সুবীর পাল, এডিটর, দ্য অফনিউজঃ- কটা বাজে জানতে চাইলে সাধারণত আপনাকে কেউ নিরাশ না করেই সঠিক সময়টা বলে দেবেন।মনাদাও আপনাকে নির্ভুল সময়টা বলে দেবেন।আরে এ আর আশ্চর্যের কি আছে? আর মনাদাই বা কে? বিষ্ময় তো আছেই। রাজ্যের বীরভূমের এক অখ্যাত গ্রাম হেতমপুর। দুবব্রাজপুর লাগোয়া। সেখানেই আজীবন বসবাস করেন মনোতোষ মুখোপাধ্যায়। বছর ৫৪’র এই মানুষটি এলাকায় সকলের আদরের মনাদা।তিনিও নিখুঁত সময় বলে দেবেন জিজ্ঞাসা করলেই। আচ্ছা মনাদা সময় বলতে পারেন এই প্রসঙ্গ বারবার আসছে কেন? ঠিকই প্রশ্নটা স্বাভাবিক।আসলে বিষয়টা প্রকৃতই অভিনব।কারণ মনাদা যে আক্ষরিক অর্থে পুর্ণ জন্মান্ধ।সেকি? কারও সাহায্য না নিয়েই উনি সময় বলতে পারেন? হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ। একেবারে ঠোঁটের গোড়ায়, এক মিনিটও এধার ওধার হবে না। শুধু একবার জানতে চাইলেই হলো মণাদা ক’টা বাজে? মাথা দুলাতে দুলাতে উনি বলে দেবেন কাঁটায় কাঁটায় নিখুঁত সময়। তাজ্জব! সত্যি তাজ্জবই।কিন্তু কি করে সম্ভব? মনাদা বলেন, “কি করে বলি তা জানি না কিন্তু আমি সময়টা সত্যি ঠিকঠাক বলতে পারি“ মনাদার দাদা শঙ্করবাবু। উনিও ভাইয়ের এই ঘটনায় যারপরনাই আশ্চর্য। তিনিও বলেন, “ছোট থেকে দেখছি ভাই ঘরির সময় বলতে পারে কারও সাহায্য না নিয়েই।” শুধু পরিবারের বৃত্তেই এই অবাক ঘটনা সীমাবদ্ধ নয়। দুবব্রাজপুর এলাকার পুরপিতা নাজির হোসেনের মন্তব্য, “এলাকায় মনদা খুব প্রিয় মানুশ। সবাই তাকেঁ ভালোবাসে। মনাদা সত্যি মানব ঘড়ি। কি করে যে উনি ঘড়ির সময় বলতে পারেন কে জানে? আমরা বাস্তবিকই অবাক হয়ে যাই।” প্রকৃতই মনাদা মানব ঘড়ি। প্রতিথযশা চিকিৎসক ছবি নন্দী বলেন, আমাদের প্রতিটি প্রাণীর শরীরে ও মানবদেহে একটা বায়োলজিক্যাল ক্লক আচ্ছে। যেহেতু মনোতোষবাবু জন্মান্ধ তাই তাঁর পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের মধ্যে চারটি কার্যকর।বাকি ইন্দ্রিয়টি তাঁর অজান্তেই জাঁকিয়ে বসেছে ওঁর বায়োলজিক্যাল ক্লকের উপর। তাই তিনি অবচেতন মন থেকে অনায়াসেই সময় বলে দিতে পারেন। ১৯১৭ সাল। দুনিয়াকে চমকে তিন জীববিজ্ঞানী জেফরি হল, মাইকেল রসবশ ও মাইকেল ইয়াং নোবেল পুরস্কারের শিরোপা ছিনিয়ে নেন।তাঁদের গবেষণার বিষয় ছিল, শরীরের প্রতিটি ছন্দ নিয়ন্ত্রণ করে বায়োলজিক্যাল ক্লকের নিয়ন্ত্রিত প্রভাব। আর সেই গবেষনার মলিকুলার মেকানিজিম কন্ট্রোলিংটাই বিশ্বকে জানান দিল বায়োলজিক্যাল ক্লকই হলো শরীরের প্রকৃত পরশ পাথর। সুদূর মার্কিন মুলুকের তিন নোবেল জয়ী জীববিজ্ঞানীর রিসার্চের পাতার জটিল সমীকরণ থেকে বীরভুমের হেতমপুরের মনাদা তাই যেন আজ জীবন্ত বায়োক্লকের বিমুর্ত প্রতীকে রুপান্তরিত। মনাদা, আপনি মানব ঘড়ি হয়েই দীর্ঘজীবি হোন আমাদের মাঝেই। ভালও থাকুন। সুস্থ থাকুন।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours