vromon kahini
চন্দ্রাবলী বন্দোপাধ্যায়, ম্যানেজিং এডিটর, দ্য অফনিউজঃ অসম্ভব সুন্দর দেখতে অর্কিড ফুল, বরফে ঘেরা অসাধারণ সুন্দর পাহাড়, অপূর্ব ঝরনা ঘেরা পাহাড়। অনেক সাধুদের একসাথে কাদের বাঁশির ধ্বনি এবং অতিথি পরায়ণতা আমি বলছি অরুণাচল প্রদেশের কথা। অরুণাচল প্রদেশ ভারতের এমন একটা জায়গা যেখানে সর্ব প্রথম সূর্যোদয় হয়, অরুণাচল প্রদেশ ‘প্রকৃতির গুপ্তধন’ হিসাবে পরিচিত। অরুণাচল প্রদেশ এক আকর্ষণীয় আবেগপ্রবণ পর্বত চূড়া, চকমকে নদী ঘেরা একটি অঙ্গরাজ্য। অরুণাচল প্রদেশ ‘ভোরের আলোকিত পাহাড় ভূমি’ হিসেবে পরিচিত। অরুণাচল প্রদেশ হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত। তাছাড়া, অরুণাচল প্রদেশের আকর্ষণীয় জায়গাগুলি হল, বৌদ্ধ মন্দির,জওহরলাল নেহেরু রাষ্ট্রীয় মিউজিয়াম, ইটা দুর্গ। বৌদ্ধ মন্দির একটি স্তূপ যা বহুলাংশে অরুণাচল প্রদেশের তিব্বতী প্রভাবকে প্রতিফলিত করে। বৌদ্ধ মন্দিরের জন্য ইটানগরকে একটি ঝকঝকে শহর লাগে। আর, জওহরলাল নেহেরু রাষ্ট্রীয় মিউজিয়ামের ঝুলিতে রয়েছে শিল্প এবং স্থাপত্যের বিস্ময়কর সংগ্রহ ,বাদ্যযন্ত্র, ধর্মীয় নিবন্ধ, বস্ত্র, অলঙ্কার, অস্ত্র ইত্যাদি। ইটা দুর্গ হলো, ইটা ফোর্ট একটি প্রাচীন দুর্গ যা পেপাম পারে জেলায় অবস্থিত। এই দুর্গের তিন পক্ষের তিনটি দরজা অহম শাসকদের দ্বারা নির্মিত করা হয়েছে বলে মনে করা হয় এবং এটা অনুমান করা হয় যে এই দুর্গ নির্মাণ করতে প্রায় ৮০ লক্ষ ইট এবং ৪৫ ঘনমিটার পাথর ব্যবহার করা হয়েছিল। এছাড়া মৌলিং জাতীয় উদ্যান, ভীষ্মকনগর দুর্গ, বৌদ্ধগুম্ফা, নামদফা জাতীয় উদ্যান, মালিনীথান, টিপি অর্কেডারিয়াম, পরশুরাম কুন্ড ইত্যাদি বিখ্যাত।
 সুউচ্চ শান্ত পর্বতের পশ্চাতে সবুজ বন, রঙিন উপজাতিদের কৌতুহলী সামাজিক আচার এই জমিকে এক বর্ণনামূলক রূপ দিয়েছে। কলুষমুক্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, উপজাতিদের আকর্ষণীয় জীবন শৈলী এবং পুরাণ অরুণাচল প্রদেশের আকর্ষণীয় বস্তু। ইট দিয়ে নির্মিত ইটাদূর্গ, ঐতিহাসিক দুর্গের নামকরণ চৌদ্দ থেকে পনেরো শতাব্দী আগে হয়েছে। রাজ ভবন, রাজ্যপালের সরকারি বাসভবন, জওহরলাল নেহেরু রাষ্ট্রীয় মিউজিয়াম, কিংবদন্তি গঙ্গা লেক (গ্যাকার সিন্নি) হল এখানকার পরিদর্শনমূলক স্থান। বোমডিলা (সাড়ে আট হাজার ফুট) এটি মোনপা, শেরদুকপেন, আকা, মিজি এবং বিগান (খাওয়াস) –এর মত বিভিন্ন উপজাতির আবাস। রঙিন গোম্ফার উজ্জ্বল উপস্হিতির মধ্যে এটি একটি আদর্শ হিমালয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে। তাওয়াং, আঁকাবাঁকা পার্বত্যাঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত অরুণাচল প্রদেশের পর্যটক আকর্ষণের মধ্যে অন্যতম। এইখানের চারশো বছর বয়সী প্রাচীন তাওয়াং মঠ, ষষ্ঠ দালাই লামার জন্মস্থান। এই মঠে পবিত্র বৌদ্ধ লিপির স্বর্ণ অক্ষরবিশিষ্ট প্রতিলিপি রয়েছে। পরশুরাম কুন্ড, প্রাচীন ভারতীয় পুরাণ বিখ্যাত প্রাচীন ভারতের এক মহান ঋষি, পরশুরাম, লোহিত নদীর ধারে তাঁর মাতৃহত্যার পাপ ধুয়ে ছিলেন, যা পরে পরশুরাম কুন্ড হিসাবে পরিচিত হয়।
জানুয়ারী মাসে আয়োজিত হয় পরশুরাম মেলা। ভীষ্মকনগর, পুরাণ মতে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার অনেক স্ত্রীদের মধ্যে একজন, রুক্মিণীকে তার পিতা ভীষ্মক যিনি এই রাজ্য শাসন করতেন – তাঁর কাছ থেকে নিয়ে পালিয়ে এসেছিলেন। খনন বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে জানা যায় যে এখানে বহু আগে আর্যদের বসবাস ছিল। মালিনীথান, মালিনীথান ৭ থেকে ৮ শতাব্দী পুরানো এক মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ। খনন বিশেষজ্ঞদের এক দল ইতিমধ্যে একটি মন্দিরের সুসজ্জিত বুনিয়াদ, দেব-দেবীর প্রতীক, পশু এবং ফুলের নকশা, খোদাই করা স্তম্ভ এবং অজ্ঞাত অতীতের স্মারক প্যানেলের উদঘাটন করেছেন।আকাশিগঙ্গা, এই স্থানটিরও পৌরাণিক গুরুত্ব আছে। উন্মত্তবৎ ভগবান শিব যখন তাঁর স্ত্রী পার্বতীর মৃতদেহ বহন করছিলেন, তখন প্রভু বিষ্ণু সুদর্শন চক্র দিয়ে তার শরীরকে কেটে টুকরো টুকরো করে দেন। তার মধ্যে একটি টুকরো এই এলাকায় পরে এবং তারপর থেকে এটি একটি স্বর্গীয় স্থান বলে বিবেচিত হয়। এই স্থান থেকে ব্রহ্মপুত্র নদীর এক অত্যন্ত চমৎকার দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। অরুণাচল প্রদেশের বন্যপ্রানী অভয়ারণ্য, সাতটিরও অধিক বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, চারটি জাতীয় উদ্যান। পাখুই বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, সেইজোসাইটানগর বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, নাহারলাগুনডঃ ডি ইরিং মেমোরিয়াল বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, পাসিঘাটমিহাও বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, রোইংকামলাং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, মিয়াওঈগল নেস্ট বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, সেইজোসাকেন বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, আলোং, ইত্যাদি। অরুণাচল প্রদেশের জাতীয় উদ্যান নামদফা জাতীয় উদ্যান (টাইগার প্রকল্প), মিয়াওমৌলিং জাতীয় উদ্যান , জেঙ্গিংসেসা অর্কিড অভয়ারণ্য, টিপিদিহাং-ডিবাং জীবমণ্ডল সংরক্ষণ, ডিবাং উপত্যকা ইত্যাদি। এই অঞ্চলে কয়েকটি বিভিন্ন রকমের বন্য প্রাণী দেখতে পাওয়া যায়, যেমন – হাতি, বাঘ, গৌড়, খেঁক, হরিণ, কালো ভালুক ও লাল পান্ডা। পাঁচটি প্রধান নদী , যথা – কামেং, সুবনসিড়ি, সিয়াং, লোহিত এবং টিরাপ ব্রহ্মপুত্র থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। ব্রহ্মপুত্র নদ এখানে দিহান নামে পরিচিত।
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours