পৃথিবীর ইতিহাসে ১৯১৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর এক বিরল দিন। এই দিন বিশ্বে একমাত্র একবারই কোনও হাতির ফাঁসি কার্যকর করা হয়। দড়িতে ঝুলিয়ে না-মানুষের এই হত্যায় ফের থমকে গেল মানবতা।
সার্কাস দলের মালিক পুরোনো মাহুতকে সরিয়ে রেড এল্ড্রিজকে নতুন মাহুত হিসেবে নিয়োগ করেন হাতিদের দেখাশুনার জন্য। কিন্তু রেড হাতিদের বিষয়ে অনভিজ্ঞ ছিল। একদিন খেলা চলার সময় রেড ম্যারির উপরে বসে অযথাই ম্যারির কানে লোহার শিক দিয়ে খোঁছাচ্ছিল। তখন ম্যারির বিগড়ে গিয়ে রেডকে পা দিয়ে পিষে মেরে ফেলে। তখনই এই ঘটনায় সার্কাস প্রাঙ্গণ থেকে শহর জুড়ে ম্যারির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। সবার এক দাবি হাতিটিকেফাঁসি দিতেই হবে। হাতির উপর এতই ক্ষুব্ধ যে কেউই স্পার্কস ওয়ার্ল্ড দেখতে অস্বীকার করে। ফলে সার্কাস দলটিই এক সময় বন্ধ হবার উপক্রম হয়।
তখন সার্কাস মালিক জনগণকে বোঝাতে অক্ষম হন যে রেডের মৃত্যুতে ম্যারি দায়ী যতটা, তার চেয়ে বহুগুন দায়ী রেড নিজে। কিন্তু কেউ এই যুক্তি মানলেন না। সবার এক দাবি মেরে ফেলতেই হবে হাতিটিকে। অগত্যা সার্কাস মালিকও সিদ্ধান্ত নিলেন ম্যারিকে হত্যার সপক্ষে। পরিশেষে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয় ম্যারিকে ক্রেনে ঝুলিয়ে ফাঁসি কার্যকর করা হবে। আনা হয়েছিল বিশালাকার ক্রেন। ঘটনার সাক্ষী হতে সেখানে উপস্থিত হন প্রায় ২৫০০ মানুষ। ক্রেনে যেই হুক টানা হল মুহূর্তে ম্যারি এক টানে ২০ ফুট উপরে উঠে গেল। কিন্তু আচমকা ক্রেনের চেইন ছিঁড়ে গিয়ে ২০ ফুট উপর থেকে মাটিতে পড়ে যায় হস্তিনীটি। ম্যারির মেরুদণ্ড ভেঙ্গে গেল। পা্গুলোও ভেঙ্গে গেল, গলা থেকে রক্ত ক্ষরণ শুরু হয়। কিন্তু নিষ্ঠুর ক্রোধান্বিত মানুষগুলো থেকে মানবিকতার সামান্য করুনাও পেল না ম্যারি! তাই ফের ম্যারিকে বাঁধা হল ক্রেনের চেইন দিয়ে। এবার সাফল্যের সঙ্গে উর্তীণ হল মনুষ্যত্বের পৈশাচিকরা। থেমে গেল ফাঁসির চেইনে ছটফট করতে করতে থাকা গজমতীর প্রান স্পন্দন।
আক্ষরিক অর্থে ম্যারি সেদিন ফাঁসিতে ঝোলেনি। ফাঁসি হয়ে গিয়েছিল মনুষ্যত্বের। একটি অবলা হস্তিনী ফাঁসিকাঠে ঝোলার সময়ে হয়তো মনে মনে বলেছিল, হে ঈশ্বর এঁদের ক্ষমা করো, এঁরা জানে কি করছে। সত্যি উন্মত্ত জনতা সেদিন জানতো না। না তো না-মানুষের কাছে মানুষ কি হেরে যায়?
Post A Comment:
0 comments so far,add yours