Durgapur kahini
সুবীর পাল, এডিটর,দ্য অফনিউজঃ বারমুডা ট্রাঙ্গেলের জাহাজ উধাওের রহস্য আজও উদ্ধার হয়নি। অজানা থেকে গিয়েছে আফগানিস্থানের দশ মিটার একটি জায়গাকে কেন্দ্র করে মনুষ্য হদিসের নানান ঘটনা। তেমনি সারা রাজ্যের মধ্যে তো বটেই তামাম ভারতের মধ্যে দুর্গাপুরের বনফুলঝোড়ের এই বিরলতম শব্দ কাহিনী আজও অব্দি অন্তরালেই থেকে গিয়েছে। এখানকার গাছের ডালে কান পাতলেই শোনা যায় স্থানীয় ভাবে সেই চেনা চেনা অথচ না জানা রহস্য গম্ভীর শব্দ। এমনকি গাছের শিকড় বরাবর একটু উবু হয়ে বসে মাটিতে কান পাতলেও স্পষ্ট অনুভূত হবে ওই রোমাঞ্চিত অথচ প্রায় অনুচ্চারিত ধারাবাহিক শব্দ। সোঁ সোঁ ঢক ঢক ঢুক ঢুক। রমনীয় হাতে ঘড়ায় কেউ যেন জল ভড়ছে চুপিসারে। মাটির অতল গহ্বর থেকে উচ্চারিত সেই শব্দ কানে এসে পৌঁছায় একটু পরখ করলেই। সারা বছর। প্রতি মূহুর্তের জন্য। তবে বর্ষায় সেই শব্দের অনুররণ কিছু হ্মীণপ্রায় হয়ে যায়। কেন এই শব্দ উচ্চারিত হয়? কোথায় এই শব্দের উতসস্থল? এসব প্রশ্নের উত্তর আজও অজানা রয়ে গিয়েছে জনমানসে। রাজ্য পুরাতত্ব সর্বেহ্মণ বিভাগের কর্তাব্যক্তিরা ইতিমধ্যেই পর্যবেহ্মণ করে গিয়েছেন বনফুলঝোড় এলাকাটি। কিন্তু তাঁরাও ওই অচেনা শব্দের রহস্য এখনও পর্যন্ত উদ্ঘাটিত করতে পারেননি।
তাই ওই অজানা শব্দের কৌতুহল সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্রমশই বেড়ে চলেছে। এরই মধ্যে ওই অঞ্চলটিকে সংরহ্মণের দাবি তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দুর্গাপুর শহর থেকে প্রায় আঠারো কিলোমিটার দূরে বিদবিহার গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে বনফুলঝোড় গ্রাম। সেখানকার পাকা রাস্তার ধারেই একটি ফাঁকা অঞ্চল। গাছগাছালিতে ভর্তি। আর এখানেই অবাক হবার পালার সব উপকরণ হাজির রয়েছে। প্রায় তিন মিটার লম্বা ও আড়াই মিটার চওড়া আকারের ছোট জায়গা। যার উপরে রয়েছে কয়েকটি মাঝারি মাপের গাছ। সেখান থেকেই এই শব্দ সর্বহ্মণ শোনা যায়। আর ওই ছোট জায়গার মাটিতে আজ পর্যন্ত এক ছটাক ঘাস গজাতে কেউ কখনও দেখেননি বলে গ্রামবাসীদের অভিমত। একটু কাছেই রয়েছে একটি ছোট মাপের পুষ্করীনি। এই পুষ্করীনি নিয়েও এলাকাবাসীর কৌতুহলের সীমা নেই। বছরভর তো বটেই খোদ প্রখর গ্রীষ্মেও এখানকার জলের পরিমান এতটুকু কমে না কোনওদিনই। আশেপাশের চাষের কাজে যতই ওই জল ব্যবহার করা হোক না কেন জলের কমতি নেই এই পুষ্করীনিতে। পুষ্করীনির পাশেই বছর খানেক আগে উদ্ধার হয়েছে চারকোনা বরফি আকারের বেশ কয়েকটি প্রস্তরখন্ড। যেগুলি ওখানকারই একটি মন্দির চত্বরে সযত্নে রাখা আছে। ওই পাথরখন্ডগুলি অতি প্রাচীন বলে অভিমত পুরাতাত্বিকদের। পাওয়া গিয়েছে বেলে পাথরের উপর খোদাই করা কিছু প্রাচীন শিলালিপি। যা এখনও অনুদ্ঘাটিত রয়ে গিয়েছে। কোনও পাথরের গায়ে ফুলের প্রতিকৃতি আবার কোনও প্রস্তরখন্ডের হদিশ মিলেছে যা খিলানের আদলের। পোড়া মাটির তৈরি ছোট মাপের অস্ত্র এবং বিভিন্ন ব্যবহার্য প্রাচীন নিদর্শণ এই পুষ্করীনি ও তার ঘাট থেকে উদ্ধার হয়েছে কোনও না কোনও সময়ে। এইসব বিরল ঐতিহ্য বছর ছয় আগে পর্যবেহ্মণ করতে এসেছিলেন রাজ্য পুরাতত্ব সর্বেহ্মণ বিভাগের দুই কর্মকর্তা তপনজ্যোতি বৈদ্য ও শান্তনু মাইতি। তপনজ্যোতিবাবু বলেছিলেন, “ওই শব্দের উৎসস্থলের সন্ধান নিয়ে আমরা এখনই সঠিকভাবে কিছু বলতে পারব না। বিস্তারিত পরীহ্মা নিরীহ্মা করার পর হয়তো বিশদে বলা যেতে পারে।” তবে গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ওই অজানা শব্দের রহস্য উদ্ঘাটনের আশ্বাস দিলেও পরবর্তী হ্মেত্রে এই নিয়ে রাজ্য পুরাতত্ব সর্বেহ্মণ বিভাগ আর কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। আর আসেওনি। দুর্গাপুরের বিশিষ্ট পুরাতত্ববিদ ত্রিপুরা বসু বলেন, “এই এলাকাটি অজয় নদের অববাহিকা অঞ্চল। পুরাকীর্তি যেগুলি উদ্ধার হয়েছে সেগুলি ভূমধ্যসাগরীয় প্রাচীন নিদর্শণের সঙ্গে মিল রয়েছে। সম্ভবত এখানে কোনও প্রাচীন সভ্যতা সম্পন্ন লোকালয় ছিল পুরাকালে।” এই শিল্পশহরের পুরাকীর্তি সংগ্রাহক সোমনাথ রায় মন্তব্য করেন, “এই শব্দ সত্যি অবাক করে দেয়। পুরাকীর্তি সমৃদ্ধ অঞ্চল হিসেবে এলাকাটির সংরহ্মণ প্রয়োজন।” একদা দুর্গাপুর হেরিটেজ কমিটির সদস্য তথা রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত শিহ্মক সুশীল ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা বছর খানেক আগেই এই এলাকাটিকে হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করার জন্য সুপারিশ করেছিলাম তদানীন্তন রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের কাছে। তবে সেই কমিশন পরবর্তী ক্ষেত্রে কতদূর এগিয়েছে তা আমার অজানা।”


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours