সুবীর পাল, এডিটর, দ্য অফনিউজঃ  স্তনের আমি স্তনের তুমি, সেখানেই তো সমার্থক ইন্দু হরিকুমারের অক্ষর তুলি।
অপ্রত্যাশিত ছোট স্তন। কিছু মেয়েদের হীনমন্যতার যথেষ্ট কারণ। একাংশ হতাশ পুরুষের নিমাইয়ের টিপন্নীতে তাঁরা ক্লান্ত। 
কিন্তু তা যদি হয় সুডোল স্তন। বহু মহিলার বডি ল্যাঙ্গুয়েজেই যেন থাকে উচ্ছ্বাস। লোলুপ চ্যাংরা পুরুষ নিজের ঠোঁট চেটে বলেন, উফ কি ডাসা মাল।
নারীরাও যথেষ্ট অনুভব করেন, তাঁদের বেবি বাম্প হল এমন এক অঘোম আকর্ষণ আধার যা সিংহভাগ পুরুষকে কুপোকাত করার পক্ষে যথেষ্ঠ। একইসঙ্গে প্রাকৃতিক ভাবেও এই নিরন্তন অনুভুতি উপেক্ষা করা প্রায় অসম্ভব।
ব্যাস রক্ষণশীলদের গেল গেল সমালোচনা শুরু হবে নিশ্চয়। ছূঁকছুঁকে লুকোচুরি মনে গাইতে হয়তো ইচ্ছে করবে,  চোলি কে পিছে কা হ্যায়, কিন্তু প্রকাশ্যে রক্ষণশীল নেটিজেনরা সুর জুড়ে দেন, কে তুমি নন্দিনী? আগে তো দেখিনি চলেছ এই পথে রূপে যে রঙ্গিনী।
তবু লাজবতী রিনিঝিনির শৃংখল মুক্ত মধ্য বয়স্কা ভারতীয় মহিলা ইন্দু হরিকুমার কিন্তু পারফেট ব্যতিক্রম আইকন। একসময় তিনিও ছোট স্তনের অধিকারিনী ছিলেন। তিনি বলেছেন, টিন এজার বয়সে এক সময়ে তাঁর মনে হতো তিনি তাঁর অপুষ্ট স্তনের কারণে কোনও পুরুষের ভালবাসার যোগ্য নন। এমনকি তিনি ভালবাসা প্রাপ্তির লোভে বেপরোয়া ভুল সম্পর্কেও জড়িয়ে যেতে বাধ্য হন। যদি ভালবাসার ভান্ডার একটু পূর্ণ হয়। এমনই ক্ষুদ্র  স্তন সমস্যায় তিনি একদা দিশেহারা হয়ে যান। আজ তিনি মধ্য ত্রিশের নারী। ফিগারও দারুন লুক্রেটিভ। এই নিমাই উপমা থেকে দিল হ্যায় মেরা আখ্যায় আসতে তাঁকে অনেক কঠিন পথ অতিক্রম করতে হয়েছে। নিজের জীবনে উপলব্ধি করেছেন স্তনের অপরিসীম মান্যতার অনুভুতিগুলি। তাই মহিলাদের এই চিরন্তনী এক সমস্যাই তাঁকে পথ দেখায় সমাজের উল্টো স্রোতে সাঁতার কাটার। 
বছর খানেক আগের কথা। ইনস্টাগ্রামে শিল্পী ইন্দু হরিকুমার আচমকা এক মহিলার সঙ্গে পরিচিত হন। একদিন চ্যাট করতে গিয়ে ওই মহিলা তাঁকে জানান, তাঁর বড় আকৃতির স্তনের জন্য পুরুষদের চোখে তিনি যেন ফ্যান্টাবুলা হার্টথ্রব। কারও ঘরে যাবেন, রাস্তায় হাঁটবেন তো পুরুষরা তাঁর স্তনের দিকেই অর্জূনের পাখির চোখ করে বসেন। দুই জনের কথাতেই ভিন্ন অভিজ্ঞতার বিভিন্ন সুর যেন নিবিড় বন্ধুত্বের জন্ম সেদিন দিয়েছিল। তখনই তাঁরা ঠিক করে ফেললেন মেয়েদের এই নানাবিধ আকৃতির স্তন নিয়ে মেয়েদেরই এগিয়ে আসতে হবে। তারজন্য চাই একটা প্ল্যাটফর্ম।
দুই সখী মিলে বিগত কয়েক মাস আগে তৈরি করলেন এক অভিনব প্ল্যাটফর্ম। এহেন বিচিত্র প্ল্যাটফর্মের নাম দিলেন “আইডেন্টিটি”। এই “আইডেন্টিটি” শব্দের শেষ দুটি অ্যালফাবেট হল দুটি “টি”। যা ভীষণ ইঙ্গিতবাহী। কারণ সেই শেষ দুটি টি যে তাঁদের সহযাত্রার পথ দেখিয়েছে। ইন্দু হরিকুমার নিজেই বলেছেন, আমাদের এক বন্ধুর মাথায় প্রথম আসে দুই টি বিশিষ্ট আইডেন্টিটি নামটা। আমরাই ঠিক করে ফেললাম এই নামেই হোক আমাদের প্রকৃত পরিচয়।
চলতি বছরের একেবারে প্রথম দিকের কথা। মুম্বাই নিবাসী চিত্রকর ইন্দু হরিকুমার ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্ট ড্রপ করলেন। এমনিতেও তিনি ইনস্টাগ্রামে কর্মরত। সেই পোস্টের মূল বিষয় ছিল স্তন। পোস্টে ব্যক্ত করলেন, এই সমাজে প্রতিপাদ্য হিসেবে মানবদেহের সবচেয়ে আকর্ষিত, সবচেয়ে আলোচিত, সবচেয়ে দর্শনীয়, সবচেয়ে প্রত্যাশীত হৃদয়ে ঝড় তোলা অঙ্গ হল স্তন। এর কৌতুহলে পুরুষ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। নারী কখনও গর্বিত বা সঙ্কুচিত বা উৎকন্ঠিত হন। আবার তিনি কখনও বা আতঙ্কিত বা কষ্টান্বিত বা আনন্দিত। একমাত্র নারীরাই যেন এইসব নিজস্ব অনুভুতি নিয়ে তাঁদের স্তন সংক্রান্ত একান্ত ব্যক্তি অভিজ্ঞতার কথা লিখে  পাঠান। সঙ্গে যেমন খুশি ছবিও পাঠালে আপত্তি নেই। তাজ্জব বিষয় হল পোস্টটি ট্রোল হতেই বহু মহিলা এই আবেদনে সারা দেন। শিল্পী ইন্দু বলেন, আমরা স্তন নিয়ে মহিলাদের লেখার বিষয়ে অভাবনীয় সারা পাই। শিল্পীর মতে পৃথিবীর সমস্ত নারীর তাঁর নিজস্ব স্তন সম্পর্কে আকার, অভিজ্ঞতা, অনুভুতির একটা পৃথক মনস্তর আছে। যা বিভিন্নজনের লেখাতেই ভিন্নতা স্পষ্ট।
সম্প্রতি ব্রিটেনের এক জন-সমীক্ষা করা হয়েছিল ৩৮৪ জন নারীর উপর। যার মধ্যে ৪৪ শতাংশ নারীই মনে করেন, তাঁদের স্তন যদি আরও বড় হতো তো ভালই হতো। আর ৩১ শতাংশ নারী মন করেছিলেন, তাঁদের স্তন ছোট হলে মন্দ হতো না। বাকি ২৫ শতাংশ নারী মাঝপথে মাঝারি সাইজের অলিগলিতে হেঁটেছেন।
ইন্দু হরিকুমার তাঁর প্রাপ্তির লেখাগুলি পড়ে বলেছেন, সামাজিক নানা কারণে লেখিকাদের পরিচয় আমরা প্রকাশ করি না। আমরা বুঝতেও দিই না তাঁদের বাসস্থান কোথায়। কিন্তু এটা ঠিক লেখাগুলির ছত্রে ছত্রে রয়ে গিয়েছে, ছোট স্তনের বিরম্বনা ও কষ্টের বারোমাস্যা। তেমনি বড় স্তনের অহংকার থেকে কত নিষ্ঠুর আঘাতের স্বীকারোক্তিও আমরা পেয়েছি।
ইনস্টাগ্রামের আইডেন্টিটি প্রকল্পের পোস্টে কারও কারও লেখাগুলি থেকে বেড়িয়ে এসেছে, কোনও মহিলার ব্লাউজ থেকে ব্রায়ের স্ট্রাপ অজান্তে একটু বেড়িয়ে গেল তো তিনি কতই না গঞ্জনা সয়েছেন। আবার কেউ বলেছেন, তাঁর দুরন্ত স্তনের ছবি যদি পুরুষের বেডরুমে রাখা যেত তবে তিনি গর্বিত হতেন। আরও একটু সাহস দেখিয়ে কোনও ললনা তাঁর দুই স্তনের মাঝখানের সুক্ষ্ম কমন সীমান্ত রেখার ছবিও পাঠিয়েছেন।
শিল্পী ইন্দু হরিকুমার মন্তব্য করেন, এই দুই মাসেই তিনি ৬০ টি মনোগ্রাহী স্তনের গল্প পেয়েছেন। যে গল্পগুলির সমন্বয়ে তিনি ইতিমধ্যেই ১৯ টি ছবি এঁকে ফেলেছেন। যেগুলি ইতিমধ্যেই শিল্পীমহলে ব্যাপক হাইপ তুলেছে। বলা যায় শৈল্পিক উৎকর্ষের মাপকাঠিতে সেগুলি হটকেক। ১৮ থেকে ৫০ বছরের মহিলারাই বেশি সারা দিয়েছেন। ভারতের ছোট বড় বিভিন্ন শহর থেকেই তিনি অজস্র ইমেলও পাচ্ছেন। এমনকি প্রান্তিক গ্রামীণ মহিলারাও সংকোচ ভেঙ্গে বেরিয়ে পড়েছেন স্তনের র‍্যাম্পে নিজেদের উজার করে দিতে। একটাই ভরসায়। গোপনীয়তা রক্ষায় ইন্দু হরিকুমার যে নিশ্চিন্তপুরের একলব্য। 
এবার ইনস্টাগ্রামের আইডেন্টিটির বেবি বাম্প সুনামির অভিনব ঢেউ ভারতের বই বাজারে আছড়ে পড়তে চলেছে শীঘ্রই। একশত স্তন সমাচারের মিলিত অভিনব টর্নেডোর ঝোড়ো সুবাস ছড়াতে তাই প্রকাশিত হতে চলেছে ইন্দু একলব্যের স্তনের গল্প স্তনের ছবির এক নিউ জেনেরেশন পুস্তক। এখন শুধুই তাই বইপ্রেমীর অপেক্ষার দিন। সেই অবসরে কেউ কেউ গাইতে শুরু করেছেন, চোখের থেকে বিজলী ছোড়ো, ওড়না টাকে সরিয়ে নাও... 

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours