Giant  Spider
অমর কুমার নায়ক, প্রকৃতি প্রেমীঃ ঘরের মধ্যে থেকে আনাচে কানাচে ছোটো থেকে বড় অনেক ধরণের কীটপতঙ্গের বাস। কিছু পতঙ্গ যেমন প্রজাপতি, মথ, কাঁচপোকা ইত্যাদিদের ভয়ের চোখে মোটেও দেখিনা। আবার কিছু জীব আছে যাদের সম্পর্কে ছোটবেলা থেকে আমাদের ধারণা গেঁথে যায় তাদের মধ্যে সর্বাগ্রে মাকড়সা। অথচ এদের অধিকাংশ আমাদের ক্ষতির কারণ তো নয়ই বরং অনেক ক্ষতিকর পোকা খেয়ে আমাদের উপকারই করে। মাকড়সার বেশকিছু প্রজাতি আমাদের বাড়ীর মধ্যে আমাদের সাথেই থাকে, এদের মধ্যে অন্যতম লাফাড়ু মাকড়সা। কিন্তু আজ যে মাকড়সাটি সম্পর্কে জানাবো সেটি অবশ্য বাড়ীর থেকে একটু দূরে ঘন ঝোপজঙ্গলে থাকতে বেশী পচ্ছন্দ করে। এদের বিশাল আকারের জাল আর বড়সড় দেখতে হওয়ার কারণে আমারা এদের প্রতি বেশ ভয়ে থাকি। ‘জায়ন্ট উড স্পাইডার’, নাম থেকে যে বিষয়টি স্পষ্ট হয় তা হল এরা আকারে দৈত্যাকার এবং কাঠের বা জঙ্গলের অধিবাসী। মাকড়সা শুধুমাত্র তাদের পা ও চোখ সংখ্যা (আট) বা রঙিন দৈহিক গঠনের জন্য আকর্ষক নয়, তার থেকেও বড় বেশী আকর্ষণীয় এদের তৈরি জাল। জালের কাজ যে শুধু বাসস্থান হিসাবে তা নয় তার থেকেও বড় কাজ শিকার ধরা, খাবার সংগ্রহ করে রাখা ইত্যাদি। যদিও সব মাকড়সা জাল বুনতে পারেনা। ইংরাজি নাম - Giant Wood Spider এবং বিজ্ঞান সান্মত নাম Nephila pilipes , স্ত্রী মাকড়সার বড়সড় কালো শরীরে সোনালী রঙের দাগ এদের দৈহিক গঠনকে সুন্দর করে তুলেছে। পুরুষ মাকড়সার গায়ের রঙ লাল এবং আকারে ছোটো। এরা সারাজীবন গাছে কাটিয়ে দেয়। সমগ্র এশিয়া মহাদেশে এদের পাওয়া যায়। বড় গাছের বিভিন্ন ডালে কিছুটা জায়গা ছেড়ে ছেড়ে অনেকগুলি কলনির মত বাসা তৈরি করে এরা বাস করে। জ্যান্থুরেনিক অ্যাসিডের উপস্থিতির জন্য এদের শরীরে হলদে তন্তু গুলি দেখা যায়। এরা সবথেকে শক্ত-পোক্ত জাল তৈরি করতে পারে, বলা যেতে পারে এদের জালই এদের আনন্য করে তুলেছে অন্য মাকড়সাদের থেকে। এদের জালের গঠন খুবই জটিল, সাধারনত এই জাল গুলি তির্যক ভাবে তৈরি হয় এবং খানিকটা বিক্ষিপ্ত প্রকৃতির হয়। জালকে রক্ষা করতে এরা ব্যারিকেটের মত বানায়। জাল পুরনো হতেই এরা নতুন জাল তৈরি করে ও পুরনো জাল ছেড়ে নতুন জালে বসবাস শুরু করে। এদের জালের সিল্ক এক উন্নত মানের ফাইবার দিয়ে তৈরি যা খুব শক্ত, তাপরোধী হয় এবং বৃষ্টির জলও রোধ করতে পারে। এই ফাইবারের সাথে তুলনা করা যেতে পারে মানুষেরর তৈরি সিন্থেটিক ফাইবার কেভলারের। খাবারের পর্যাপ্ততা, বসবাসের উপযুক্ত গাছ ও কম প্রতিযোগিতামূলক পরিস্থিতি, আলোর তীব্রতা, উষ্ণতা, বাতাস, বৃষ্টি ও আর্দ্রতা। এইসব উপাদান ঠিক ঠাক পেলে এরা স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠতে পারে এবং এদের বংশচক্র সঠিক পথে চালিত হয়।। এদের খাদ্য তালিকাতে ছোট ছোট পোকা থেকে শুরু করে ফড়িং, গঙ্গাফড়িং, প্রজাপতি, ম্যানটিস্ প্রভৃতি পড়ে। মাকড়সা সম্পর্কে ভয়ের আসল কারণ এদের সম্পর্কে আমাদের ভ্রান্ত ধারণা। আমরা মনে করি যে সব মাকড়সাই বিষাক্ত ও আমাদের জন্য ক্ষতিকর। আসলে বিষ সব প্রাণীরই থাকে অল্প বিস্তর, তবে তা তাদের নিজেদের প্রয়োজনে যেমন আত্মরক্ষায় বা শিকার করতে ও সেই শিকারকে হজম করতে ব্যবহৃত হয়। জায়েন্ট উড স্পাইডারের বিষ নিউরোটক্সিন প্রকৃতির হয় অর্থাৎ এর প্রতিক্রিয়া স্নায়ুতে যেমন স্থানীয় জ্বালা, যন্ত্রণা, লাল হয়ে যাওয়া, চুলকানি ও ফুলে যাওয়া যার স্থায়িত্ব খুব বেশী হলে দু-দিন। অর্থাৎ মানুষের উপর এদের প্রভাব সীমিত। তাই মাকড়সা দেখলেই ঝাঁটা হাতে ছোটাটা নিতান্তই মুর্খামির কাজ। এই পৃথিবীতে প্রতিটি জীবেরই বাঁচার অধিকার আছে তাই মানব সভ্যতাকে আরো কিছুদিন টিকিয়ে রাখতে আসুন অঙ্গিকার বদ্ধ হই আমাদের চারপাশকে বাঁচিয়ে রাখতে।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours