রানি মজুমদার, ট্রান্সজেন্ডার লেখিকাঃ এই সাত সকালে দরজা ভাঙছে কে। তড়াক করে লাফিয়ে উঠি। ঘড়িতে ঠিক সাতটা । চোরের কি স্পর্ধা রে বাবা। এত সকালে চুরি। জানলার ফাঁকে চোখ গলাতেই দেখি সার বেঁধে খান চারেক বাচ্ছা কাচ্চা সঙ্গে এক ঠাকুমা। আর ঠাকুমার ঠিক পাশটিতে এক সুদর্শন কচি মরদ। বুড়ির ছেলেই হবে হয়তো । কিন্তু এরা করবে ডাকাতি ? আর ঠিক তখনই বুকের ভেতর গুনে গুনে সাড়ে এগারোটা লাড্ডু ফুটলো। পট পট পটাশ ,
তোমায় হৃদ মাঝারে রাখবো ছেড়ে দেবো না ।
তবে কি ওই বুড়ি কপাল পোড়াতে আমার সঙ্গেই ওর ছেলের বিয়ে ঠিক করলো । এক লাফে আয়নার সামনে । একটা টিপ সেঁটে নিলাম কপালে। টিপ পড়লেই কেন জানিনা মুখটা উষা উত্থুপ মার্কা লাগে। মুখে একটু পাউডার। অসময়ে কানের দুল দুটোও হাওয়া। আবার সেই পিন্ডি চটকানো দরজা ধাক্কার শব্দ । মুহূর্তে মনে হলো সম্বন্ধ আজ পায়ে পায়ে আমার দ্বারে এসে দাঁড়িয়েছে । দরজা খোলার আগে প্রচন্ড একটা লাফ মেরে ওপরের আকাশটাকে দুহাতে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে হলো। না থাক । হবু বউয়ের এসব মানায় না। কিন্তু বিয়ে মানে শুনেছি এক রাতে বারো বার। খাট নাকি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে ।
সব আশা আশঙ্কা বুকে নিয়ে লাল ওড়নাটা আঁচল বানিয়ে দরজা খুলি। দেখি সকলের হাত প্রণামের ভঙ্গিতে জোড়ো করা। বুড়ি বলছে মা, আমাদের রক্ষা করো। দুয়া করো। আমি এবার চোখে শুকতারা দেখছি। একবার নিবছে একবার জ্বলছে। তবে আমি কে ? আমি কোন দেবী? দুর্গা নাকি ব্রহ্মকালী। মাইরি বলছি আমার হাত দুখানা আশীর্বাদ দেওয়ার ভঙ্গিতে আপনিই উঠে দাঁড়ালো। সকলে দেখি আমায় প্রণাম শুরু করে দিয়েছে। এমনকি বুড়িটা পর্যন্ত। আমি তখন অবশ বিবশ । আমার আদি নেই অন্ত নেই প্রাকৃত মূর্তি নেই। দেখি সুখতারা টাও কখন নিভে গিয়ে পোড়া ধোঁয়া ছাড়ছে। বুড়ি বলে কিনা, মা । এক টাকা হলেও দাও ঘরের দুয়ারে মাদুলি বানিয়ে টাঙিয়ে রাখবো । সম্বিৎ ফিরলো। বুড়ি ছেলের বউ করতে আসে নি। হিজরের দুয়া নিতে এসেছে। এমন সময় আমার হবু বরও দেখি মা, মা বলে আমায় ঢিপ ঢিপ করে প্রণাম করে নেয়। অনুমতি না নিয়ে এভাবে কাউকে প্রণাম করতে হয়? যদি আশীর্বাদ না দি । মনে মনে বলি। কাঁপা হাতে পাঁচ টাকা দিই। সাথে সাথে কচি মরদ টাকে বলে রাখি রাতের দিকে একদিন সময় করে একা এসো, আশীর্বাদে ভরিয়ে দেবো।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours