Politics
বিজন কুমার সরকার, সিনিওর জার্নালিস্ট, নয়াদিল্লিঃ সাবধান বিজেপি সাবধান! বাংলার মানুষ একদা পরিবর্তন চেয়েছিলেন। ফের এক বৃহৎ অংশের বঙ্গবাসী ফেলে আসা পরিবর্তনের নব্য পরিবর্তন চাইতে শুরু করেছেন। ভারতীয় জনতা পার্টির কাঁধে ভর করে। আর এখানেই আশঙ্কা। আপনারাও না আবার এই মুদ্রার এপিঠ থেকে ওপিঠে পালটে যান। বঙ্গ রাজনীতির জেন ওয়াইয়ের লেটেস্ট ট্রেন্ডে দল বদলুর হালফিল দোলনায় দোলদোল গুলো কেমন কেমন যেন সন্দেহ হয় হয়। আসলে এই বাঙালী তো আবার সেদিনের পরিবর্তনের ঠেলায় পড়া সিঁদুরে পোড়া গরু হয়েছে কিনা! বিজেপি তো ইতিমধ্যেই স্লোগান তুলেছে ‘একুশে ফিনিশ।’ বং ভাজপা নেতাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ যেন হঠাৎ পালটে গেছে রাতারাতি সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনের পর। তাঁরা তো এখনই গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল ডলতে শুরু করে দিয়েছেন যেন ২০২১ সালের রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনের পর রাজভবন থেকে সরকার গঠণের আমন্ত্রন পেয়েই গেছেন, এই ভেবে। আবার বলি বিজেপি বাবুবিবিরা, সাবধান। দেখবেন তোলাবাজ ও কাট মানি খেকোর জার্সি বদলকারী লুঠেরা সম্প্রদায় আবার সবুজ জার্সি বলদ করে গেরুয়া নামাবলী না গায়ে চড়ায়। আসলে এই লুঠেরা শ্রেণিসমাজ বাম আমলেও ছিল চোরাগোপ্তা মারিতং জগতের মধ্যে সীমাবদ্ধ লাল ছত্রছায়ায়। তারাই আবার নীল সাদা ভেকধারীর মন্ত্রে দিক্ষিত হয়ে নব্য তৃণমূলী হয়েছিলেন। তারপর তো সেই ঝোপ বুঝে কোপ মারা গোষ্ঠী বাংলায় সমাজবিরোধীতার উদারীকরণে যথার্থ ব্র্যান্ড নেম হয়ে গেলেন নিজ নিজ এলাকায়। উফফফ, এ যেন গোটা রাজ্য জুড়ে সিন্ডিকেটের মহামারি। আর সেই এলাকা ভিত্তিক সিন্ডেকেটের দরজায় শোভা পাচ্ছে সেই সব দলের সম্পদ তথা ওই ব্র্যান্ডেড নাম গুলো। এরাই এখন তৃণমূলের সম্পদ। দলের মনি মানিক্য। সুতরাং এই বেতাজ বাদশার যৎসামান্য একটু তো বায়না থাকবেই। তোলাবাজি থেকে কাট মানির আবদার আর কি। নরেন্দ্র মোদী বলেছেন এই বায়নার নাম হল ‘ট্রিপিল টি’। অর্থাৎ ‘তৃণমূলী তোলাবাজি ট্যাক্স’। তা বাবা, এই বেতাজ বাদশাদের এলাকায় সাধারণ হকার, ছোট বড় ব্যবসায়ী, বাড়ি নির্মাণকারীরা করে কম্মে খাবেন আর দলের সম্পদদের এই একটু আধটু খাজনা (কাট মানি ও তোলা) দেবেন না, তা কি মানা যায় নাকি?
সমাজবিরোধীতার উদারীকরণে এই মান্যতা কিন্তু ইতিমধ্যেই মেনেও নিয়েছেন অনেকে। কিন্তু কি যে হল, এই লোকসভা ভোটটাই কেমন যেন হিসেব নিকেশ উলোট পালোট করে দিল অবুঝ বঙ্গবাসী। তাঁরা আসলে চপ শিল্পের উন্নয়নের মাহাত্ম্যে সায় না দিয়ে বড্ড দুর্বোধ্য হয়ে গেলেন। তাই ফুটো নৌকায় নাবিকের হালে নিয়ন্ত্রণও যে ক্রমহ্রাসমান দর্শণীয়। ব্যাস, এলাকায় কায়েমবাজি বজায় রাখতে নিশ্চিন্তের ঘুম শয্যা থেকে উঠে সেই সব সম্পদের দল এখন ব্যস্ত শিবির বদলের। আসলে নিজে বাঁচলে বাপের নাম। আর এখানেই আতঙ্ক বিজেপির খোলা ময়দানে। দলবদলের প্রবল স্রোতে বেনো জল না ঢুকে যায় এই সম্পদের দাপটে। আবার বলি সাবধান বিজেপি, সাবধান সঙ্ঘ পরিবার। আপনাদের তো কত শাখা সংগঠন। কি সব নাম শুনি। বজরং দল, বিজেপি, আরএসএস, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। রাজ্য শাসনের স্বপ্ন দেখতেই পারেন। গণতন্ত্রে এটা অবশ্যই সবার মতো আপানাদের জন্যও দস্তুর। কিন্তু মনে রাখবেন এই রাজ্যের নাম পশ্চিমবঙ্গ। একটি পরিবর্তন ইতিমধ্যেই দেখিয়ে দিয়েছে কি ভাবেই না আয়ারাম গয়ারাম সম্পদ এই রাজ্যের যে যার নিজস্ব এলাকায় শাহেনশা হয়ে থাকতে পারেন শাসকের পরম স্নেহাশীষে। এখনও সময় আছে। ২০২১ এর নির্বাচন কাল যত এগোবে ততই আপনাদের দাম্ভিক ব্যস্ততা বৃদ্ধি পাবেই। তাই এখনই আপানাদের বিভিন্ন শাখা সংগঠন থেকে ছাকনির আয়োজন করুন। চালু করুন স্ক্রীনিং কমিটি। কারণ পশ্চিমবঙ্গে ডন কালচার থেকে অপরাধীদের মুক্তাঞ্চল যে বাস্তবিক অর্থেই প্রবল সক্রিয় তা নির্বাচনের রক্তপাতের পরিসংখ্যানই জানান দেয়। তাই ফিল্টারাইজেশনের লিটমশ পেপারের অভাব ঘটলে কাট মানি থেকে তোলাবাজির ঋতুস্রাবের ছোপ গেরুয়া পতাকায় লাগতে বাধ্য। বিজেপির জাতীয় নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় সংঘস্তরের নেতাদের এখনই অনুধাবন করতে হবে যে এই রাজ্যের রাজনৈতিক ব্যবস্থা থেকে অপরাধী উপাদানগুলির স্থান কিভাবে অ্যাম্পুট করা যায়। নচেৎ, ফেলে আসা পরিবর্তনে তিতিবিরক্ত হয়ে বাংলা হয়তো নব্য পরিবর্তনের উইন্ডফলে সামিল হতেই পারে। কিন্তু তথাকথিত সম্পদের ঋতুস্রাবের সঠিক ট্রিটমেন্ট না করলে আপনাদের প্রতিও অচিড়েই ঘেন্না উগড়াতে বাধ্য হবে দুধে ভাতে বাঙালিরা। অন্যদিকে ‘জয় শ্রী রাম’ মার্কা শুধু হিন্দু আনার জিগির তুলেও যে রাজ্য দখলে নিজেদের নিরঙ্কুশ আধিপত্য বজায় রাখা সম্ভব, সেই দিবাস্বপ্ন না দেখাই ভাল। রাজ্যের বিধানসভায় ২৯৮ টি আসনের মধ্যে ৭৪ টি এমন আসন যেখানে সংখ্যালঘুরাই যে সংখ্যাগুরু। বিজেপি যদি ভেবে বসে থাকে বাকি ২২০ টি আসনে নজর দিলেই কেল্লা ফতে মুখ্যমন্ত্রীর আসনের জন্য তবে সেটা হবে চরম মুর্খামি। অন্তত বিজেপির ভোলা উচিৎ নয় একটি আসনের গুরুত্ব কত মাহাত্ম্য। মনে পরে, ১৯৯৯ সালে সংসদের অনাস্থা প্রস্তাবে কেন্দ্রের বাজপেয়ী সরকার উলটে যায় মাত্র একটি ভোট কম পাওয়ার কারণে? তাই আবার বলি সাবধান! শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সংখ্যাগুরু থেকে সংখ্যালঘু সব সম্প্রদায়ের পাশে থেকে অহং বর্জন করে দল হয়ে উঠুক সকল ধর্ম, সর্ব বর্ণ, সমস্ত শ্রেণির কাছে সমগ্রহনীয়। আর সরকার গঠনের প্রয়োজনে সংগঠন হোক উদার নিরপেক্ষ, সৎ মানসিকতার ও শিল্প কৃষি ভিত্তিক উন্নয়নের শরীক। অন্যথায়, গোঁফে যতই তা দিন গাছের কাঠাল গাছেই থেকে যাবে। কারণ পরির্বতনের ক্ষত বাঙ্গালি এখনও ভুলে যায়নি কিন্তু। কথা গুলো একটু ভাববেন, সাবধান!


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours