Love
সঞ্চারী চট্টোপাধ্যায় ফিচার রাইটার কলকাতাঃ ইশ , প্লেনটা ক্র‍্যাশ করে গেল , একটুর জন‍্য গেমটা শেষ করতে পারলাম না... আফসোসের সুরে ভিডিও গেম খেলতে খেলতে এই কথাটা ছোটবেলায় প্রায়ই বলে উঠতো জেন ওয়াই । অতঃপর তারা বড় হল , এবং ক্র‍্যাশ শব্দটি নিজের চেহারা , বানান সামান‍্য বদলে নিয়ে 'ক্রাশ'রূপে স্থায়ীভাবে জায়গা করে নিলো জেনারেশন ওয়াই এর ডিকশনারিতে । এখন আমরা চলতে ফিরতে উঠতে বসতে কেবলই ক্রাশ খাই । কিন্তু ক্রাশ মানে কি ? আসলে বিদ‍্যাপতি , চন্ডীদাসেরা যাকে পূর্বরাগ নামে জানতেন , আমাদের বাবা জেঠারা তাদের কৈশোর যৌবনে যে মেয়েটিকে একঝলক দেখেই সারাদিন তার কথা ভাবতেন , তাকেই এই প্রজন্ম নাম দিয়েছে ক্রাশ , অর্থাৎ কিনা প্রথম দর্শনেই কাউকে ভালো লেগে যাওয়া । প্রেমের কথা জানান দেবার মাধ‍্যম পাল্টেছে যুগের হাওয়া গায়ে মেখেই । রাধাকৃষ্ণের যুগে বড়াইকে যে কাজ দায়িত্ব নিয়ে করতে হতো , আগের প্রজন্মকে সাহায‍্য করার জন‍্য যেখানে চিঠি ছিল , এ প্রজন্মে সেই কাজ দায়িত্ব সহকারে সামলায় ফেসবুক , হোয়াটসঅ্যাপ । তবু যুগ পাল্টালেও , শব্দ পাল্টালেও অনুভূতি কি আর পাল্টায় ? প্রথম দর্শনেই প্রেমের যে ভালোলাগা তা এই প্রজন্মের ক্রাশ খাওয়ার সমান বললে হয়তো খুব ভুল কিছু বলা হবে না । তবে যুগের হাওয়ায় মাধ‍্যম পাল্টানোর সাথে সাথেই নিন্দুকেরা বলেন প্রেমের গভীরতা কমে গেছে । 
তাইতো আগের যুগের প্রেমে যে গভীরতা , একমাত্রিকতা ছিল , তা এই প্রজন্মের ক্রাশ খাওয়ার মধ‍্যে নেহাতই অপ্রতুল । তাই তো এই প্রজন্মে কেউ দিনে একবার করে ক্রাশ খায় , তো কারুর ক্রাশের মেয়াদ একসপ্তাহ অথবা মেরেকেটে মাসখানেক বা বছরখানেক , তারপরেই ক‍্যালেন্ডারের তারিখ পাল্টায় এবং সেইসঙ্গে ক্রাশের নামও । আজ আর রাধারা , কৃষ্ণরা অন্তরে বিরহ ব‍্যাথা নিয়ে ঘরের কোণে একা বসে থাকে না , তাদের অত সময় নেই । তারা প্রত‍্যেকে ছুটছে , আর ছুটতে ছুটতেই এক ঝলক দেখে নিচ্ছে সুদর্শন অথবা সুদর্শনাকে ফেসবুক স্ক্রল করে । মন উচাটন হলেও ক্রাশের মায়া আসলে "তাকে ধরি ধরি মনে করি ধরতে গেলেম আর পেলেম না" এই সুরেই লুকিয়ে আছে , একথা ভালই জানে জেন ওয়াই । তাই শেষমেষ একথা বলতেই পারি , জেন ওয়াই এর প্রিয় ফাস্টফুডের নাম - ক্রাশ ‌।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours