Child rep
চন্দ্রাবলী বন্দ্যোপাধ্যায়, ম্যানেজিং এডিটর, দ্য অফনিউজঃ বিভিন্ন দেশে শিশুরা এখন যৌন নির্যাতনের শিকার। প্রতিবছর বহু শিশু ধর্ষিত হয়। শিশুদের প্রতি এমন নির্যাতনের সংখ্যা হঠাৎ করে বাড়ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা। যারা এসব ঘটনার শিকার, অর্থাৎ সেই শিশুদের যৌন নির্যাতন কাকে বলে, আর তাদের নিজের প্রতি তা ঘটছে কিনা, সেটি শিশুরা কীভাবে চিহ্নিত করবে, এমন স্পর্শকাতর বিষয় অভিভাবকেরা ছোট শিশুদের কীভাবে শেখাতে পারেন? বিষয়টা জানানো দরকার কিন্তু তা কতটা মুশকিল । সাত ও দশ বছর বয়সী ছোট শিশুদের এমন জটিল বিষয় তিনি কীভাবে জানাবেন? ওদের শেখাতে হবে কোন স্পর্শটা ভালো আর কোনটা খারাপ। বাচ্চাদের সাথে একটা ওপেন রিলেশনশিপ তৈরি করার চেষ্টা করতে হবে । যাতে ওরা মাকে অথবা বাবাকে সব কিছু বলতে পারে। তাদের শেখাতে হবে কেউ যদি তাদের সাথে যেতে বলে বা কোনো খাবার জিনিস দিতে চায় কিংবা বলে মা ডেকেছে , কখনোই যাবে না।" বাচ্চাদের এই বিষয়টি বোঝাতে চেষ্টা করেতে হবে। কিন্তু একটি শিশুর মাথায়, যৌন নির্যাতনের ধারণাটা অনুপস্থিত। বাচ্চারা আপত্তিকর বিষয়টিও সে বোঝে না। তার কাছে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা কঠিন একটি শিশুকে তার শরীরের তিনটি জায়গা সম্পর্কে জানাতে হবে। তার ঠোঁট, গোপনাঙ্গ ও পায়ুপথ। তাকে জানাতে হবে এই তিনটা তার বিশেষ জায়গা। এখানে বাবা মা স্নান করানো বা পরিষ্কার করার সময় ছাড়া অন্য কেউ স্পর্শ করতে পারবে না। কেউ সেটি করলে সে কি করবে সেটিও তাকে জানানো। সেটা বাবা মাকে যে জানাবে সেটি শেখাতে হবে। এতে বাচ্চারা সচেতন থাকবে। একটি ছোট বাচ্চাকে বিষয়টি বোঝানো খুব কঠিন। আর সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ তো আমাদের নেই। দেশের বাইরে মা বা অভিভাবকদের ট্রেইন করা হয়। সচেতনতামূলক অনেক বার্তা থাকে। বাচ্চাকে ভালো আদর, খারাপ আদর বিষয়টির পার্থক্যটা বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে। বিষয়টি জানানোর কাজ সঠিকভাবে করার জন্য অভিভাবকদের আগে নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। জিনিসটা করতে হবে একটু খেলার ছলে, ছবি এঁকে অথবা গল্প করে ধীরে ধীরে ধারণাটা তার মাথায় দিয়ে দিতে হবে। বড় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে মুখে বলা যেতে পারে। কিন্তু শিশুরা সবকিছু ভুলে যায়। তাদের মধ্যে সন্দেহ কম, তাই তাদের বিষয়টি মনে করিয়ে দিতে হবে। শিশুর আচরণ পরিবর্তন খেয়াল করতে হবে। বাচ্চার আচরণ থেকেও অনেক সময় অনেক কিছু বোঝা যায়। সে যদি কাউকে দেখে ভয় পায়, কারো কোলে যেতে না চায়, তাকে জোর করা উচিৎ নয়। যে বাচ্চা বিছানা ভেজানো বন্ধ করে দিয়েছে, সে যদি হঠাৎ আবার তা করে। সে যদি ভয় পেয়ে চমকে ওঠে বা রাতে দু:স্বপ্ন দেখছে, এমন পরিবর্তন খেয়াল করতে হবে।" শিশুর কথা শুনতে হবে ও তাকে বিশ্বাস করতে হবে আমাদের দেশে শিশুদের কথা না শোনার একটি প্রবণতা রয়েছে। বাচ্চারা যদি এই বিষয়ক কিছু কখনো বলে সেটিকে সিরিয়াসলি নিতে হবে, বাবামাকে বিশ্বাস করতে হবে। কারণ বাচ্চারা যতরকম গল্প বানিয়ে বলুক না কেন এই বিষয়ে বানিয়ে কথা বলার ক্ষমতা তার থাকার কথা নয়। অনেক বাবা মা বিষয়টি বিশ্বাস করতে চান না, মানতে চান না। অনেক সময় বলেন তুমি বানিয়ে বলছ। এরকম হলে শিশুরা তার বলার জায়গাটি হারিয়ে ফেলে। এতে নির্যাতক ব্যক্তি আরও সুযোগ পায়। শিশুকে কার কাছে দিচ্ছেন, বাবা মায়েদের সেদিকে নজর রাখা উচিত। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্য, আত্মীয়, প্রতিবেশী অথবা ঘনিষ্ঠদের দ্বারাই যৌন নির্যাতনের ঘটনা বেশি ঘটে। কিন্তু হঠাৎ করে বাচ্চাদের সচেতন করতে গিয়ে নিজের পরিবারের সদস্য অথবা আত্মীয়দের সন্দেহ করা শুরু করবেন কিনা সে ব্যাপারেও ভাবেন অনেকে। সামাজিক সম্পর্ক নষ্ট করার ভয়ে অনেক সময় এগুলো নিয়ে সবাই চুপ করে থাকে। কিন্তু এগুলোকে নিয়ে পরিবারের সবাইকে একসাথে বসে কথা বলতে হবে যে আমাদের শিশুরা কারো কাছে নিরাপদ নয়। এই আলোচনাটা যদি পরিবারে খাবার টেবিলে হয়ে যায়, তাহলে কিন্তু সকলেই এই বিষয়টা সম্পর্কে সচেতন থাকে। সম্প্রতি "সত্যমেব জয়তে" নামক এক প্রোগ্রামে, অভিনেতা আমির খান, কয়েকটি পর্বে বাচ্চাদের বেশ কিছু প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন, বাচ্চারা কি ভাবে নিজেদের নিরাপদে রাখবে যৌনতার শিকার থেকে।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours