Neheru
জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদঃ  প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর ভারত দর্শনকে, আজকের দিনে যিনি প্রকৃ্ত উত্তরাধিকার হিসেবে মানবেন তিনিই নিজেকে সাম্যের পথে  প্রকৃত সারথী হিসেবে খুজে পাবেন। আজ ২৭শে মে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর মৃত্যু দিবস। দিনটার সাথে ৫৫ বছর পূর্বের সেই দিনটার সাথে মিলাতে গিয়ে, যেন বুকের ভেতরে একটা যেন কাপুনি ধরিয়ে দিল, যেন একটা হিম সাগর নেমে আসছে। এখনো স্মৃতিপটে ভাসে, তিনি যখন চলে যাচ্ছেন তখন দলে তিনি ইতিমধ্যেই আর এস এস পন্থিদের দৌ্রাত্মে কার্য্যতঃ অবরুদ্ধ। তবু ভারত রাষ্ট্রটাই যেন সজন হারানোর শোকে মুহ্যমান। আজ যখন জাতির জীবনে সব রকম আধুনিকতার সমাধী হওয়ার মুখে, তখন ভারতীয় আধুনিকতার জনকের মৃত্যু দিবস পালিত হচ্ছে, অতি সংগোপনে রাজঘাটের পাশের সমাধিস্তলে গুটি কয়েক মানুষের উপস্থিতিতে। এই সংগোপনতা, এই বিচ্ছিন্নতা থেকেই – আধুনিকতা থেকে ভারতের মানুষের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ভয়ংকর এক গহব্বরকে আমি চিহ্নিত করতে পাই। এক টুকরো ক্ষীন আলো রেখায় যখন সেই রেখাচিত্রকে চিহ্নিত করতে যাই দেখতে পাই কোথায় ছিলাম, কোথায় আছি এবং কিভাবে সেই মহাত্মার ‘রামরাজ্যের মতোই’ এক অজানা অন্ধকার গহ্বরের অতলে যেন গড়িয়ে যাচ্ছি। হটাৎ করেই আবিস্কার করলাম, যেন সেকালে্, যে আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক জ্ঞান রেখা ধরে এক চরম বিড়ম্বনাময় জীবেন ধারায় টিকে গিয়েছিলাম, সেই আলোস্থম্ভের এক টুকরো রেখা যেন কোন এক প্রতিরুপ নিয়ে আমার অন্তরে ধরা রয়েছে। যখন নিজের মধ্যেই ভাবছিলাম নিজের জীবন রেখাধরে - কিভাবে নেহেরু-স্তালিন চুক্তির সুত্র ধরে প্রথমে কয়লায় এবং পরে ইস্পাত শিল্পে, শারিরীক ভাবে বেঁচে থাকার সন্ধানটা পেয়ে গিয়েছিলাম। বৌদ্ধিক পূর্ণতা যতটুকু এসেছে, তাকে যদি মানি শ্রমিক রাজনীতির দলগত রাজনীতিতে প্রসারনের মধ্য দিয়ে এবং সেখানে যখন সেকালে আমাদের জ্ঞানতত্বকে বুঝে নেওয়াটা অস্তিত্বের সর্ত বলে বিবেচিত হোত, জড় এর ক্রম বিবর্তনের সর্বশেষ রুপ হিসেবে ইতিহাসের ধারাবাহিকতাকে তন্ন তন্ন করে খুজতে হয়েছে, জওহরলালের ‘ভারতের খোজ’ এবং ‘জেল থেকে কন্যাকে’ পাঠানো চিঠির সমজ্ঞান মূল্যের অন্যকোন বই খুজে পাই নাই । অনেক পরে বুঝেছি, ইতিহাস বোধের দুনিয়ায় অতি প্রয়োজনীয় সাহিত্য হলেও, ‘রামরাজ্য’ ভাবনায় মসগুল প্রাচীন কংগ্রেস নেতৃ্ত্বের কাছে, আধুনিকতা যখন অতি পরিত্যজ্য বস্তু, তখন নেহেরুর পুস্তকদুটো বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য তালিকায় আসা সম্ভব ছিলো না।  এর মধ্যেই হটাৎ করেই অন্য একটা আলো যেন চোখ ধাঁধিয়ে চিত্তে জওহরলালহীনতায় ভারতীয় ইতিহাসের ধারাবাহিকতার সংকটটি তুলে ধরলো। সেই আলোর ঝলকে পাল তুলে যেন ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের ভিষ্মপিতামহকে, যিনি আন্দোলনের প্রবাহেই কবে আমাতে প্রধান গুরুর যায়গায় এসে গিয়েছিলেন, তিনিই আমার চিত্তে আরোহণ করলেন।( বহুকাল পূর্বে, কোন এক সন্ধ্যায় ছোট কথোপোকথনের স্মৃতি, নেহেরুহীন ধারাবাহিকতা বিচ্ছিন্ন ভারতবর্ষের কদর্য্যতা্র কার্য্যকারন সম্পর্কটি যেমন উন্মুক্ত করে দিলো, তেমনি নেহেরুবাদের সাথে ভারতে সাম্যের আন্দোলনের সম্ভাব্য অন্ত সম্পর্কটাও উন্মুক্ত করলো। আমি ভিষ্মপিতামহকে জিজ্ঞাসা করলাম, মাও সে তুং এর চিন এবং গর্বাচভের সোভিয়েত ইউনিয়ণ অনেক ভূল করলেও, চিন বেচে গেলো কিন্তু সোভিয়েত কেন ভেংগে গেল। ছোট্ট উত্তরঃ সোভিয়েত তার অতীত গৌ্রবকে ধুলায় মিশতে দিয়েছে, কিন্তু চিন কখনো তার অতীতকে ধূলায় নামতে দেওয়ার যে কোন প্রচেষ্টাকে প্রানপনে আটকে দিয়েছে। কথাটা আমি অন্যভাবে সংসদে তুলেছিলাম। মাও সে তুং যদি, কণফিউসাসকে নয়া চিনের ভাবাদর্শগতঁ ভিত্তিতে কনফিউসিয়াসকে রেখে থাকেন, চিন প্রজাতন্ত্র যদি সা নিয়াৎ সেনের নামে স্মৃতি সৌধ নির্মান করে দিতে পারেন, বিশেষ অদিবেশণ ডেকে কমিউনিষ্ট পার্টি মাদাম সান ইয়াতের মৃত্যুর পর, তাকে কমিউনিষ্ট পার্টীর সর্বোচ্চ নেতৃ্ত্বে প্রতিষ্টা দিতে পারেন, তবে কেন আমরা ভারতীয় কমিউনিষ্টরা (কংগ্রেস নিজেই যখন নেহেরুর অর্থনৈ্তিক, পঞ্চশীল এবং স্বাধীনতার স্বরুপকে অস্বিকার করেছে) কেন নেহেরু আধুনিকতার উত্তরাধিকারের দাবী করতে পারবে না। ২০১৯ এর পর, নেহেরুর ৫৫তম মৃত্যু দিবসে, তার স্মৃতির পাশে দাঁড়ীয়ে এই আবোলতাবল কথাগুলিই আমার মণকে নাড়া দিয়ে যাচ্ছিলো।




Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours