Politics
কিশলয় বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ নিশুতি রাত। তিনি কড়া নাড়ছেন কখনও শাসকদলের নেতার বাড়িতে । আবার কখনও অনেক রাতে 'প্রাইভেট নম্বর' থেকে ফোনালাপ করছেন ফেলে আসা সহকর্মীদের। লক্ষ্য একটাই, তৃণমূলের সাজানো ঘর তছনছ করা। মনে পড়ে যায় একদা কলকাতা ময়দানের কথা। ফুটবলার নিয়ে দুই প্রধানের ট্যাগ আব ওয়ারের খেলা। ভোটের বেশ কিছু আগে নিজের 'টিমওয়ার্ক' বেগবান করার সেই কপিরাইট ঘরানায় আসরে নেমেই কেল্লাফতে করেছেন  বিজেপির বাংলার চাণক্য  মুকুল রায়। আর সেই প্রত্যাশিত ফলাফল হাতেনাতে পেল রাজ্যে পদ্ম শিবির। বছর দুই আগে থেকেই বাংলায় বিপুল বিজেপির সম্ভাবনার গন্ধ পেয়েছিলেন মোদির কোটারি। সেই কোটারির কৌশলে বিধ্বস্ত বিরোধীরা। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ স্পষ্ট বলেছিলেন, বিরোধীদের লোক না ভাঙাতে পারলে বাংলায় সংগঠন তৈরি করা অসম্ভব। সেই কৌশলকে সামনে রেখেই তৃণমূল থেকে একেবারে সঠিক লোক বাছতে ভুল করেননি অমিতজী। মুকুল মানে তিনি মুকুলই।যখন যে রঙেই পাত্রেই তিনি থাকুন না কেন, অন্যের ঘর ভাঙায় মুকুলের মতো তুখড় কারিগড় বাংলায় বর্তমানে মেলা ভার। তৃণমূলে সবুজ জামা পরে তিনি বিরোধীদের ডেরায় কার্যত ছিপ ফেলে অপেক্ষায় থাকতেন। তাঁরই হাত ধরে কম করেও এক ডজন নেতা বাম-কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। মুকুলের 'ভেলকি'তেই বহু বাম-কংগ্রেস পরিচালিত পুরসভা, জেলা পরিষদের ক্ষমতারপাশা উল্টে গিয়েছিল রাতারাতি। দশকের পর দশক ধরে সংখ্যায় কম হলেও রাজ্য-রাজনীতিতে দলবদল নতুন নয়। কিন্তু 'দলবদল' ইস্যুটা এই সেদিনও খেলার মাঠেই একচেটিয়া ছিল। কিন্তু মুকুলের যাদুটোনার সৌজন্যেই তা গোটা বছরের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে পরিণত হয়েছে আয়ারাম গয়ারাম তকমায়। মুকুল অবশ্য নিজে বলছেন, এ সব আসলে বাংলায় গণতন্ত্র বাঁচানোর নিরন্তন সংগ্রাম। তাঁর আরও বক্তব্য, 'পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য রাস্তায় নেমেছিলাম একসময়। অনেকের সঙ্গে পথে দেখা হয়েছে বারবার । সময় বিশেষে তাঁরাও আমাদের সঙ্গে সামিল হয়েছেন এই সংগ্রামে।'  তৃণমূলের থাকার সময়েও মুকুলের মুন্সীয়ানায় দল ভাঙানোর অজস্র নজির আছে। গেরুয়া দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সেই আশায় বুক বেঁধেই মুকুলকে তাঁদের দলে সাদরে বরণ করেছিলেন বছর দেড়েক আগে। আসলে, তৃণমূলের অন্দরমহলে ফাটল ধরানোর মতো আরও কোনও যোগ্য নেতার সন্ধান তাঁদের কাছে ছিল না।  সপ্তদশ লোকসভা ভোটের ফল বের হওয়ার পরেই তৃণমূলের ড্রেসিংরুমে যে 'সন্দেহের আবহ' তৈরি হয়েছে, সেটাও বিজেপির কাছে কিন্তু কম প্রাপ্তি নয়। আর এটাও ঠিক, চতুর মুকুলের চালে এই বাংলায় তৃণমূলের একপ্রকার ঘরের চালা গড়ে গেছে। বলা যেতেই পারে, দল ছেড়ে একা মুকুল একাই ডুবিয়েছেন তৃণমূলের বিলাসী নৌকা।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours