Election recipe
সুবীর পাল, এডিটর, দ্য অফনিউজঃ   গুটি গুটি পায়ে অবশেষে ভারতীয় সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের সাড়ে সাতি পর্ব সমাপ্ত। এবার ফলাফলের পালা। কার গলায় শোভা পাবে দেশের শাসন ক্ষমতায়নের সাতনুরি হার এখন সেটাই কোটি টাকার প্রশ্ন। তবু রাষ্ট্রপতি ভবনের ইতিবৃত্ত সম্পর্কে যাঁরা ওয়াকিবহাল তাঁদের অধিকাংশের মতামত, দ্বিতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রীত্বের শপথ নিতে চলেছেন নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী। চলতি নির্বাচন শুরু হয় ১১ এপ্রিল। সমাপ্তির ঘন্টা বাজে ১৯ মে। ভোটপর্ব মিটতেই পালা আরম্ভ বুথ ফেরত সমীক্ষার গম্ভীর দাবিদাওয়া। সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সেকি গলার শিরা ফোলানো কাদা ছোড়াছুড়ি। এরকম বিতর্কের আস্ফালন কিছুদিন আগেও দেখেছে দেশবাসী। প্রাক ভোট সমীক্ষার সম্প্রচারে। তবে সময় যত গড়াচ্ছে ততই একটা সমীকরণ স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হয়ে উঠছে। আসন প্রাপ্তির পরিসংখ্যানে শাসক দল বিজেপি অন্যান্য দলের থেকে বেশ কয়েক কদম এগিয়ে থাকতে চলেছে এমন সম্ভবনাই প্রবল। তবে তা বিজেপির একার পক্ষে ক্ষমতা দখলের ম্যাজিক ফিগার ছুঁতে পারবে কিনা তা নিয়েও শুরু হয়েছে জোর জল্পনা। ভোটের ফলাফল প্রকাশ হলে ও পরবর্তী পর্যায়ে আঞ্চলিক দল সহ কংগ্রেস কি অবস্থান গ্রহন করে তার উপর নির্ভর করবে আগামী সরকার গঠনের প্রকৃত রূপরেখা। বিজেপি তো হুংকার দিচ্ছে তারা এবার তিনশোর বেশি আসন একাই দখল করবে। কিন্তু রাজনৈতিক পর্যালোচকেরা এই ফুলমার্ক্স তাদের দিতে একেবারেই নারাজ। বরং অনেকেই মনে করেন কংগ্রেস তুলনামূলক কিছুটা ভাল ফল করবে। আর আঞ্চলিক দলগুলি যে সরকার গঠনের নির্ণায়ক ভুমিকা নিতে চলেছে তা নিয়ে মোটামুটি সকলে একমত। তবে কে কিভাবে দড় হাঁকাতে পারবে তার সব কিছুই নির্ভর করবে ফলফল ঘোষণার পর কোন দল কত সংখ্যক আসন নিজেদের ঝুলিতে ভরাতে পারবে তার উপর। তবে দলগত ভাবে সবাইকে অবাক করে দিয়ে কংগ্রেস ইতিমধ্যেই ঘোষণা করে দিয়েছে তারা প্রধানমন্ত্রীত্ব নিয়ে জেদাজেদি করবে না। বরং বিজেপি বিরুদ্ধ আঞ্চলিক দলের থেকে কেউ প্রধানমন্ত্রী হলে তাঁকে সমর্থন জানাবে কংগ্রেস। সুতরাং কংগ্রেস এটা বুঝে গেছে ক্ষমতার কুর্সিতে যেতে গেলে যে পর্যাপ্ত মাত্রায় আসন প্রয়োজন তা তারা নাও পেতে পারে। তাই তারা সরকারের চালিকা শক্তি হিসেবেই সন্তুষ্ট থাকতে চায় আপাতত এ’যাত্রায়। অন্যদিকে আঞ্চলিক বিরোধীদের নিজস্ব অবস্থানে হম্বিতম্বি থাকলেও এখন নির্দিষ্ট ব্লুপ্রিন্ট তৈরি হয়নি। ফেডারেল ফ্রন্ট তো প্রেস ব্রিফিংয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে। তৃণমূল ইতিমধ্যেই ঘোষণা করে দিয়েছে তাদের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই তারা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান। বহুজন সমাজ পার্টির বক্তব্য মায়াবতীর মধ্যে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সমস্ত মুন্সীয়ানা। তেলেগু দেশমের চন্দ্রবাবু নাইডু তো এমন ছুটোছুটি করছে যে দিল্লির মসনদে এই বসলেন বলে। মুম্বাইয়ের শরদ পাওয়ার তো জান কবুল করে দিচ্ছেন সাউথ ব্লক কব্জা করার লক্ষ্যে। বিজেপি বিরোধীদের মধ্যে যখন এরকম টাগ অব ওয়ার চলছে তারই মধ্যে ডিগবাজির খবর আসতে শুরু করেছে। সদ্য ফণী ঝড়ে বিদ্ধ ওড়িষ্যার মুখ্যমন্ত্রী বিজু পট্টনায়ক বলতে শুরু করেছেন যে পক্ষ তাঁর রাজ্যকে বাড়তি সুবিধা দেবে তিনি সেই অবস্থানকেই সমর্থন করবেন। যুযুধান ভোট লড়াই হলেও ফণীর আবহে ওড়িষ্যার মুখ্যমন্ত্রীর ভুয়সী প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী সমস্ত বৈরিতা পিছনে ফেলে। বিজু পট্টনায়কের এই দোদুল্যমান ডিংডংয়েই বিরোধী শিবির কিন্তু সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছে। কারণ সবচেয়ে বেশি আসন বিজেপি যদি পায় স্বাভাবিক নিয়মেই তারাই রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে সরকার গঠনের আমন্ত্রন পাবে এটা একপ্রকার নিশ্চিত। কারণ রাইসিনা হিলের ধারাবাহিকতা কিন্তু তারই ইঙ্গিত দেয়। ১১৯৬, ১৯৯৮ ও ১৯৯৯ সালে বিজেপি আসন পেয়েছিল যথাক্রমে ১৬১, ১৮২ এবং ১৮২ টি। তবু বিজেপির অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকার গঠনের আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। অন্যদিকে ২০০৪ ও ২০০৯ সালে কংগ্রেসের মনমোহন সিং শপথ নিয়েছিলেন মাত্র ১৪৫ ও ২০৬ টি আসন করায়ত্ব করেই। মজার ব্যাপার এটাই, পরিসংখ্যানের নিরিক্ষে প্রতিবারেই কিন্তু দেখা গেছে আমন্ত্রিত দুই পক্ষই কিন্তু শপথ নেবার সময় তাঁরা সংখ্যা গরিষ্ঠের ম্যাজিক ফিগার থেকে ছিলেন অনেকটা পিছিয়ে। তবু তাঁরা আমন্ত্রন পেয়েছিলেন এই তত্ত্বে যে তাঁরা সংশ্লিষ্ট নির্বাচনগুলিতে আসন প্রাপ্তির স্থানে ছিলেন সর্ববৃহৎ দলের নেতা। রাষ্ট্রপতি ভবন যদি এবারও ইতিহাসকেই প্রাধান্য দেয়, তবে হয়তো দ্বিতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হবার উদ্দেশ্যে নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। বিজেপি সবচেয়ে বেশি আসন লাভ করলে নিশ্চয় সোনার পরশ পাথর হেলায় ছুড়ে ফেলে দেবে না তা সদ্যজা্ত শিশুও বিলক্ষণ জানে। উল্টোপুরান তখনই সম্ভব, যদি বিজেপি একক বৃহত্তর দল হিসেবে না উঠে আসতে পারে বা প্রত্যাশিত আসন না পেয়ে ময়দান ছেড়ে দেয় ভোটের ফলাফল ঘোষনার পর। তবে দেশের বর্তমান রাজনীতির পাশা খেলায় সেই প্রত্যাশা করাটা অনেকটা অভাবনীয়। তাই বিজেপির ঘোষিত প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী যে শপথ নেবে তা শুধু সময়ের অপেক্ষা। এরপরেই শুরু হবে ৫৪৩ টি সাংসদের মধ্যে নূন্যতম ২৭২ জনের সমর্থন আদায়ের পালা। জাঁকিয়ে চলবে হর্স ট্রেডিংয়ের লুকোচুরি খেলা। এই তো বাজার। নির্দলের তো পোয়া বারো, সঙ্গে মন্ত্রীত্ব বা সরেশ কোনও কমিটির প্রধানের টোপ। সঙ্গে ভোল পালটানো বিজু পট্টনায়কের মতো নেতারা করবেন দড় কষাকষি নানান সুবিধা আদায়ের মাপকাঠিতে। অতএব যাঁরা সরকার গঠনের ডাক প্রথমে পাবেন সেই পক্ষই যে কল্পতরু হবার অ্যাডভান্টেজে থাকবেন তা এক প্রকার নিশ্চিন্ত।



Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours