salui pujo
সঞ্জয় সরকার, সাংবাদিক,  বাঁকুড়াঃ বছরের একটি দিন প্রতিদিনের জীবন যন্ত্রণা ভুলে আনন্দে মেতে ওঠেন আদিবাসী মানুষরা। শাল গাছে নতুন পাতা গজালেই দিন গোনা শুরু হয় নিতান্তই দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলির। এখন যে সময় এগিয়ে আসছে গোটা বছরের প্রতীক্ষার। শাল গাছের নতুন পাতা তুলে দিতে হবে তাদের আরাধ্য দেবতা মারাংবুরুর পায়ে। তা না হলে যে ছাড়পত্র মিলবে না জঙ্গলে পাতা কুড়ানোর। এমনটাই রেওয়াজ রীতি আদিবাসী সমাজের। আজ থেকে নয় এই বিশ্বাস আর নিয়ম চলে আসছে আদিকাল থেকে। যে কালে এই অরণ্য সন্তানদের বাস ছিল শুধু মাত্র জঙ্গলেই। জীবিকাও ছিল জঙ্গল নির্ভর।  এখন সময় বদলালেও বদলায় নি এই সমাজের ভক্তি আর বিশ্বাস। তাই আজও আদিবাসী মানুষরা জঙ্গল নির্ভর। সেখান থেকে পাতা কুড়িয়ে সেই পাতা বুনে শহরে বিক্রি করে তাদের জীবন চলে। সংগ্রহ করতে হয় জ্বালানি কাঠ। যার কিছুটা থাকে নিজেদের উনুন জ্বালাতে। বাকিটা বাজারে বিক্রি করে দুটো পয়সা পাওয়া যায়। কিন্তু চৈত্র মাসে বসন্ত সমাগমে জঙ্গলে ঢোকার জন্য যে অনুমতি দরকার সেই মারাংবুরুর। তাই চৈত্র মাসে একটি দিন ঠিক করে সেরে নিতে হয় পুজো পর্ব। শনিবার আদিবাসী অধ্যুষিত কাঠগুর গ্রামে হয়ে গেল সেই শালুই পুজো। যাকে  ঘিরে আনন্দে মাতলেন গোটা গ্রামের মানুষ। গ্রাম থেকে কিছুটা দূরে রয়েছে মারাংবুরুর থান। সকাল থেকে সেখানে হাজির গোটা গ্রামের মহিলা পুরুষরা। নতুন কাপড়ে সেজে হজির কচিকাঁচারাও। দেবতার নৈবেদ্যে রয়েছে ছোলা, বাতাসা, নকুলদানা। তার সঙ্গেই দেওয়া হয়েছে শাল গাছের কচি নতুন পাতা। গ্রামের মুখিয়া নিজেদের ভাষায় মন্ত্রোচ্চারণ করে পুজো করেন। সঙ্গে চলে ধামসা মাদলের বোল। সেই বোলের তাল ভেসে যায় বহু দূরে। পুজোর শেষে শুরু হয় কোমর জড়িয়ে মেয়েদের নাচ। পরের দিনও গোটা দিনটা জুড়েই চলবে এই আনন্দের হাট। এর পর ফের শুরু হবে ওদের জীবন সংগ্রাম। সেই জঙ্গল। সেই পাতা আর কাঠ কুড়িয়ে দূরান্তে বয়ে নিয়ে যাওয়া। জীবন যে বড় কঠিন ওদের।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours