্য শামুক, কাঁকড়া, মাছ তবে মাঝে মাঝে ছোট বড় পোকা-মাকড়, জলের ছোট সাপ বা ব্যাঙ দিয়েও কাজ চালিয়ে নেয়। মাঠের মধ্যে এরা ধীরে ধীরে পা ফেলে শিকার ধরে। চঞ্চুর সামনের তীক্ষ্ণ অংশ শামুকের কঠিন খোলকে ভেঙ্গে ফেলে। চঞ্ছুর অগ্রভাগ ও অমসৃণ অংশ শিকারকে ধরতে ও ছিঁড়তে করতে সাহায্য করে, তবে ছোট ছোট শামুক বা কাঁকড়াদের এরা গোটা গিলে ফেলে। এদের প্রজনন কালটিও বেশ মজার বৃষ্টি শুরুর পরপর অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর হল উত্তর ভারতে প্রজননকাল, আবার দক্ষিণ ভারত ও শ্রীলঙ্কাতে নভেম্বর থেকে মার্চ। খরার সময় এরা প্রজনন বন্ধ রাখে! এরা 2-4টি করে ডিম পাড়ে। উভয়েই ডিমের যত্ন নেয় ও 25 দিন সময় লাগে ডিম ফুতে বাচ্চা বের হতে।




Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours