সুবীর পাল, এডিটর, দ্য অফনিউজঃ তাজমহল সম্পর্কে কাজি নজরুল বলেছিলেন, ‘তাজমহলের পাথর দেখেছ, দেখিয়াছ কি তার প্রান, অন্তরে তার মমতাজ নারী, বাহিরেতে শা-জাহান।’ সত্যি প্রেমের সৌধ তাজমহল পৃথিবীতে ভালবাসার এক অপরূপ মাইলস্টোন। কিন্তু শুধুই কি তাজমহল স্ত্রী অনুরক্তের একমাত্র বিশ্বপ্রতীক? প্রেম যেখানে যুগে যুগে মানুষের মনে মনে বারবার এসেছে ফেরিওয়ালার রূপতাপসে সেখানে ভিন্নতাও জন্ম নিয়েছে দাম্পত্যের অজস্র স্মৃতি জঠরে। হয়তো তাই আজও প্রেম জগতের এক অনবদ্য নান্দনিক নিদর্শন ‘গিটার উদ্যান’ দাম্পত্য স্মৃতি জঠরের অন্য এক ভিন্নতা। আগ্রায় যদি সম্রাট শা-জাহান তাজমহল তৈরি করে স্ত্রী মমতাজের প্রতি তাঁর প্রেমকে অমর স্থাপ্তত্যের রূপ দিতে পারেন তবে সুদূর আর্জেটিনাতেও এক প্রান্তিক চাষি পেড্রো মার্টিন উরেটা তাঁর স্বর্গীয়া অর্ধাঙ্গিনী গ্রাসিয়েলার প্রেম তর্পণে অনুরক্ত হয়ে বানিয়ে ফেললেন এক স্বর্গ প্রেমের বাগান ‘গিটার উদ্যান’। যা সমগ্র প্রেমস্পদ নরনারীর কাছে আজ এক নৈস্বর্গীয় নস্টালজিক ডেস্টিনেশন। বর্তমানে পেড্রো মার্টিন উরেটার বয়স ৭১ বছর। যখন তাঁর বয়স ২৮ তখন তিনি ইউরোপ ভ্রমন করে আর্জেন্টিনা ফিরে এসেছেন সবে। ঠিক সেই সময়েই ১৯৬০ সালে ১৭ বছরের যুবতী গ্রাসিয়েলার প্রেমে পড়ে যান। আর সেই ভালবাসা অনেক বাধা অতিক্রম করে অচিরেই পরিণয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। তাঁদের মধ্যে চার সন্তান এলেও সুখের গৃহকোন বেশিদিন কিন্তু স্থায়ী হল না কালের কড়াল ছোবলে। মস্তিষ্কজনিত রোগের কারনে মাত্র ২৫ বছর বয়সে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন গ্রাসিয়েলা। পেড্রো মার্টিন উরেটার স্ত্রী ছিলেন ভীষণ পরিশ্রমী ও গীটারের প্রতি অনুরাগী। পেশায় চাষি নিয়তির লিখনে পেড্রো মার্টিন উরেটা বিপত্নীক হলেও তাঁর প্রেমের নারীকে কোনওদিনই ভুলতে পারেননি। এমন কি স্ত্রীর মৃত্যুর পর দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও তিনি কারও প্রতি অনুরক্ত হননি একটিবারের জন্য। তার মন সেই মিষ্টি গ্রাসিয়েলাকে নিয়েই সদা ব্যস্ত। স্ত্রী বিরহের শোক যাত্রা যখন ১৯৯০ সালের দোড় প্রান্তে ঠিক তখনই পেড্রো মার্টিন উরেটার মাথায় এলো এক চমকপ্রদ ভাবনা। মৃতা স্ত্রীর গীটার আসক্তির অধ্যায়কে বাস্তবায়িত করতেই স্থানীয় পাম্পা এলাকায় নিজস্ব ফার্মেই তৈরি করে ফেললেন এক অদ্ভুত বাগান। একেবারে গীটারের আদলে। তিন কিলোমিটার লম্বাটে এই বাগান ক্রমেই বিখ্যাত দর্শনীয় স্থানে পরিণত হতে সময় নেয়নি। বাগানকে বাহারি ও রঙীন করতে অন্যান্য গাছের সঙ্গে লাগানো হয়েছে সাইপ্রাস ও ইউক্যালিপটাসও। যখন সেই যুগলের হাসির নীড় স্বপ্ন প্রেমের স্বর্গ বুনিয়াদ ছিল, তখন হামেশাই গ্রাসিয়েলা বুকে টেনে নিয়ে বলতেন স্বামী পেড্রো মার্টিন উরেটাকে, ‘ওগো চাষি হয়ে তুমি যেমন বাগান ভালবাসো, আমিও সঙ্গীত অনুরাগী হয়ে তেমনি গীটার খুব পছন্দ করি গো।’ ইহলোকের সংসার ছেড়ে গ্রাসিয়েলা চলে গেছেন বহুকাল। কিন্তু ‘গীটার উদ্যান’য়ের ইউক্যালিপটাসের পাতা দোলা হাওয়ার ছন্দে আজও মর্মরিত হয় গ্রাসিয়েলার ওই প্রেমালাপটি। আর পেড্রো মার্টিন উরেটা সেই বাগানের কোনও গাছের তলায় বসে প্রতি বছর অপেক্ষা করে থাকেন, এই বুঝি বসন্ত এসে গেছে। এবার নিশ্চয় পাতা ঝরবে। জীবনের পাতা ঝরুক বা গাছের পাতায় প্রেমালাপ ঝিরঝির করুক, সে তো আদতে এক অনন্ত প্রেমেরই বিশ্ব বিষ্ময়েরই ইতিবৃত্ত ‘গীটার উদ্যান।’
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours