Politics
কাজল ভট্টাচার্য, বরিষ্ঠ সাংবাদিক, কলকাতাঃ  (ক্ষমতা দখলের নেশা ভর করেছিল রাহুল গাঁধির মনে।  তখন তাঁর সামনে একটাই লক্ষ্য, যেভাবেই হোক নরেন্দ্র মোদিকে টেনে নীচে নামানো। কোনও রাজনৈতিক শিষ্টাচার, মর্যাদার ধার ধারেননি তিনি। রাহুলের এই বেপরোয়া মনোভাবকে সুনজরে দেখেনি ভারতবাসী। রাহুলের এই বদলে যাওয়া ব্যক্তিত্বের ঘটনা তুলে ধরলেন প্রতিবেদক) পূর্বকথা... উত্তরপ্রদেশের আমেঠি। 1967 সাল। পাঁচ বিধানসভা নিয়ে তৈরি হলো আমেঠি লোকসভা। জন্মলগ্ন থেকেই আমেঠি কংগ্রেসের। আর নেহরু গাঁধি পরিবারের কাছে আমেঠির আনুগত্য নিয়েও প্রশ্ন তোলা যায় না। এই আমেঠিতেই রাজনৈতিক অভিষেক হয়েছিল রাহুল গাঁধির। এই কেন্দ্র থেকেই সাংসদ হয়েছিলেন রাহুলের প্রয়াত কাকা সঞ্জয় গাঁধি। তাঁর অকালমৃত্যুতে আমেঠি লোকসভার প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন রাহুলের প্রয়াত পিতা রাহুল গাঁধি। এখানেই রাজনৈতিক অভিষেক সনিয়া গাঁধির। মধ্যে অবশ্য ছেদ পরেছিল নেহরু-গাঁধি বংশানুক্রমিক রাজনৈতিক অভিভাবকত্বের ধারায়। 1971 আমেঠি নির্বাচীত করেছিল জনতা দলের রবীন্দ্র প্রতাপ সিংকে। আমেঠির কংগ্রেস দুর্গে ঢুকে পড়েছিলেন বিজেপি'র সঞ্জয় সিং(1998)। রাহুলের অভিষেক... 1999 এর নির্বাচন। আমেঠি বরণ করে নিলো সনিয়া গাঁধিকে। পাঁচ বছর পর আমেঠি থেকেই যাত্রা শুরু রাহুলের। বয়স মাত্র 34। মৃদুভাষী। সপ্রতিভ ব্যক্তিত্বের অধিকারী। দলের বাস্তুঘুঘুদের মোটেই পছন্দের পাত্র ছিলেন না তিনি। তবে কংগ্রেসের পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে মুখ খুলবেন? হোক প্রবীণ, কিন্তু জলে থেকে কেই বা কুমীরের সঙ্গে বিবাদে জড়ায়! সাল 2014। রাহুলকে চ্যালেঞ্জ জানালেন বিজেপির স্মৃতি ইরানি। সেদিন প্রিয়াঙ্কা ভাডরার কাছে সাংবাদিকরা জানতে চেয়েছিলেন রাহুলের প্রতিদ্বন্দির কথা। "কে স্মৃতি ইরানি?" পালটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিলেন প্রিয়াঙ্কা। নির্বাচনেও রাহুলের কাছে পাত্তাই পেলেন না স্মৃতি। হেরে গেলেন 1লক্ষ 7হাজার 903 ভোটে ।  এদিকে ততদিনে কংগ্রেস ঘরানার রাজনীতিতে বেশ পটু হয়ে উঠেছেন সনিয়াপুত্র। শিখে ফেলেছেন রাজনীতির ভাষা। তীব্র ভাষায় বিরোধীদের বিঁধে ফেলতে আর অসুবিধা হয় না সেদিনের সেই মৃদুভাষী ছেলেটির। দলেও পদোন্নতি হয়েছে তাঁর পরিবারতন্ত্রের ধারা মেনেই। সভাপতির আসনটি বরাদ্দ হয়েছে তাঁর জন্য। এরমধ্যেই হঠাত একদিন যেন ঝলসে উঠলেন পুরনো রাহুল। চমক নাকি রাজনীতি... দিনটা ছিল সম্ভবত 20 জুলাই, 2018। সংসদ চলছে। আচমকাই বিরোধীবেঞ্চ থেকে উঠে দাঁড়ালেন রাহুল। এগিয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দিকে। কিছু বললেন। তারপরেই জড়িয়ে ধরলেন প্রধানমন্ত্রীকে। মোদিজিও আলিঙ্গন করলেন বিরোধীবেঞ্চের কনিষ্ঠ সাংসদটিকে। হোক প্রথাবিরোধী, তবু চোখ জুড়িয়ে গেছিল সংসদ হলের ভেতরে শাসক-বিরোধীর সেই অন্তরঙ্গ দৃশ্য দেখে। রাজনৈতিক বিরোধিতা থাকতেই পারে। কিন্তু সেই বিরোধিতা ব্যক্তিগত সম্পর্কের মধ্যে ঢুকে পড়বে কেন? পরে অবশ্য রাহুলের ওই ঘটনাতে রাজনৈতিক সীলমোহর দেগে দিয়েছিল বিজেপি। "প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসার এত তাড়াহুড়ো কিসের বাপু!" এ ধরনের কটাক্ষ করেছিলেন খোদ নরেন্দ্র মোদি। ব্যাপারটাকে মনে হয়েছিল দলীয় রাজনীতির কদর্য রূপ। সেই কদর্য রূপটাই সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনে উপহার দিলেন রাহুল। দেশের প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি বলে বসলেন চোর। রাহুলের বাক্যবাণ... "চৌকিদার চোর হ্যায়"। 2019 এর সাধারণ নির্বাচন। মাত্র কয়েক মাস আগেই তিন রাজ্যে জয়ের মুখ দেখেছে কংগ্রেস। ওই ঘটনাই আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছিল কংগ্রেস সেনাপতির। বেশ বেপরোয়াই হয়ে উঠেছিলেন তিনি। এদিকে পরিস্থিতি দেখেই বোঝা গিয়েছিল, দিল্লির মসনদ দখলে এবার সরাসরি কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে মুখোমুখী কংগ্রেস-বিজেপি। সাবধান হয়েছিলেন রাহুলও। মোদি ঝড়ে উড়ে যেতে পারেন। এই আতঙ্কেই শুধু আমেঠির ওপর ভরসা না রেখে প্রার্থী হয়েছিলেন কেরলের ওয়ানেড় থেকেও। তীব্র মোদি বিরোধিতার রাস্তাই বেছে নিয়েছিলেন রাহুল গাঁধি। হাতিয়ার রাফাল ইস্যু। শ্লোগান দিলেন, চৌকিদার চোর হ্যায়। আসলে নরেন্দ্র মোদির মুখের কথা কেড়েই মোদিকে মাত দিতে চাইলেন রাহুল। মোদি নিজেকে দেশের চৌকিদার বলে চিহ্নিত করেছিলেন। আর রাহুল সেই চৌকিদারকেই সরাসরি চোর বলে বসলেন। ওটাই হয়ে গেল কংগ্রেসের মূলমন্ত্র। নির্বাচনী প্রচারে নিজের যত না কথা বললেন, তারচেয়ে অনেক বেশি বললেন মোদির কথা। তীব্র বাক্যবাণে ছিন্নভিন্ন করে দিতে চাইলেন বিজেপি শিবিরকে। বুমেরাং... ফল হলো উলটো। বুমেরাং হয়ে দাঁড়াল বিরোধিতা। আমেঠিতে ফের সেই স্মৃতি ইরানির মুখোমুখী হলেন রাহুল। হাওয়া মোরগের মুখ উলটো দিকে ঘুরলো। হেরে গেলেন রাহুল। শেষ হাসি হাসলেন স্মৃতি। প্রিয়াঙ্কাও বোধহয় ততদিনে চিনে ফেলেছেন সাধারণ চেহারার, মাঝবয়সী এই মহিলাকে। সেই ওয়ানেড়ের সৌজন্যেই সপ্তদশ লোকসভাতে আরও একবার দেখা যাবে রাহুল গাঁধির মুখ। কিন্তু কী হাল হলো কংগ্রেসের? নিজের অপরিণামদর্শিতায় দলের সভাপতি পদও নাকি ছাড়তে  চেয়েছিলেন রাহুল। অতঃপর... ঘৃণা ছড়িয়েই বাজিমাত করতে চেয়েছিলেন রাহুল। কিন্তু সাধারণ মানুষ যে আজও ঘৃণার রাজনীতির বিপক্ষে, তা যেন প্রতিফলিত হলো এবারের সাধারণ নির্বাচনে। শেষদিকে রাহুল নিজেও হয়ত বুঝতে পেরেছিলেন সে কথা। তাই তাঁকেও বলতে শোনা গেছিল,"নরেন্দ্র মোদিজির ওপর কোনও বিদ্বেষ নেই আমার। উনি আমাকে যতই আক্রমণ করুন না কেন, আমি তার জবাব দেব ভালবেসেই।" তবে তখন বড্ড দেরি হয়ে গেছিল। ফিরে আসুন রাহুল আবার তাঁর পুরনো চেহারায়। ফিরুক রাজনৈতিক শিষ্টাচার। ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন করতে না পারলেও, হতাশ হওয়ার কারণ নেই। গণতন্ত্রে শাসক শিবিরের মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ বিরোধী শিবিরের ভূমিকাও।j


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours