কাজল ভট্টাচার্য, বরিষ্ঠ সাংবাদিক, কলকাতাঃ (রাজনীতির আবর্তে পবিত্র হয়ে যায় পঙ্কিল। সব দলই ধর্মনিরপেক্ষতার বুলি আওড়ায়। কিন্তু সেই ধর্মের ওপর ঠিক কতখানি শ্রদ্ধাশীল রাজনীতির বাস্তুঘুঘুরা? প্রশ্ন তুললেন প্রতিবেদক নিজেই)
#ছিলেন ধর্মগুরু। অহিংসার প্রবক্তা।
হয়ে গেলেন হিংসাশ্রয়ী। পেশিশক্তির মাস্তান। রাজনীতির সীলমোহর দেগে দিতেই নামের অর্থটা গেল উল্টে।
হ্যাঁ। 'বাহুবলী'র কথা বলছি।
কী বলবো একে পরিবর্তন?
নাকি এ শুধুই সময়ের পরিহাস?
ভারতীয় সংস্কৃতির পবিত্রতম একটি নাম হয়ে দাঁড়াল কলঙ্কিত।ধর্মনিরপেক্ষ ভারতীয় গণতন্ত্রের কারবারীদের সৌজন্যে আজ বাহুবলীর পরিচয় দাপুটে মাস্তানের। যাঁর পরাক্রমে কাঁপে বিরোধীদের বুক।
গনতন্ত্রের রাশ যাঁদের হাতে তাঁদের অনেকের পিতৃদত্ত নামের আগে জুড়ে যায় চার অক্ষরের এই বিশেষ শব্দ- বাহুবলী। আর এই একটিমাত্র শব্দেই বলা হয়ে যায় অনেক কিছু।
বাহুবলী নেতা মানেই দোর্দণ্ডপ্রতাপ কোনও এক ব্যক্তি। এলাকার ত্রাস। যাঁর প্রতাপের সামনে বিরোধীরা দাঁড়াতেই পারেন না। স্বাভাবিকভাবেই দলীয় গণতন্ত্রে এই বাহুবলীরা দলের সম্পদ বিশেষ।
বাহুবলীর হাতে নির্বাচনপ্রার্থীর টিকিট গুঁজে দেওয়া মানেই একখানা আসন জয় অনিবার্য। গায়ের জোরেই ভোটের হাওয়া ঘুরিয়ে দিতে পারেন সেই বাহুবলী। কামাল দেখাতে পারেন ভোটবাক্সে। তাই যুগে যুগে বাহুবলীরাই হয়ে দাঁড়িয়ছেন ভারতীয় গণতন্ত্রের প্রহরী।
ভোটের বাদ্যি বাজলেই খোঁজ পড়ে বাহুবলী প্রার্থীর। আবার জোর ধরে, দলভাঙিয়ে বাহুবলীদের নিজের শিবিরে আনার খেলাও। গণতন্ত্রের গোটা প্রক্রিয়াটাই সহজ সরল পাটিগনিতের শাসনে বাঁধা। যে দলের আসন বেশি, ক্ষমতার রাশ তার মুঠোয়। তা সে বিধানসভা হোক কী লোকসভা।
গণতন্ত্রের জয়রথ গড়াবে সেই দলের সুপ্রিমোর নির্দেশেই। সেই যাত্রাপথে বাধা দেওয়ার লোক যেন না থাকে। বিরোধীতে ঘোর অরুচি। আর এই বিরোধীদের হিসেব নিকেশ করতেই বাহুবলিবরণ।
গণতন্ত্রের তত্ত্বকথায় বিরোধী শিবিরের যতই মহিমাকীর্তন করা হোক না কেন, সব দলই স্বপ্ন দেখে একাধিপত্যের। বিরোধীশূন্য নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার। আরও আসন চাই আরও। ছিনিয়ে আনতে হবে সবকটি আসন। গণতন্ত্রের ক্ষমতালোভী প্রভুদের এই স্বপ্নপূরণেই বাড়বাড়ন্ত বাহুবলীদের।
রাজনীতির ক্ষমতাধারীরা যেখানে অক্ষম, সেখানেই সক্ষম বাহুবলীরা। ক্ষমতার লালসার কানাগলি বেয়ে রাজনীতিতে অভিষেক হয় বাহুবলীদের। নির্বাচনে জিতে এই বাহুবলীরাই হয়ে যান গণতন্ত্রের প্রভু।
মাস্তান বলে ছোট করবো না। ছিলেন এলাকার ত্রাস, হয়ে দাঁড়ালেন এলাকার বিধায়ক বা সাংসদ। ছিলেন দলবাজদের স্বপ্নপূরণের হাতিয়ার, ক্রীড়নক। হলেন জনপ্রতিনিধি।
আর মুশকিলের শুরু ঠিক এই জায়গাতেই।
স্বভাবে স্বাধীনচেতা বাহুবলীরা কারুর শাসন মেনেই চলতে অভ্যস্ত না। তা সে দলের হোক বা অন্য কারও। পায়ে বেড়ি পরা তাঁর প্রকৃতিবিরুদ্ধ। একেকটি মূর্তিমান ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন।
অথচ ইতিহাস কিন্তু উল্টো কথাটাই বলে।
বাহুবলীর আক্ষরীক মানে, যাঁর বাহুতে অসীম বল। এমনই এক ব্যক্তির খোঁজ মেলে জৈনধর্মের ইতিহাসে। তিনি জৈনদের আরাধ্য। জৈনধর্মের প্রথম তীর্থঙ্কর। ঋষভনাথের আত্মজ। কষ্ট সহিষ্ণুতার নিদর্শন প্রতিষ্ঠা করতে তিনি এক অদ্ভুত কাণ্ড করে বসেছিলেন। দাঁড়িয়ে ঈশ্বরচিন্তায় মগ্ন হয়ে ধ্যান করেছিলেন এক বছর। কথিত আছে, তাঁর পা বেয়ে শাখা প্রশাখা বিস্তার করেছিল লতা গুল্ম। এরপরেই দিব্যজ্ঞান লাভ করেন তিনি। সিদ্ধিলাভ করেন বাহুবলী।
সিদ্ধিলাভ করেন রাজনীতির বাহুবলীরাও। তবে তা বাহুর জোরেই। বিরোধীদের জুজুর ভয় দেখিয়ে ক্ষমতার কুর্সি ছিনতাই করেন তাঁরা।
গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় ভোটে জেতাই শেষ কথা।
স্বাভাবিক নিয়মেই, বাহুবলীরা যখন যে দলে থাকেন তখন তাঁরা সেই দলের সম্পদ। হেভিওয়েট। কিন্তু ওই যে বললাম স্বভাবে বেপরোয়া। তাই এঁরা বেশিদিন কারও নিয়ন্ত্রণে থাকেন না। মর্জির রশিতে টান পড়লেই দলত্যাগ। অমনি একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে যায় হাওয়া-মোরগের মুখ।
দলত্যাগের আগের মুহূর্ত পর্যন্ত যেই বাহুবলী ছিলেন দলের সুবোধ বালক, সম্পদ, দল ছাড়ার পরেই তিনি হয়ে দাঁড়ান দলের বোঝা। গদ্দার।
দলছুট সেই বাহুবলীর কীর্তিকাহিনী ফাঁস করে দেয় তাঁর ফেলে আসা দল। একের পর আর এক মামলায় জড়িয়ে তখন ওষ্ঠাগত প্রাণ সেই বাহুবলীর। ততক্ষনে অবশ্য রাজনৈতিক আনুকূল্য বদলে বাহুবলীর গায় অন্য দলের জার্সি।
এভাবেই গণতন্ত্রের বাহুবলীদের এক স্পষ্ট ছবি আঁকা হয়ে গিয়েছে আমাদের মনে। ঢাকা পড়ে গেছে বাহুবলীর মর্যাদা পুরুষের বাস্তব ছবিটা। ছিলেন জৈনধর্মের প্রথমতীর্থঙ্কর। ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিবিদদের হাতে পড়ে হয়ে গেলেন মাস্তান।
ইতিহাস বিকৃতির এমন জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ আর আছে কি? কী বলেন গণতন্ত্রের ধর্মনিরপেক্ষতার অভিভাবকরা?
গনতন্ত্রের রাশ যাঁদের হাতে তাঁদের অনেকের পিতৃদত্ত নামের আগে জুড়ে যায় চার অক্ষরের এই বিশেষ শব্দ- বাহুবলী। আর এই একটিমাত্র শব্দেই বলা হয়ে যায় অনেক কিছু।
বাহুবলী নেতা মানেই দোর্দণ্ডপ্রতাপ কোনও এক ব্যক্তি। এলাকার ত্রাস। যাঁর প্রতাপের সামনে বিরোধীরা দাঁড়াতেই পারেন না। স্বাভাবিকভাবেই দলীয় গণতন্ত্রে এই বাহুবলীরা দলের সম্পদ বিশেষ।
বাহুবলীর হাতে নির্বাচনপ্রার্থীর টিকিট গুঁজে দেওয়া মানেই একখানা আসন জয় অনিবার্য। গায়ের জোরেই ভোটের হাওয়া ঘুরিয়ে দিতে পারেন সেই বাহুবলী। কামাল দেখাতে পারেন ভোটবাক্সে। তাই যুগে যুগে বাহুবলীরাই হয়ে দাঁড়িয়ছেন ভারতীয় গণতন্ত্রের প্রহরী।
ভোটের বাদ্যি বাজলেই খোঁজ পড়ে বাহুবলী প্রার্থীর। আবার জোর ধরে, দলভাঙিয়ে বাহুবলীদের নিজের শিবিরে আনার খেলাও। গণতন্ত্রের গোটা প্রক্রিয়াটাই সহজ সরল পাটিগনিতের শাসনে বাঁধা। যে দলের আসন বেশি, ক্ষমতার রাশ তার মুঠোয়। তা সে বিধানসভা হোক কী লোকসভা।
গণতন্ত্রের জয়রথ গড়াবে সেই দলের সুপ্রিমোর নির্দেশেই। সেই যাত্রাপথে বাধা দেওয়ার লোক যেন না থাকে। বিরোধীতে ঘোর অরুচি। আর এই বিরোধীদের হিসেব নিকেশ করতেই বাহুবলিবরণ।
গণতন্ত্রের তত্ত্বকথায় বিরোধী শিবিরের যতই মহিমাকীর্তন করা হোক না কেন, সব দলই স্বপ্ন দেখে একাধিপত্যের। বিরোধীশূন্য নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার। আরও আসন চাই আরও। ছিনিয়ে আনতে হবে সবকটি আসন। গণতন্ত্রের ক্ষমতালোভী প্রভুদের এই স্বপ্নপূরণেই বাড়বাড়ন্ত বাহুবলীদের।
রাজনীতির ক্ষমতাধারীরা যেখানে অক্ষম, সেখানেই সক্ষম বাহুবলীরা। ক্ষমতার লালসার কানাগলি বেয়ে রাজনীতিতে অভিষেক হয় বাহুবলীদের। নির্বাচনে জিতে এই বাহুবলীরাই হয়ে যান গণতন্ত্রের প্রভু।
মাস্তান বলে ছোট করবো না। ছিলেন এলাকার ত্রাস, হয়ে দাঁড়ালেন এলাকার বিধায়ক বা সাংসদ। ছিলেন দলবাজদের স্বপ্নপূরণের হাতিয়ার, ক্রীড়নক। হলেন জনপ্রতিনিধি।
আর মুশকিলের শুরু ঠিক এই জায়গাতেই।
স্বভাবে স্বাধীনচেতা বাহুবলীরা কারুর শাসন মেনেই চলতে অভ্যস্ত না। তা সে দলের হোক বা অন্য কারও। পায়ে বেড়ি পরা তাঁর প্রকৃতিবিরুদ্ধ। একেকটি মূর্তিমান ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন।
অথচ ইতিহাস কিন্তু উল্টো কথাটাই বলে।
বাহুবলীর আক্ষরীক মানে, যাঁর বাহুতে অসীম বল। এমনই এক ব্যক্তির খোঁজ মেলে জৈনধর্মের ইতিহাসে। তিনি জৈনদের আরাধ্য। জৈনধর্মের প্রথম তীর্থঙ্কর। ঋষভনাথের আত্মজ। কষ্ট সহিষ্ণুতার নিদর্শন প্রতিষ্ঠা করতে তিনি এক অদ্ভুত কাণ্ড করে বসেছিলেন। দাঁড়িয়ে ঈশ্বরচিন্তায় মগ্ন হয়ে ধ্যান করেছিলেন এক বছর। কথিত আছে, তাঁর পা বেয়ে শাখা প্রশাখা বিস্তার করেছিল লতা গুল্ম। এরপরেই দিব্যজ্ঞান লাভ করেন তিনি। সিদ্ধিলাভ করেন বাহুবলী।
সিদ্ধিলাভ করেন রাজনীতির বাহুবলীরাও। তবে তা বাহুর জোরেই। বিরোধীদের জুজুর ভয় দেখিয়ে ক্ষমতার কুর্সি ছিনতাই করেন তাঁরা।
গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় ভোটে জেতাই শেষ কথা।
স্বাভাবিক নিয়মেই, বাহুবলীরা যখন যে দলে থাকেন তখন তাঁরা সেই দলের সম্পদ। হেভিওয়েট। কিন্তু ওই যে বললাম স্বভাবে বেপরোয়া। তাই এঁরা বেশিদিন কারও নিয়ন্ত্রণে থাকেন না। মর্জির রশিতে টান পড়লেই দলত্যাগ। অমনি একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে যায় হাওয়া-মোরগের মুখ।
দলত্যাগের আগের মুহূর্ত পর্যন্ত যেই বাহুবলী ছিলেন দলের সুবোধ বালক, সম্পদ, দল ছাড়ার পরেই তিনি হয়ে দাঁড়ান দলের বোঝা। গদ্দার।
দলছুট সেই বাহুবলীর কীর্তিকাহিনী ফাঁস করে দেয় তাঁর ফেলে আসা দল। একের পর আর এক মামলায় জড়িয়ে তখন ওষ্ঠাগত প্রাণ সেই বাহুবলীর। ততক্ষনে অবশ্য রাজনৈতিক আনুকূল্য বদলে বাহুবলীর গায় অন্য দলের জার্সি।
এভাবেই গণতন্ত্রের বাহুবলীদের এক স্পষ্ট ছবি আঁকা হয়ে গিয়েছে আমাদের মনে। ঢাকা পড়ে গেছে বাহুবলীর মর্যাদা পুরুষের বাস্তব ছবিটা। ছিলেন জৈনধর্মের প্রথমতীর্থঙ্কর। ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিবিদদের হাতে পড়ে হয়ে গেলেন মাস্তান।
ইতিহাস বিকৃতির এমন জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ আর আছে কি? কী বলেন গণতন্ত্রের ধর্মনিরপেক্ষতার অভিভাবকরা?
Post A Comment:
0 comments so far,add yours