সুবীর পাল, এডিটর, দ্য অফনিউজ:

প্রথম দৃশ্য (যদি এমনটা হতো): ইডেন উদ্যান থেকে বলছি অজয় বসু। আপাতত সারা খেলাটা কেমন যেন খুবই প্রথাগত। নতুনত্ব কোথায়? একেবারে অন্তিমলগ্ন চলছে ভারত পাকিস্তানের টেস্ট ম্যাচ। খেলার শেষে একদম শেষ ওভারের শেষ বল। বল করতে আসছেন ইমরান খান। হাইকোর্ট প্রান্ত থেকে দৌড় শুরু করেছেন। অপর দিকে ব্যাট হাতে তৈরি কপিল দেব। একি? একি ঘটলো। সপাটে ব্যাট ঘুরিয়েছেন। ওভার বাউন্ডারি। বল যে স্টেডিয়ামের বাইরে।

দ্বিতীয় দৃশ্য (এমনটা যে ঘটলো): সংসদের ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে বলছি নির্মলা সীতারমন। আপাতত পূর্ণাঙ্গ বাজেট পরিবেশনের মধ্যে চমক কোথায়? সবই যেন বিগত বাজেটগুলোর কপিবুক। বিরোধীরা তো মোছে তা দিতে শুরু করেছেন, বাজেট পর্ব শেষ হলেই মোদীর মুন্ডুপাত করবে, এই বাসনায়। এপর্যন্ত তো সবই চলছিল একদম একঘেয়েমির ঘরাণায়। কিন্তু একি? বাজেট শেষ হতে মাত্র পাঁচ মিনিট বাকি। আরে একি ঘোষণা করলেন ভারতের অর্থমন্ত্রী? দেশবাসীকে চমকে দিয়ে বারো লক্ষ টাকা (আসলে বারো লক্ষ পঁচাত্তর হাজার টাকা) পর্যন্ত বার্ষিক আয়ের উপর সম্পূর্ণ ফ্ল্যাট রেটের নতুন কাঠামোতে আয়কর মুক্তের প্রস্তাব রেখে বসলেন। এতো সেই শেষ বলে ছক্কা হাঁকানো কান্ড। বিরোধীরা দেখলো মাথার উপর দিয়ে সমালোচনার সমস্ত অস্ত্র সংসদ ভবণ ছাড়িয়ে আপাতত আছড়ে পরলো পার্শ্ববর্তী যমুনার জলে।

উপরোক্ত দুটি দৃশ্য কেমন যেন একই নাটকীয়তায় ভরপুর। একদম শেষ প্রান্তে এসে চুড়ান্ত ক্লাইমেক্সের এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী থ্রিল। গতকাল ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ মোদী সরকারের তরফে কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করেছেন। ইতিমধ্যেই সারা দেশ জুড়ে মধ্যবিত্তের মধ্যে একটা আচমকা খুশির জোয়ার দেখা দিয়েছে। বিরোধীরা নিজস্ব রাজনৈতিক অস্তিত্বের তাগিদে সমালোচনা করতে হবে বলেই তাই ক্রিটিসিজিমের ট্রিগার টিপছেন বটে। কিন্তু সেই কার্তুজ বুমেরাং হয়ে যাচ্ছে ক্রমেই তাও তাঁরা বুঝতে পারছেন। কারণ সমগ্র দেশের বড় বড় অর্থনীতিবিদরাও ঘুণাক্ষরে অনুমান করতে পারেননি যে মধ্যবিত্তরা এতো বৃহৎ পরিসরে কর ছাড় পেতে চলেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই বাজেট নির্ভর মাস্টার স্ট্রোকে কার্যত এক ঢিলে দুই পাখি মারলেন। খুশ আমআদমি সঙ্গে বিরোধীরা কার্যত দিশেহারা।

আর এই বাজেটের নয়া নার্ভটা ততক্ষণে বুঝে গেছে ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্স। শনিবার সন্ধ্যায় কলকাতার হোটেল হিন্দুস্থান ইন্টারন্যাশনালে আয়োজিত হয়েছিল এই বাজেট সংক্রান্ত আলোচনা সভা। উল্লেখ্য এটাই, উপস্থিত সব বক্তারাই এই ইস্যুটাকে অতি গুরুত্ব সহকারে তাঁদের বক্তব্যের মধ্যে তুলে ধরেন। সকলেই একবাক্যে স্বীকার করেন, এমন কর ছাড় বেতনভুক্ত কর্মীদের অতিরিক্ত ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। ফলে খোলা বাজারে টাকার সূচক এতে তেজি হতে বাধ্য। এমনকি উদার অর্থনীতির পথও এতে অনেকাংশে মসৃণ হলো। এছাড়া এক কোটি নাগরিককে এবার থেকে আর আয়কর দিতে হবে না এই বাজেটের ফলে। এই আলোচনায় বক্তব্য রাখেন অর্থনীতির অধ্যাপিকা সাহানা রায়চৌধুরী, ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সের আয়কর বিশারদ পল্লভ গুপ্ত সহ ধ্রুব অ্যাডভাইসরসের তরফে আদিত্য হান্স, বৈভব জাজু, বসন্ত গোধ্যান, বিশাল জৈন প্রমূখ।

মধ্যবিত্তের আয়করে বৈপ্লবিক ছাড়ের পাশাপাশি অনগ্রসর জাতি ও অনগ্রসর উপজাতির মহিলারা নতুন উদ্যোগ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে দুই কোটি টাকা টাকা পর্যন্ত বিনা সুদে ঋণ পেতে পারেন। এতে উপকৃত হবেন দেড় লক্ষ মহিলা। এই ইস্যুতেও বক্তারা আলোকপাত করেন। তাঁদের বক্তব্য, দেশে অনগ্রসর শ্রেণির মহিলারা এর ফলে নয়া উদ্যোগ গঠনে উৎসাহিত হবেন।

আলোচকরা আরও বলেন, 'এই বাজেটে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে উৎসাহিত করার একটা প্রয়াস লক্ষ্য করা গেছে। এমএসএমই নথিভুক্ত শিল্পের ক্ষেত্রে রপ্তানিতেও বিশেষ ছাড় অবশ্যই ভারতের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তবে এআই প্রসঙ্গে বাজেটের কিছুটা সমালোচনা করেন আদিত্য হান্স। তিনি বলেন, 'এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিষয়ে বাজেটে যে বরাদ্দ করা হয়েছে তা নগন্য।' অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, বাজেটের মাধ্যমে পাঁচশো কোটি টাকা ব্যয় করে এআই সেন্টার ফর এক্সিলেন্স গড়ে তোলা হবে। এখানেই আদিত্যবাবুর মন্তব্য, 'উচিৎ ছিল এই খাতে নূন্যতম পাঁচ হাজার কোটি টাকার সংস্থান রাখা। দিনে দিনে এই দেশে এআইয়ের চাহিদা তুঙ্গে উঠেছে। এই ক্ষেত্রে কর্ম সংস্থানের ব্যাপক সুযোগ ঘটছে। তাই কেন্দ্রীয় সরকার এবিষয়ে আরও মনোযোগী হলে দেশের পক্ষে খুবই মঙ্গলকর হবে।' এছাড়াও বাণিজ্যিক ও কর্পোরেট ট্যাক্সের হার অপরিবর্তিত না রেখে কিছুটা হলেও বাড়তি ছাড় দিলে বণিকমহলও কিছুটা স্বস্তি বোধ করতেন বলে তিনি মনে করেন।

তবে বক্তারাও এও একবাক্যে মেনে নিয়েছেন সারা বিশ্বে যেখানে অর্থনৈতিক অস্থিরতা চলছে সেখানে ভারতের বুনিয়াদ বর্তমানে যথেষ্ট উৎসাহব্যঞ্জক। ভারতের মুদ্রাস্ফীতি ক্রমশঃ নিম্নগামী। আর দেশের জিডিপি গ্রোথ হলো উর্ধ্বমুখী। এখন আমাদের দেশে জিডিপি হার ৬.৩ শতাংশ। তা অচিরেই বৃদ্ধি পেয়ে ৬.৭ শতাংশ হবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে এই বাজেটকে ঘিরে। যা বিশ্ব অর্থনীতির পরিসরে ভারতের অবস্থান অনান্য অনেক দেশের কাছে ঈর্ষণীয় বলে তাঁরা অভিমত প্রকাশ করেন।

(www.theoffnews.com Indian Union Budget 2025-26)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours