জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভাঃ অন্যভাবে বলা যায়, এক ধরনের ই্যলুস্যরি কম্পালসান । বর্তমানটাই যার  এক ঘোর  অজ্ঞেয়তায় ঢাকা,  তাকে  নিজেকেই যখন   নিজের ভবিষ্যতের উপরে সিলমোহর লাগানোতে প্রবঞ্চিত হতে হয়,  কিংবা তার নামে অন্য কেউ   সেই মোহরটা লাগিয়ে দেওয়ার রীতিই  রাষ্ট্রীয় ভাবে প্রাতিষ্ঠানিক করে নেওয়া হয়েছে  ---- তখন সেটাকে যখন বিস্বের প্রথম কিংবা জনগনের দ্বার জনগনের শাসন হিসেবে তিনি নিজের মধ্যে গর্ব বোধ করেন, সেটাকে আত্মপ্রবঞ্চনার বাইরে অন্য কী বলা যেতে পারে? এদেশের গনতন্ত্রে প্রবঞ্চনার সিংহভাগ যদি সনাতনি ব্যভিচারিদের হাত ধরে এসে থাকে, বিরোধীতার মুলমঞ্চটি নিজেই সেই প্রবঞ্চনার শিকার হওয়ার কারনে ---    সেই প্রবঞ্চনাও নিচে নেমে এসেছে। সব মিলিয়ে আজ মানুষ দিশেহারা। মানুষের ভোট (নিজে কিংবা অপরের দ্বারা হোক) লোক সভায় ভোট যদি সনাতনি ব্যাভিচারিতার পক্ষে গিয়ে থাকে, তবে কয়েক সপ্তাহের  মধ্যে অনুষ্ঠিত কয়েকটি রাজ্যের  পঞ্চায়েত নির্বাচনে, সনাতনিদের ভরাডুবি হয়েছে।  দোলাচল কিংবা আত্মসংযম হারানো অথবা রজ্জু-ভেবে সর্পধরার পরিস্থিতি যে কি ভয়ংকর, এ থেকেই বোঝা যায়। সেকালের সাম্যবাদীদের একটা বিশেষ তত্ব পড়তে হোত। সেটিকে ' ই্যলুশান এবং রিয়েলিটি' বলে জেনেছিলাম। --------   সে সুত্রেই শিখেছিলাম, এই বিশ্ব যেমন আছে তেমনভাবে আমরা কেউ  দেখি না। সেখান থেকেই, সেই জনকথার অর্থ বুঝেছিলাম World is illusory.   বুঝেছিলাম  বিভ্রান্তি বা ই্যলিউসান আসে তিন দিক থেকে। প্রথমতঃ যা আছে তার অস্তিত্বের কারন এবং নিয়ম জানলেও, কি আছে এবং কিভাবে আছে সে সম্পর্কে ধারনা না থাকলেও, আমরা মতামত দিয়ে থাকি। ------  দ্বিতিয়তঃ দর্শনের নিয়মে, বৈজ্ঞানিক ভাবে 'মনের' অধিকাংশ দিক এখনো অনাবিস্কৃত থাকলেও, প্রকৃ্তি বিজ্ঞানর অন্য মূল তিন গতির (পদার্থ , রশায়ন এবং শরীরবিদ্যা) সব কিছুই আবিস্কৃত হলেও, যত সময় সেগুলি জনশিক্ষায় না আসছে, মানুষের চেতনার অভিমুখ কিন্তু সেই "সূর্য্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোড়ে'  জাতীয় ধারনাই -  প্রকৃ্তি এবং মনুষ্যজগত সংক্রান্ত ধারনা গুলিকে  নিয়ন্ত্রিত করতে থাকবে। তৃতীয়তঃ  এখনে অস্তিত্ব সেটাই, যেগুলি আমরা দেখতে চাই  এবং যেমনভাবে দেখতে চাই ঃ যে রকম সেগুলি বিদ্যমান সে রকম নয় । -----------তৃতীয়তঃ যেগুলি দেখি,  সেগুলির অধিকাংশ যেহেতু ক্লিনিক্যালই কিংবা যুক্তি তর্কে বিচার করে দেখি না - যাকে আমরা অনুমান ধর্মীতা হেসেবে জেনেছি - সেজন্য উলটো দেখি।  অনুমান ধর্মীতা যদি অনুমানেই থাকতো সভ্যতার তাতে বিশেষ আসা-যাওয়ার ছিলো না। রেনেশা ও ফরাসী বিপ্লব এবং শেষ পর্য্যন্ত বিশ্বে সাম্যবাদি বিপ্লব শুরু হওয়ার পর থেকে আধুনিকতার গতি যথেষ্ট - এই শক্তি, সনাতনি ভাবনাকে উড়িয়ে নিয়ে চলার শক্তি ধরে। -----  ভারত ও চিনে দ্বিতীয় যুদ্ধ চলাকালীন,   মুক্তিকামী মানুষের মধ্যে যে সব দোলাচল নির্মান  করা হয়েছিলোঃ  সেখানে, ভারত ও  চিনের  ক্ষেত্রে যদি নিশ্চিতভাবে হিটলার সাহী  অতি-অতীতের 'সনাতনি ব্যভিচারিতাকে' উস্কে দিয়ে থাকে,দ্বিতীয় বিশ্বযুধের  পরে যে কয়টি রক্তক্ষয়ী বিপ্লব হয়েছে, সর্বত্র আমেরিকার মিলিটারীতন্ত্র শুধু  যে  সব রংগের  সনাতনি ব্যভিচারিতাকে উস্কে দিয়েছে তা, নয় সবর্ত্র এসব আবর্জনা এবং পুঁজরক্তকে সচল করেছে প্রানপন শক্তি দিয়ে । তাই চিন ও ভিয়েতনামে এতো রক্তপাত। সাম্প্রতিক কালের খবর, সাবেক সমাজতান্ত্রিক দেশ, এসিয়া আফ্রিকা, আরবের সব দেশে এবং বর্তমানে  সিরিয়া ও পেলেস্টাইনে যে দানবিক আক্রমন চলছে, সর্বত্র, অতীতের এসব নির্বোধ কিংবা হিংস্র শক্তিগুলিকে চাগিয়ে দিইয়ে করা হয়েছে।ইদানিং খবর এসেছে, সম্প্রতি যারা সিংহলে যে বিপর্য্যয়কারী ধর্মীয় ধ্বংসলীলা চালিয়েছিলো, তারাও আমেরিকা মিলিটারী নিয়ন্ত্রিত এক প্রাইভেট বাহিনী করেছে। এটা সর্বজনবিদিত। ----- আমায় যদি কেউ প্রশ্ন করেন, আমি বলবো, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোর কালে আমেরিকা মিলিটারীতন্ত্রের সব থেকে বড় বিজয় হয়েছে, ভারত দখল এবং  বিজয়ীকে এক প্রান্তে  ভারতীয় উপমহাদেশের নিয়ন্ত্রনে বসিয়ে দিয়ে - জল এবং স্থল ও জলপথে আমেরিকান বাহিনীকে চিনের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া। আরো বড় জয়, ভারত সহ উপমহাদেশে, সাম্যবাদী এবং ট্রেড ইউনিয়নগুলিকে, তার শ্রেনী নীতি থেকে সরিয়ে আনাতেও মায়াবিক শক্তির (illusion) নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসা।  এমন ধারনা রয়েছে,দেশে যে  তামসিক শক্তির  সমাবেশ ঘটেছে, তাতে শ্রেফ অতীতের সনাতনি অনুমান ধর্মীতা কিংবা ভাব জগতে আধুনিকতা বিরোধী ব্যভিচারীতাই প্রধান ভূমিকা নিয়েছিলো। -- আসলে এরা  সনাতনিদের চাগাতে, একটা অর্থনৈতিক 'সুবিধার' বিষয়কেও সামনে আনতে পেরেছিলো। জীবন রায় আজ  স্বিকার করবে,  ১৯৭০ সাল থেকেই সরকারী চাকরীতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অনুপাত ক্রমাগত কমেছে, সেটা ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন জনসমক্ষে আনা তো দুরের  কথা চিন্তন প্রকৃয়ি্তেও নিয়ে আসে নাই। হয়তো এখনেও মায়াবিকতার তত্ব কাজ করেছে। অনুরুপভাবে, যদি গুজরাট দাংগার পরিনামের দিকে তাকানো যায়, দেখাযাবে , তলে তলে একটা লক্ষ নিদৃষ্ট করে দেওয়া হয়েছিলো  ব্যবসা বানিজ্যে,ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উৎখাত যদি নাও হয়, কোনঠাসা করে দেওয়া। ----  নির্বাচনের পর সংখ্যালঘুদের বিভিন্ন রাজ্যে নিরবিচ্ছিন্নভাবে হত্যার খবর বেরুচ্ছে, সংবাদ পত্রে এবং তার সাথে অভারতীয়তার নামে অন্যদেশে পাঠিয়ে দেবার খবর। এসব খবরের পেছনেও যে একটা অন্য খবর রয়েছে সেটা বেমালুম চেপে যাওয়া হচ্ছে।
দক্ষীন কিংবা পূর্ব ভারতে এখনো শুরু করতে না পারলেও, উত্তর ভারতে 'জয় শ্রীরাম'কে , ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের  ব্যবসা বানিজ্য বন্ধ করা হচ্ছে বিপুল ভাবে। অন্যপ্রান্তে অন্য একটি শ্লোগান তলে তলে চালান করে দিইয়ে, অর্থনৈ্তিক ইন্সেনটিভের এলাকা বাড়ীয়ে দেওয়া হয়েছে। সেটা হোল রিজারভেশন  তুলে দেওয়ার দাবীতে উচ্চবর্ণকে যেমন এক করা হচ্ছে, অন্যপ্রান্তে আদিবাসীদের তাদের আদিবাস এবং রোজগার থেকেই তুলে দেওয়া হচ্ছে।  ---- ,মেয়েদের বিষয়!  ইতিমধ্যেই জাতিসংঘ থেকে  সব থেকে বিপদজনক দেশ বলে ঘোষিত হয়েছে। এই কলমে অনেকবার বলেছি, ক্রমবর্ধমান শ্রমের যোগানদারী বেড়ে যাওয়ায়, নারীত্ব বিনাসের অধিকারটা প্রাতিষ্ঠানিক হোল বটে। এটা আসলে 'সব নারীর' উপরে রাষ্ট্রীয় অধিকারের নামান্তর।  এসব কিছুকে ছোট করে দেখা যেতে পারতো কিংবা চলতেও দেওয়া যেতে পারতো, যদি ইতিমধ্যে, প্রতিরোধের জন্য বুনিয়াদীভাবে যে শ্রেনী সেই শ্রেম্নীর অবস্থান এবং তার রাজনৈতিক দল নিজেই 'মায়াবিবকতায় তার শ্রেণী নীতিকে এগিয়ে দেওয়ার প্রশ্নে বিবষ না হয়ে পড়তো। (চলবে)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours