কাজল ভট্টাচার্য, বরিষ্ঠ সাংবাদিক, কলকাতাঃ (নায়িকার কাছে পরাস্ত দুঁদে আইনজীবী। বামফ্রন্ট প্রার্থীর এই হার কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না কমরেডরা। সোশ্যাল মেডিয়াতেও ক্ষোভের ঢেউ। যাদবপুরের সেই সাতসতেরো নিয়েই প্রতিবেদনটি লেখা।)
ভরসা নেই মানুষের ওপর।
অথচ মুখে সাম্যবাদ।
শ্লোগানে সমাজবাদ।
বহুদিন পর ফের দেখা গেল সেই চৌত্রিশ বছরের ঔদ্ধত্য, দাম্ভিকতা। মিমি চক্রবর্তীকে সংসদে পাঠিয়ে
যেন গুরুতর অপরাধ করে ফেলেছে যাদবপুর।
বামপন্থীদের সঙ্গে মতাদর্শের ব্যাপক ফারাক মিমির দল তৃণমূল কংগ্রেসের। এই তীব্র মিমি-বিরোধিতার কারণ কি এই একটাই? না, কখনোই নয়। সোশ্যাল মেডিয়ায় উপচে পড়ছে বিশেষত সিপিএম কমরেডদের গোঁসা। আর এই গোঁসার মধ্যেই লুকিয়ে সিপিএমের সেই চিরপরিচিত দম্ভ।
বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য, একজন বামফ্রন্ট প্রার্থী শেষ পর্যন্ত হারলেন কিনা মিমি চক্রবর্তীর কাছে? সোশ্যাল মেডিয়ায় সিপিএম সমর্থকদের অনেকেই তাঁদের ক্ষোভের কারণটা লুকিয়ে রাখেননি। বরং সরাসরি প্রকাশ করে বসেছেন।
টলিউডের ইনডাস্ট্রিতে বেশ নামডাক আছে মিমির। তবে তাঁর রাজনৈতিক বিচক্ষণতা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতেই পারেন। বাংলা সিনেমার এক তরুনী নায়িকাই শেষ পর্যন্ত অনায়াসে হারিয়ে দিলেন বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের মতো বামপন্থী রাজনীতির এক বাস্তুঘুঘুকে!
শুধু হারই নয়, ব্যাপারটা অন্যরকম। নির্বাচনী কুরুক্ষেত্র যখন, হারজিত তো থাকবেই। কিন্তু মোহনবাগান যদি পাড়ার ক্লাবের সঙ্গে ফাইনাল খেলায় আট গোল খেয়ে মাঠ ছাড়ে তবে তো মুশকিল। হারের সঙ্গে জড়িয়ে যায় এক ব্যাপক বেইজ্জতি। এক জোর ধাক্কা লাগে দলের অহং বোধের আবেগে। ইস্টবেঙ্গলের কাছে মোহনবাগান হারলে হারটা, হারের মধ্যেই নাহয় সীমাবদ্ধ থাকত। কিন্তু তা বলে ওই পাড়ার ক্লাবের কাছে?
যাদবপুরে এমনই এক অসম ম্যাচ দেখল বাংলা। আর তাতেই খেপে লাল সিপিএম ভক্তবৃন্দ। রাজ্যের আরও উনচল্লিশজন লোকসভাপ্রার্থী নিয়ে তাঁরা তো একবারের জন্যও মুখ খুলছেন না? ওই প্রার্থীদের হাল তো আরও খারাপ। একেবারে লেজে-গোবরে। সবার জামানত বাজেয়াপ্ত। একমাত্র ব্যতিক্রম বিকাশবাবু। সেক্ষেত্রে কমরেডরা কি একবার ধন্যবাদ দিতে পারতেন না যাদবপুরকে? সেখানে অন্তত বিকাশবাবুর শেষরক্ষা হয়েছে। অন্তত তিনি রক্ষা পেয়ে গেছেন, জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ার বেইজ্জতি থেকে।
সিপিএম কমরেডদের মতোই পাঁচ বছর আগের সাধারণ নির্বাচনে একইরকম অহঙ্কার দেখিয়েছিলেন সনিয়াকন্যা প্রিয়াঙ্কা ভাডরা।
2014 সালের সাধারণ নির্বাচন। এক সাক্ষাৎকারে প্রিয়াঙ্কার কাছে সাংবাদিকরা জানতে চেয়েছিলেন রাহুলের কাছে পরাজিত বিজেপিপ্রার্থী স্মৃতি ইরানির কথা। সেদিন প্রিয়াঙ্কাও কমরেডদের মতোই তাচ্ছিল্য করে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিলেন- স্মৃতি ইরানিটা কে?
ঠিক পাঁচবছর পর তাঁর প্রশ্নের জবাব পেয়ে গেলেন প্রিয়াঙ্কা। রাহুলের থেকে আমেঠি ছিনিয়ে নিলেন সেই স্মৃতি। মিমি তো তাও বড়পর্দার নায়িকা। বিজেপি'র স্মৃতি তো তাও না। ছিলেন বোকাবাক্সের এক নায়িকা। অথচ তিনি গদি উলটে দিলেন খোদ কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধির।
এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই একটা প্রশ্ন তোলা যায়, লড়াইটা কি তাহলে ব্যক্তিবিশেষের? দুই দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়। যদি লড়াইটা হয় রাজনৈতিক, তাহলে বিকাশবাবু কার কাছে হারলেন সেটা নিশ্চয়ই প্রধান আলোচ্য বিষয় হতো না।
রাজনীতির যতটুকু জানি, তাতে লড়াইটা হয় মতাদর্শের। সেক্ষেত্রে বিকাশবাবু যাঁর কাছেই হারুন না কেন, ব্যাপারটা একই।
রাজনীতির অন্য কোনও বাস্তুঘুঘুর কাছে বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য হেরে গেলে কি বাস্তবে খানিকটা সান্ত্বনা পেতেন কমরেডরা? তাহলে কি সিপিএম কর্মী, সমর্থকদের ক্ষোভের আগুনে পুড়তো না যাদবপুর?
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours