Dol
সুবীর পাল,এডিটর,দ্য অফনিউজঃ দোল মানেই বাঙালীর রঙের খেলা। এক সার্বিক বং ঐতিহ্যের মিলন। তাই দোলের চিরন্তন আবহ এই বাংলায় সমগ্র পৃথিবীর চোখে এক বিশ্ব উৎসবে আজ পরিগণিত। তবু এই সর্বকালের রীতির চেনা চেনা বঙ্গীয় নষ্টালজিক ধারাবাহিকতায় কোথায় যেন ঘুনের কড়া সশব্দে নাড়া দিচ্ছে এক জোওয়ানি প্রোগ্রেসিভের জড়ালো পাঞ্চিংয়ে। যাব যাব বসন্তের বেণীতে পলাশের পাপড়ির ছোঁয়া লাগিয়ে এবারও দোল এসেছিল প্রকৃতির ক্যালেন্ডারে। বাংলার মেঠো গলি থেকে শহর কল্লোলীনির ডুপ্লেক্সে। পশ্চিমী দুনিয়ার প্রবাসী হৃদয়ের রঙিন আলিঙ্গনে। কিন্তু ওই যে একাংশ নিউ জেনারেশনের প্রোগ্রেসিভ দোল! এই দোল মানে ওইসব চুটিয়ে আবীর খেলা অনেকটাই ব্যাক ডেটেড। থাকবে একটা লেটেস্ট ট্রেন্ডি বাইক। পিছনের হিমালয় উঁচু সিটে খোলামেলা ক্যাজুয়াল ড্রেসে বসে যেন শোলের বাসন্তী। তাঁর দুই গালে ত্রিবর্ণ পতাকার আবীরের সাবধানী ছাপ। চোয়াল ঝুঁকে আদরে এলিয়ে পড়েছে বাইক চালক মজনুর কাঁধে। বাইকের সামনের আসনতো নিম্নগামী কন্যাকুমারিকা। বাসন্তী নারী ও চোলাই সুরার ককটেল এফেক্টে বয়ফ্রেন্ড মজনুর চোখ যে ঢুলু ঢুলু। মন যে উড়ু উড়ু। গাঢ় বেগুনি পেন্টিংয়ে মিশমিশ গিয়েছে গোটা মুখ। বাইক তো আমজনতার রাস্তায় চলছে না। গতিতে যেন হাওয়া হাওয়া…মুজকো উড়ালে লে’র মতো বাতাসে উড়ছে সেই ক্যাপেলের দ্বিচক্র যান। যূগলের পরিভাষায় তখন মাই ফুট দোল।বাইকে দুই সওয়ারের মুখে একটাই লাইন বারবার শোনা যাচ্ছে, হোলি কে দিন হ্যায়…। আসলে এই বাংলায় বাঙালীয়ানার নিজস্ব দোল উৎসবে এই অতি অধুনা ফ্যাশনটাই ক্রমেই যেন প্যাশন হয়ে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। বাঙ্গালীর স্বভূমি দোলের আরও এক সর্বশেষ ফ্যাশনের প্রতিফলন এবার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বসন্ত উৎসবে বড্ড বেশি প্রকট হয়ে গেল। মদ-মদিরার নিমগ্ন সাধক হয়ে এক ইয়ং-চ্যাপ শাহেনশা যেন নিজের টলমলে পায়ে আকাশ বাতাসকে ভুলভুলাইয়া ভাবতে ভাবতে আচমকা মাটিতে পড়ে গেলেন। ব্যাস ক্লাইম্যাক্স পৌঁছাল সাময়িক অজ্ঞানতার দুনিয়ার নির্লজ্জ দেখনদারিতে। বাংলার এই বিশ্ব-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এহেন দোল প্যাশনের ক্লিক অন খাজানা মূহুর্তেই স্যোসাল মিডিয়ায় ভাইরাল। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বসন্ত উৎসবে এমন প্রোগ্রেসিভ দোলের ছবি যখন সারা পৃথিবীর দোল-প্রেমীদের মোবাইলে ছড়াছড়ি তখন একই দিনে কলকাতা থেকে দক্ষিণ এশিয়ার মানচিত্র পেড়িয়ে সুদুর উত্তর গোলার্ধের হিউস্টনেও মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয়েছিল প্রকৃতই এক বাঙালীর দোল উৎসব। হতেই পারে সাহেব মেমের দেশ আমেরিকার এক বহুল পরিচিত জনপথ হিউস্টন। যেখানে বাসিন্দার রক্তের ধমণীতে মিলেমিশে রয়েছে আসলি প্রোগ্রেসিভ কালচার। তবু সেখানের বসন্ত মানেই প্রবাসী বাঙালীর হৃদয়ের তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে জেগে ওঠে দোলের সাতরঙা রামধনুর আত্মিক তৎপরতা। দোলের দিনটা এই বিদেশ ভুখন্ড যেন পূর্ণ বাঙালীর হয়ে ওঠে। সম্পূর্ণ ভেষজ আবীরে রঙিন হয়ে তাঁরা মেতে ওঠেন পরস্পরকে আপন করে নিতে। কখনও সেখানকার সাউথ এশিয়ান টিভি থেকে সম্প্রচারিত হয়েছে নিখাদ হোলির বাংলা গান, এল রে এল রে এল হোলি এল…। স্থানীয় স্টেডিয়ামে, পার্কে কেউ একক ভাবে বা নানা গ্রুপের সদস্যরা আসেন। অনেকে আবার দুর্গামন্দিরে হাজির হন। এমনই একটা গ্রুপ রঙ্গোলি হই চৈর সদস্যরা জানালেন, তাঁরা সারাদিন পার্কে দোল খেলেন। গান, খেলা, খাওয়া সবই হয় সেখানে। মেয়েরা বাড়ি থেকে রকমারি রান্না করে নিয়ে যান পরস্পরকে খাওয়ানোর উদ্দেশ্যে। তবে তাঁদের দোলে অ্যালকোহল পুরোপুরি নিষিদ্ধ। হিউস্টনের এই বাঙালীয়ানা দোল খেলার নান্দনিক অভিজ্ঞতা কিন্তু মার্কিন প্রবাসী বাঙালীর এক আলাদা প্রাপ্তি। ক্যালিফোর্নিয়ার এক ছোট্ট শহরতলীতে সম্প্রতি বসবাস করেন প্রতিষ্ঠিত বাংলা লেখিকা ও সংস্কৃত-মনষ্ক জয়া ঘোষ। তিনিও একদা হিউস্টনের দোল উৎসবে মেতে উঠতেন আন্তরিক ভাবে। তাঁর অভিজ্ঞতায়, ছোটবেলায় বা মেয়েবেলায় দোল খেলিনি কিন্তু হিউস্টন আসার পর আবা্র দোলের মজা পেলাম। খুব খেলেছি কয়েকবার। তবু জন্মগত যিনি আদ্যন্ত বাঙালী তাঁর মন যে হিউস্টন, ক্যালিফোর্নিয়ার সীমানা ছাড়িয়ে আবার আসিব ফিরে এই বাংলার ধরণীতলে ফোকা্সড হবেই সেটাই তো স্বাভাবিক। প্রবাসী মনে হলও তাই। কিন্তু একি দেখছেন তিনি? বাংলার দোলের হাল হকিকৎ জানতে গিয়ে কি সব ছবি ভেসে উঠছে নিজের মোবাইল স্ক্রিনে? রবীন্দ্রভারতীর বসন্ত উৎসবে এক কেতাবী জানুর এমন বেহুঁশ দোল-শয্যার খবর যেন দীর্ঘদিনের লালিত নিজস্ব মা্নসিক বিশ্বাসকে এক লহমায় টলিয়ে দিল। বলে উঠলেন, বঙ্গ সংস্কৃতির অবক্ষয় চোখে দেখা যায় না। প্রবাসী বাঙালী লেখিকা জয়াদেবী তাই গর্জে উঠলেন। স্যোসাল মিডিয়াতেই প্রতিবাদী ভাষায় লিখলেন, আমার মনে হয় এঁদের সাইকোলজি অন্যরকমের, এঁরা মনে করে এগুলো করলেই মর্ডান ও প্রোগ্রেসিভ হওয়া যায়। পৃথিবীর নানা সাগরপারের দুই ভুমি প্রান্তর। আমেরিকার হিউস্টন ও পশ্চিমবঙ্গের রবীন্দ্রভারতী। উৎসবের সৌজন্যতায় বসন্তের দোল। পালনের দিনও একই সুর্যসাক্ষীর। অথচ রুক্ষ বাস্তব এটাই, মাথা গননায় বাঙালী এক স্থানে সংখ্যালঘু তো অন্য জায়গায় সংখ্যাগুরু। তবু লেখিকার খেদের কালিতে লেখা হয়ে গেল দুর্ভাগ্যের আসল লেখনীটা, হিউস্টনের বাঙালীরা কলকাতার থেকেও বেশি বাঙালী। বঙ্গীয় সংস্কৃতির প্রোগ্রেসিভ ক্যানভাসে এই দেওয়াল লিখনটা কি পড়তে পাড়লেন?
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours