Snek
সুমন ঘোষ, প্রকৃতিপ্রেমীঃ সাপ কথাটি মনে এলে প্রথমেই সকলের মনে ভয় এবং আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। অনেক ক্ষেত্রে এই আতঙ্কের সৃষ্টি হয় সাপ সম্পর্কে ভীতি এবং অজ্ঞানতার জন্য। বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারণার ফলে সাপ এর বিভিন্ন প্রজাতির অস্তিত্ব আজ বিপন্ন। অনেক সময়ই বিষহীন সাপকে বিষধর ভেবে ভুল করে মেরে ফেলা হয়। এরুপ একটি বিষহীন সাপ যার অস্তিত্ব আজ বিপন্ন সেই সম্পর্কে জানব কিছু কথা। এই সাপটি পশ্চিমবঙ্গে "সোনাতাড়া" নামে পরিচিত। যার ইংরেজি নাম INDIAN RAT SNAKE এর বিজ্ঞান সম্মত নাম Ptyas mucosa; সোনাতাড়া সাপটি সাধারনত আমাদের বাড়ির আনাচে কানাচে, ফাটলে, উইএর ঢিপি ও স্যাঁতসেঁতে জায়গায় দেখতে পাওয়া যায়। আকারে বড় হওয়ার কারণে ওকোবরার সাথে মিল থাকার কারনে অনেকেই বিষধর ভেবে একে মেরে ফেলে। এখনও অনেক জায়গায় সাপের চামড়া এবং মাংসের জন্য বহু সাপ মেরে ফেলা হয়। তাছাড়া বিষধর সাপ থেকে ভয়ের কারনে সাপ মেরে ফেলার ঘটনা প্রায়শই ঘটে চলেছে। কিন্তু ভালো করে লক্ষ্য করলে "সোনাতাড়া" সাপকে অন্য বিষধর সাপেদের থেকে পৃথক করা সম্ভব। পিঠে ডোরা দাগ দেখে একে গোখরো সাপের থেকে আলাদা করে চেনা যায়।
পরিণত সোনাতাড়া প্রায় সাত ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে যা মানুষের উচ্চতার কাছাকাছি। গলা দেহের তুলনাই সরু, মাথা সুচাল এবং উপর এর ঠোটে কালো দাগ থাকে। পৃষ্টদেশের রঙের ওপর সাপটির পেটের অংশের রঙ নির্ভর করে। এদের পৃষ্টদেশের রঙ সাধারনত হলুদ, ধুসর, বাদামী এবং পেটের অংশের রঙ সাদা, হলুদ ইত্যাদি হয়ে থাকে। পুরো দেহ মসৃন আশে ঢাকা থাকে এবং জালের মতো নক্সা দেখা যায় পৃষ্টদেশে। এই সমস্থ বৈশিষ্ট্য দেখে এই সাপকে সহজেই চিনে ফেলা সম্ভব। লম্বায় দীর্ঘ হবার কারণে সাপুড়েরা এই সাপ নিয়ে খেলা দেখিয়ে থাকে। অনেকের ধারনা এই সাপের ল্যাজ়ে বিষ থাকে যা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। এরা সাধারনত অন্ধকার শান্ত জায়গা, পাথরের নিচে, ইন্দুরের গর্ত, গাছের কোঠরে লুকিয়ে থাকে। পাখি, ইন্দুর, ব্যাং এদের খাদ্য এবংসাধারনত দিনের বেলায় শিকার করে। এই সাপ দ্রুত উত্তেজনায় সাড়া দেয় এবং শত্রু থেকে বাঁচতে মুখ দিয়ে ফোঁস ফোঁস শব্দ করে। এই সাপের বিষ না থাকলেও এরা মানুষকে কামড়ালে জ্বর আসতে পারে। বর্ষার সময় মাঝেমাঝে এদের খেলা দেখতে পাওয়া যায়। যা প্রধানত দুটি পুরুষ সাপের মধ্যে মিলনের যোগ্যতা প্রমানের লড়াই।
RAT SNAKE এর প্রজনন কাল হল শীতে। একসাথে ৩০-৩৫ টি ডিম পাড়ে এবং ৬০-৮০ দিন পর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। তবে খুব কম সংখ্যক সাপই পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজন করে বড় হতে পারে। সাপ সম্পর্কে সঠিক তথ্যের অভাবের ফলে সাপের বিভিন্ন প্রজাতির অস্তিত্ব আজ চরম বিপদ সীমায় পৌচেছে। আধুনিক সভ্যতার বিকাশের ফলে সাপের সংখ্যা দ্রুত কমছে, এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে বাস্তুতন্ত্রের উপর এবং পরোক্ষ প্রভাব পড়ছে মানুষের উপর। তাই সচেতন নাগরিক হিসাবে আমাদের সকলের উচিত সাপ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা এবং সাপের বিভিন্ন প্রজাতির সংরক্ষণে জোর দেওয়া।




Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours