রণজিৎ গুহ, সমাজকর্মীঃ এ এক বেড়ে মজা! রাজনৈতিক দলগুলি সাধারণ মানুষের কাছে প্রত্যাখ্যাত হলেই নাগরিক সমাজকে দায়ী করে। সংবাদ মাধ্যমকে গাল পাড়ে।অথচ স্বাধীন সচেতন নাগরিক সমাজ গড়ে ওঠার যে কোন প্রচেষ্টায় এরা সর্বতোভাবে বাঁধা দেয়।সব রাজনৈতিক দলের একই মন্ত্র 'হয় এস আমার দলে না হলে কোন্দলে'।প্রতিটি দল চায় নাগরিক সমাজ অন্য দলের সবকিছুর বিরোধিতা করুক। আর নিজ দলের সুখ্যাতি করুক।যখন হালে পানি পায়না সেসময়ে নাগরিকদের ওপর দোষ চাপায়।
সেই কবে রবীন্দ্রনাথ লিখলেন আজও তা অনিবার্য ভাবে প্রাসঙ্গিক।
'আমি যাহা করিব সকলকেই তাহা করিতেই হইবে, আমি যাহা বলিব সকলকেই তাহা বলিতেই হইবে এইরূপ বলপ্রয়োগে দেশের সমস্ত মত, ইচ্ছা ও আচরণ-বৈচিত্র্যের অপঘাতমৃত্যুর দ্বারা পঞ্চত্বলাভকেই আমরা জাতীয় ঐক্য বলিয়া স্থির করিয়া বসিয়াছি। মতান্তরকে আমরা সমাজে পীড়ন করিতেছি, কাগজে অতিকুৎসিত ভাবে গালি দিতেছি, এমন কি, শারীরিক আঘাতের দ্বারাও বিরুদ্ধ মতকে শাসন করিব বলিয়া ভয় দেখাইতেছি।'
সবকটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতার ছিটেফোঁটা হাতে পেলেই নাগরিকদের গলা চেপে ধরে আর ক্ষমতার বাইরে এলে অন্য দলকে এই দোষে দোষী বলে চিহ্নিত করে।একাজে তারা স্ব আবিস্কৃত এক চমৎকার হাইপোথিসিস জনমানসে গেঁথে দিয়েছে। "কেউই নিরপেক্ষ নয় কিছুই অরাজনৈতিক নয়''।মানেটা হল আমি এবং আমার দল যা বলছি এবং যেভাবে বলছি তুমি তাতে পোঁ ধর নতুবা তুমি অন্যদলের অন্নদাস।ওই স্বরচিত তত্বের আরেক হুঙ্কার পারিবারিক, সামাজিক বা ভাষাগত, বিষয়গত আলাপ আলোচনা মতামত, গবেষণা,শিল্পচর্চা, খেলাধুলা সবই নাকি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য মূলক।এইসব কর্মকাণ্ড নাকি রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে করা হয়ে থাকে।
অপর দলের কাজকর্ম নিয়ে নিরন্তর প্রশ্ন তোলো কিন্তু নিজের দলের রাজনৈতিক বিশ্বাস বা অবস্থান নিয়ে কেউ অস্বস্তিকর প্রশ্ন করলেই তাকে দালাল কিংবা কুৎসাকারী হিসাবে চিহ্নিত কর।আমরা নিজেদের রাজনৈতিক বিশ্বাস বা অবস্থানকে প্রশ্ন করি না, কারণ প্রক্রিয়াটি কঠিন এবং অস্বস্তিকর। অপরকে প্রশ্ন করার মধ্যে একধরণের ক্ষমতায়ন আছে, আর নিজেকে প্রশ্ন করার মধ্যে আছে ভেঙে পড়ার ভয়।এ এক বেড়ে মজা!
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours