unisher nirbachon
কাজল ভট্টাচার্য,প্রবীন বিশ্লেষকঃ  চার পুরুষের রাজত্ব। জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গাঁধি আর রাজীব গাঁধি, এঁরা তিনজনই প্রয়াত। এরপরের নামটা অবশ্যই সনিয়া গাঁধির। যিনি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বকলমায় ভারতবর্ষের রাজপাট চালাতেন। পাটিগনিতের হিসেবে গাঁধি-নেহরু পরিবারের এই তিনপুরুষ এবং এক মহিলা স্বাধীন ভারতে ক্ষমতার ভরকেন্দ্রে ছিলেন মোট সাঁইত্রিশ বছর তিনশো তিন দিন। স্বাধীনোত্তর ভারতবর্ষের বয়স বাহাত্তর বছর পুরো হতে চললো। এরমধ্যে কংগ্রেস রাজত্বকালের গোটা সময়টা ছিল, ছাপ্পান্ন বছর একশো উনপঞ্চাশ দিন। গাঁধি-নেহরু পরিবারের বাইরেও প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন গুলজারিলাল নন্দা, লালবাহাদুর শাস্ত্রী, পিভি নরসিমা রাও ছাড়াও মনমোহন সিং। এই দীর্ঘ ধারাবাহিকতার পরেও দারিদ্রমোচন হলো না। উপরন্তু কংগ্রেসের হাতছাড়া হলো দিল্লির মসনদ। এবার সেই হারানো গদি পুনরুদ্ধারে ময়দান কাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন, গাঁধি- নেহরু পরিবারের পঞ্চম পুরুষ রাহুল গাঁধি। ফের সেই বস্তাপচা স্বপ্নফেরি- গরীবী হটাও। ভারতকে "গরীবী হটাও" এর স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন রাহুলের ঠাকুমা প্রয়াত ইন্দিরা গাঁধি। 1971 সালের লোকসভা নির্বাচনে বাজিমাত করেছিল ওই শ্লোগান। প্রয়াত রাজীব গাঁধির হাতঘুরে এখন তা পুত্র রাহুলের সম্বল। গত ছাপ্পান্ন বছরেরও বেশি সময়ে কংগ্রেস যা করতে পারেনি, রাহুলের প্রতিশ্রুতি, ক্ষমতায় এলে তিনি তা আগামী পাঁচ বছরেই করে দেখাবেন। রাহুলের প্রয়াত পিতা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধির গাদাগুচ্ছের শ্লোগানগুলির মধ্যে একটি ছিল- হম সুনহরে কল কী অউর বড় রহে হ্যায়। আমরা উজ্জ্বল আগামী কালের দিকে এগোচ্ছি। এগোতে এগোতে আমরা পৌঁছলামটা কোথায়? কেনই বা আজও রাজীবপুত্র রাহুলকে সেই বস্তাপচা শ্লোগান দিতে হয়- গরীবী হটাও? কারণ, "চৌকিদার চোর হ্যায়।" সোজা জবাব রাহুল গাঁধির। ভোটপ্রস্তুতির আগে থেকেই অনবরত বলে চলেছেন রাহুল। রাফাল বিতর্কের সূত্র ধরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে কোণঠাসা করতে চাইছেন তিনি। রাহুলের শয়নে স্বপনে এখন শুধুই চৌকিদার। বিপজ্জনক প্রবণতা। পাঁচ বছর আগের লোকসভা নির্বাচনের ইস্যু মনে করুন। সেবার মূল ইস্যু ছিল অযোধ্যা রামমন্দির। এবার কিন্তু সেই ইস্যু থেকে দু'পক্ষই সরে এসছে। বিজেপির সরে আসার কারণটা বোঝা যায়। পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার পরেও মন্দির তৈরি প্রতিশ্রুতিতেই আটকে আছে। তাই ও নিয়ে যতটা নাড়াঘাঁটা না করা যায় ততই মঙ্গল। কিন্তু কংগ্রেস চুপ কেন? এখানেই লুকিয়ে রহস্য। গত বছরের শেষদিকে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের সময় এক অচেনা রাহুলকে দেখেছিল ভারত। গলায় উপবীত, কোঁচা মেরে ধুতি, কপালে তিলক কেটে মন্দিরে মন্দিরে তিনি হত্যে দিয়ে বেড়িয়েছিলেন। সোজা কথায়, 'সফট হিন্দুত্বে'র রাস্তায় পা বাড়িয়েছে কংগ্রেস। তাই আজ রামমন্দিরের জায়গায় ইস্যু রাফাল। আর সেই সূত্র ধরেই "চৌকিদার চোর হ্যায়।" অন্যদিকে নরেন্দ্র মোদি। দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছেন, চৌকিদার সদাসতর্ক। দুষ্টকে উচিত শাস্তি দিতে প্রস্তুত। শুনিয়েছেন সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, মিশন শক্তির মতো নানা বীররসের কাহিনী। আর চাপা পড়ে গিয়েছে নোটবন্দীর লাভ-লোকসান, কালোটাকা উদ্ধারের গল্প। আজ লড়াই চলেছে কংগ্রেসের দুর্নীতির অভিযোগ বনাম বিজেপির বীররসের লড়াইয়ের মধ্যে। মানুষের পছন্দ কোনটা? সময় অবশ্যই তার স্পষ্ট জবাব দেবে। নরেন্দ্র মোদিকে দিল্লির গদি থেকে উচ্ছেদ করতে, রাফেল কেলেঙ্কারিকে হাতিয়ার করেছেন রাহুল। বয়সে যাঁরা প্রবীন, গোটা ঘটনার মধ্যে অতীতের এক ছায়া দেখতে পাবেন। গত শতাব্দীর আটের দশকের 'বফর্স কেলেঙ্কারি'। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধির বিরুদ্ধে দুর্নীতির ধূঁয়ো তুলে দিল্লির মসনদ থেকে উৎখাত করেছিল বিরোধী শিবির। 1989 সালের ডিসেম্বরে, দেশের অষ্টম প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন রাজা বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং। ওই ঘটনাই কি রাহুলের অনুপ্রেরণা? তিনি ধরেই নিয়েছেন, আর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে জাতীয়তাবাদের খিচুরি পরিবেশন করলেই মোক্ষলাভ? অন্যদিকে নরেন্দ্র মোদি। পুলওয়ামা কান্ডের বদলা, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, মিশন শক্তির ঘটনা দারুণ ভাবে কাজে লাগাচ্ছেন তিনি। সব মিলিয়ে একবারে দেশের আদর্শ নায়ক। বীরত্বের পরাকাষ্ঠা। আরেকটি সহজ সত্য হলো, যে দল যত বেশিদিন ক্ষমতায় থাকে, তার কলঙ্কও তত বেশি। কংগ্রেসও তার ব্যতিক্রম না। তাই মোদির দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলার আগে, রাহল নিজেও একবার আয়নার সামনে দাঁড়ালে ভাল করতেন। বিরোধী শিবিরের অভিযোগের সারবত্ত্বা ঠিক কতখানি, তা বোঝা গিয়েছিল বফর্স মামলাতেই। মিথ্যা প্রমাণ হয়েছিল সেই অভিযোগ। ক্লিনচিট পেয়ে গিয়েছিলেন রাজীব গাঁধি। তবে ততদিনে তিনি স্বর্গবাসী। কিন্তু মনমোহন জমানার কোল স্ক্যাম, স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারির মতো মারাত্মক ঘটনার কথা রাজীবপুত্রও নিশ্চয়ই ভুলে মেরে দেননি? মোদির বিরুদ্ধে রাহুল আজ যে অভিযোগগুলি তুলছেন, তারমধ্যে কতটা ভেজাল কতটা খাঁটি, তা প্রমাণসাপেক্ষ। তবে কার কথায় মানুষ ভরসা রাখছেন অঙ্কের হিসেবেই তা বোঝা যাবে নির্বাচনের ফল ঘোষণা হলেই।
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours