রণজিৎ গুহ , লেখক ও সমাজকর্মী, দুর্গাপুরঃ
নিজেকে ভালমতো যাচাই না করেই আমরা কমবেশি প্রত্যাশা, আকাংখা, দাবী ইত্যাদির ফেরে এক অহং এর ফাঁদে পা দিয়ে ফেলি।নিজের গুরুত্ব বাড়াতে আরও বেশী জড়িয়ে যাই সেই পাওয়া না পাওয়ার দুর্ঘটে।আমি খুব ভাগ্যবান। কিভাবে যেন বেশ কম বয়সেই টের পেয়ে গেছিলাম যে আমার দ্বারা কিছু হবেনা। মানে আমি কিছু হয়ে উঠব না। এই উপলব্ধি এযাবৎ আমার খুব কাজে লেগেছে।খুবই উপকার পেয়েছি। যখন যেমন সুযোগ হয়েছে বা ইচ্ছে হয়েছে বহু গুণীজনের সঙ্গ করেছি। দক্ষ কুশলী পণ্ডিত গবেষক অর্থনীতিক সমাজ সমীক্ষক। সকলেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে মান্য ও শ্রদ্ধেয়। এই সব প্রাজ্ঞজনের সাথেতো প্রশ্নই নেই এমনিতে নানা কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছি প্রচুর কিন্তু প্রতিযোগিতায় নামিনি।আমিতো কিছু হতে চাইনি।প্রত্যাশা করিনি কিছু। একারণে জিতিনি কোথায়ও।তেমনি হারিওনি। সঙ্গীরা ঈর্ষাও করেন নি। উচ্ছ্বাসও দেখান নি।পাওয়া না পাওয়ার হিসেব নিকেশে ব্যাস্ত থাকতে হয়নি আমাকে। না-পাওয়ার আক্ষেপে ম্রিয়মান হতমানও হইনি। ঐ কৈশোরের উপলব্ধির জোরেই আনন্দে কেটে গেল এতটা কাল।
এখন পিছন ফিরে দেখি আমার ঐ উপলব্ধি অন্তত তিনবার সাময়িক টাল খেয়েছিল
ঘটনা চক্রে কয়েকবছর রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে খানিকটা সক্রিয় হয়ে পরেছিলাম। সন্দেহ অবিশ্বাস আবহে আনুগত্যই সেখানে টিকে থাকার শর্ত।তবু কেন জানি না এক অহং আমাকে প্ররোচিত করেছিল। ভেবেছিলাম চিন্তা ভাবনার ক্ষেত্রে আমার দেওয়ার মত কিছু যোগ্যতা আছে। সরে আসার সময় নিজেকে প্রতারিত মনে হয়েছিল। ঐ উপলব্ধির জোরে এবং খানিকটা তৎপর অনুশীলনে সে অহং কাটিয়ে উঠেছি।রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে কৌতুহল আছে কিন্তু মাতব্বর হওয়ার আকাংখা নেই।
কবিদের সঙ্গ সদাই আনন্দময়।কবিরা মুখে যাই বলুন আগ্রহী পাঠক পেলে তারা খুবই আহ্লাদিত হন।সেকারণে আমার খাতিরদারি অল্পবিস্তর মন্দ জুটছিল না। তা ঐ তিকরমবাজ এক অহং সঙ্গ দোষে কবি হওয়ার প্ররোচনা দিল। আমার জাতও গেল পেটও ভরলো না। কবিও হলাম না পাঠকও থাকলাম না। তবে আমার সেই উপলব্ধিই আমাকে আবার কিছু না হওয়ার আনন্দ যজ্ঞে ফিরিয়ে এনেছে।কবিতা পাঠে আজও অবিরত আগ্রহী। কিন্তু পাঠকের অহংকারী উচ্চারণ থেকে সন্তর্পণে দূরে থাকি।
আকস্মিক ভাবেই এক সময়ে কয়েকজন পণ্ডিত অধ্যাপকদের নিয়মিত আড্ডায় শ্রোতা হিসাবে থাকার অনুমতি পাই। কথায় কথায় জানতে পারি আমার দুতিন জনা প্রিয় বান্ধব এই গুণী মানুষজনার খুবই প্রিয়।একেবারেই কাছের লোক। এক অভিমানে আমি নিজেকে লুকিয়ে নিই।নাম ঠিকানা গোপন করি।যাতে বন্ধুরা জানতে না পারে আমার এখানে আসা যাওয়া। কিছু হতে চাইনি তবুও এক হীনমন্যতা আমাকে গ্রাস করেছিল সে সময়। চুকে বুকে গেছে অনেককাল। সেই গুণীজনরা সকলেই প্রয়াত। সেই বন্ধুরা আজও অতি প্রিয় বন্ধু।নিত্য যোগাযোগ।
আমার সেই কৈশোর উপলব্ধি আজও আমাকে অপার আনন্দে রাখে। সাহস যোগায়। ঐ উপলব্ধির জোরেই কারো অনুগত হইনি।কারো আনুগত্য দাবী করিনি। কিছু হতে চাইনি বলে কিছু না হতে পারার বেদনায় বিদ্ধ হইনি। সঙ্গ উপভোগ করি অনাবিল আনন্দে। ঈর্ষা এবং কর্কশতা থেকে অনেকটা দূরে থাকতে পেরেছি কিছু হতে চাইনি বলেই।
একটা কবিতা মনে পড়ে গেল। অনেকটা প্রাসঙ্গিক এই আত্মোচারণ এর সাথে।
ঠিক কতটুকু পেলে
নিজেকে আর এলেবেলে মনে হয় না
একবার মেপে নিতে পারলেই
শ্বাস স্বাভাবিক ছন্দ ফিরে পায়।
একবার আনত হলে
প্রয়োজনের সংজ্ঞা বদলে যায়।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours