Politics
জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভাঃ কোন জাতিকেই যখন একধরনের মায়াবিকতায় কুজ্ঝটিকায় আটকে দেওয়া হয় এক নিরবিচ্ছিন্ন স্বরযন্ত্রমুলক কার্য্যকলাপে এবং সেই কার্য্যকলাপ ইতিহাসের কোন মূহুর্তে আন্তর্জাতীক ফ্যাসিস্তদের সমর্থন পেয়ে যায় - সে সময়েই সাম্যবাদীদের অগ্নিপরীক্ষা ----, তারা একই নিরবিচ্ছন্নতার সাথে সম্ভাব্য  ফ্যাসিস্ত  অভ্যুত্থানের মোকাবিলায়  ভাবাদর্শ, আন্দোলন এবং সংগঠনগত পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিলো কি না।অন্যথায়,যৎকিঞ্চিত   লক্ষহীনতা শুধু   সাম্যবাদীরকেই নয়, পুরো  ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনকে ঠেলতে , সেই মায়াবিকতার চাপেটে চলে আসবেই। শ্রমিকরার সনাতনি ভাবনার ক্রীড়নক হয়ে যাবে।এই অবস্থায় শ্রমিক এবং সাম্যাদী নেতত্ব  - মানুষকে গলি ধরে হাটার পরামর্শ দিতেই পারেন। কিন্তু রাজপথে উঠে আসার লক্ষটাকে যদি বারবার বোঝানো না হয়, তবে উল্টো পথটাই ভাবজগতের গলা টিপে ধরবেই।  এই সুত্রেই বুঝতে হোতঃ যুক্তফ্রন্টীয় ভাবনাকে, একটি জনগনের গনতান্ত্রিক  ভাবনায় এগিয়ে দিতে, যখন প্রয়োজনীয় ' সাধারনের গনমঞ্চটি' নির্মানের কাজটি উন্মোচিত করার তাত্বিক এবং সাংগঠনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলায় অবহেলা করা হয়, তখন কোন   জাতীয় এবং আন্তর্জাতীক বিপর্যয় --- প্রথমে শ্রমিক শ্রেনীকে এবং ক্রমান্বয়ে পুরো সাম্যবাদী দলটিকেই ঠেলতে ঠেলতে আঞ্চলিকতা এবং কেন্দ্রহীনতার মায়াবিকতার গলি পথে ঠেলতে থাকবেই।  যদি ভালো করে বিবেচনা করা যায়, বাংলার ভূমীসংস্কারকে তার ইতিহাসগত পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় আদর্শগত ও রাজনৈ্তিক সমর্থনকে বিষয়গত স্তরে নামিয়ে আনা, তাকে সমবায়ের বহুমুখীনতায় নিয়ে যাওয়ার ব্যর্থতার সাথে, নব্বই এর দশক থেকে শ্রমিক আন্দোন ক্রমে 'শরীর সর্বস্যতায়' নেমে আসার কারনেই -----  প্রথমে গর্বাচভের পেরোস্ত্রয়িকা এবং সে সুত্রেই  সোভিয়েত সহ ইউরোপের সমাজতন্ত্র ভেংগে পরার  পর ভারতের  বিশ্বায়ন মেনে নেওয়ার হাত ধরে দেশের আর্থসামাজিক পরিস্থিতি যখন ক্রমে বিদেশের হাতে চলে যাওয়ার সাথে সাথে,  দেশের আভ্যন্তরীন সন্তুলন দাসত্বের দিকে হাটতে লাগলো -----  যত নীতি নেওয়া হয়েছিলো, সব কিছুই পারস্পরিক বিরোধীতাতেই শুধু ভড়া  ছিলো তাই নয়, শ্রমিক আন্তর্জাতীকতা কেড়ে  নেওয়ার সাথে সাথে  দলের কেন্দ্রিকতা এবং  ও ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃত্ব থেকে শ্রমিক অভিজ্ঞতা সরিয়ে দেওয়ায়-- দল এবং ট্রেড ইউনিয়ন  ভাবের দিক থেকে শুধু  বিচ্ছিলন্ন হয়ে পড়লো তাই নয়, উভয় প্রান্তের নেতারা প্রয়োজনীয় ইন্দিয়গুলি খুইয়ে বসলো।   আমি হলফ করে বলতে পারি, ১৯৭৯ তে মোরারজী সরকারকে অপসারনের সময়, কি ঘটছিলো সংখ্যালঘুদের উপরে, গুজরাট  দাংগার সময় - ব্যবসা বানিজ্য থেকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়টির গভীরতাটি বোঝার মতো, নেতৃ্ত্ব শ্রমীক শ্রেনীর সেতুবন্ধন যদি শক্ত না হোত, তবে সিদ্ধান্ত নিতে ভূল হতে বাধ্য। বাংলায়, জুলাই সংকটের সেই ভূল থেকেই, সংখ্যালঘুদের নিশ্চিতভাবে বিপরীত যাত্রা যে শুরু হয়েছিলো,  পার্টী কংগ্রেসের সিদ্ধান্তটাই সেই 'মায়াবিকতা'কে হাটাতে পারতো না, যদি না পরিপ্রেক্ষিতটি সর্বস্তরে ভাবাদর্শগতভাবে  স্পষ্ট না করা হোত।   এই সুত্রে ধরেই যদি এগিয়ে যাওয়া যায় দেখা যাবে, ভূমী সংস্কারকে যদি সংহত করা যেতো, তবে, প্রথমে কংগ্রেসের মরিচঝাপী সমেত ১৯৭২ এর প্রত্যাঘাতকে এবং পরে কংগ্রেসের চলে যাওয়া ব্যাটন হাতে শ্রীমতি মমতা - বর্তমানে তৃনমুল-বিজেপির সংঘাতের চরিত্রের মধ্যে ভূমী সংস্কার প্রতিরোধ এবং সংখ্যালঘুদের হাত থেকে জমি-জমা কেড়ে নেওয়ার উপাদান যে কাজ করছে তা স্পষ্ট হোত।  ২০১৯ শের পরে,  সংখ্যালঘুদের উপরে, যে আক্রমন চলছে, তার চরিত্র গত পোস্টিং এ বলেছি। সব মিলিয়ে, যে গৃহযুদ্ধটা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, সে বহুমুখীন চরিত্র নিয়ে, একপ্রান্তে ধর্মীয় সংখ্যা লঘু এবং অন্যপ্রান্তে দলিত ও আদিবাসি বিরুদ্ধে অতীত হয়ে যাওয়া সনাতনি পুজ-রক্ত ঢেলে দেওয়া হচ্ছে।  সেখানে যদি, শ্রমিক শ্রেনীকে যদি 'নিরপেক্ষতায় ঠেলা হয়ে থাকে নিশ্চিত লিখে নিন, কারখানা গেট, স্কুল কলেজের সর্বত্র এটা শুরু হয়ে যাবে।এর থেকে ভারতীয় অবমাননার আর কোন স্থান নেই। 
এসবের সব কিছুই যখন জনচেতনার বাইরে চলে যায়, তখন স্বাভাবিকভাবে বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্র কিংবা সামরিক নীতির অভিমুখগুলি মানুষের চিন্তনের বাইরে চলে যেতে বাধ্য। ২০১৯ সরকারকে যখন অর্থনীতি এবং বেকারী ইত্যাদির দায় থেকে মুক্ত করেছে তখন সামরিক এবং পররাষ্ট্রতে এবং দেনা মেটাতেই তাদের বাজেটের অভিমুখ। সে উদ্যেশ্যেই রিজার্ভ ব্যংক থেকে সব অর্থনীতিবিদদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।  এখানে পররাষ্ট্র নীতিকে  একটা গবেষনামুলক পথ ধরে এগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মানুষের মধ্যে কি বিচিত্র পথে, ভারতীয় উপমহাদেশে চিনের মুখোমুখি আমেরিকান মিলিটারি নিয়ে আসতেই, কাশ্মীরে পাকিস্থানকে সুবিধা করে দেওয়ার একটা নীতি নিয়ে চলা হচ্ছে।  কাজেই, সাম্যবাদী দলগুলি এবং শ্রমিক আন্দোলনকে একপ্রান্তে অন্যদিকে সাধারন মেহনতি এবং জ্ঞানগুনী মানুষরা যাতে বৌদ্ধিক ভাবে দেশকে বর্তমান মায়াবিকতা (illusory compulsion) থেকে ফিরিয়ে আনার সংগ্রামে যোগদান করতে পারেন, তার ব্যবস্থা করে দিতেই হবে। (চলবে)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours