Kingfisher
অমর কুমার নায়ক,প্রকৃতি প্রেমী: “মাছরাঙা ঝুপ ক'রে পড়ে এসে জলে।” ছোটবেলায় পড়েছিলাম এই লাইনটা। সত্যি মাছরাঙার মাছ তুলে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য মনোহরা। যেমন অদ্ভুত তার স্বরের বাহার তেমন বাহারি রঙিন পালকে মোড়া তার দেহ। স্থান বিশেষে অনেক রকমের মাছরাঙা দেখতে মেলে। পশ্চিমবঙ্গের আসানসোল-দুর্গাপুর থেকে যে মাছরাঙাদের দেখা যায় তারা হল– ছোটো মাছরাঙা (COMMON KINGFISHER), গুড়িয়াল মাছরাঙা (STORK BILLED KINGFISHER), ফটকা মাছরাঙা (PIED KINGFISHER) আর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ‘রাজ্য পাখি’ সাদাবুক মাছরাঙা (WHITE-THROATED KINGFISHER)। এদের মধ্যে আমাদের প্রায় প্রত্যেকেই ছোটো মাছরাঙাকে দেখেছি। পুকুরের ধারে নুয়ে পড়া গাছের ডালে চুপ করে বসে থাকতে অথবা সারা পুকুর শিস দিতে দিতে ঘুরে বেড়াতে। আর সাদাবুক মাছরাঙার দেখা যেমন পুকুরের আশেপাশে মেলে ঠিক তেমন মাঠের ধারের গাছ, ইলেকট্রিক তারের খুঁটিতে বসে থাকতেও দেখা যায়। গুড়িয়ালের যেমন বাহারি রঙ তেমন বাজখাই ডাক। এদের তুলনায় একটু কম দেখা মেলে ফটকার। সাদাকালো এই মাছরাঙার আকর্ষণ গোঁত্তা মেরে শিকার করার অভিনব পদ্ধতি। বাড়ীর পাশে পুকুর থাকার সৌভাগ্যে সেই ছোটো বেলা থেকে কাছ থেকে দেখে আসছি এদের। পাখি চর্চা করতে গিয়ে লক্ষ্য করেছি এদের আচার ব্যবহার। আজকের আলোচনা পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য পাখিকে নিয়ে।
সাদাবুক মাছরাঙা
ইংরাজি নাম - White-throated Kingfisher  বা  White-breasted Kingfisher=
বিজ্ঞান্সন্মত নাম - Halcyon smyrnensis
এর নাম থেকেই বোঝা যায় এদের বুকের রঙ সাদা। মাথা আর পেটের রঙ ঘন উজ্জ্বল বাদামী এবং ডানা জমকালো নীল রঙের। এদের ডানার দুপাশে গাঢ় খয়েরি দাগ থাকে। ঠোঁট ও পায়ের রঙ লাল। এরা সাধারণত পুকুরের পাশের নুয়ে পড়া  ডালে পাতা-ঝোপের মাঝে বসে থাকে মাছ ধরার আশায়। তবে রেললাইন বা রাস্তার ধারের মাঠের মধ্যে থাকা ব্যাঙ, কাঁকড়া খাবার লোভে ইলেকট্রিক তারের খুঁটি বা গাছের উপর বসে থেকে সতর্ক নজরে শিকারের সন্ধান করে এরা। পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র এদের দেখতে পাওয়া যায়। সঙ্গীকে মন কেমন করা স্বরে একটানা ডাকতে থাকে, সাড়া না পাওয়া পর্যন্ত রেহাই নেই। এদের আমি মাছ ভাগ করে খেতে দেখেছি। অন্যান্য মাছরাঙাদের মতো এদের ঠোঁটও শক্তিশালী ও আকারে বড় হয়। গরমের শেষ এবং বর্ষার শুরুতে নদী বা পুকুরের পাড়ে লম্বা সমান্তরালভাবে গর্ত করে বাসা তৈরি করে এবং একসাথে পাঁচ ছটি করে ডিম পাড়ে। মাছ ছাড়াও এরা ব্যাঙ্গাচি, পোকা ও অন্যান্য ছোটো সরীসৃপ খেয়ে থাকে।
মাছরাঙাকে বলে মাছ চোর। আর এক্ষেত্রে চুরির শাস্তি মৃত্যু। তবে সহজ মরণ নয়। এদের মারার জন্য আমাদের মাছচাষিরা ফিশিং নেটের সাহায্য নিচ্ছে। পুকুরের মাঝে লম্বামম্বি বা আড়াআড়িভাবে এমনভাবে মাছ ধরার জাল বেঁধে রাখে যে জালে আটকে পরে ধীরে ধীরে পচে গলে মরতে হচ্ছে এদের। তাছাড়াও আছে পুকুর ভরাট করে বাড়ী বা কল কারখানা তৈরি। বেশী ফলনের লোভে মাঠের মধ্যে ব্যবহৃত যথেচ্ছ কীটনাশকের প্রভাবে এদের খাবারের অভাব হচ্ছে। এসবের কারণে ধীরে ধীরে খাবার এবং আবাসের অভাবে এদের সংখ্যা কমে আসছে দিন দিন। হয়তো একদিন এদের হারিয়ে ফেলব চিরদিনের মতো। তাই প্রশাসনকে দোষারোপ না করে বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ করার দায়িত্ব নিতে হবে আমাদের সবাইকে।




x
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours