সোমনাথ রায়, প্রত্নগবেষক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, দুর্গাপুর:

কাজাখস্তানের সমৃদ্ধ প্রত্নতাত্ত্বিক ল্যান্ডস্কেপ প্রাচীন সভ্যতা সম্পর্কে আকর্ষণীয় বিবরণ প্রকাশ করে চলেছে। আকমোলা এবং পাভলোদারের সাম্প্রতিক গবেষণায় একটি পাথরের খোদাই প্রকাশ করা হয়েছে যা ব্রোঞ্জ যুগে একটি মানুষের মুখ এবং সমাধিস্থলের চিত্র তুলে ধরেছে।

কাজাখ প্রত্নতত্ত্ব তার অসাধারণ আবিষ্কারের মাধ্যমে শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক জগতকে সমৃদ্ধ করে না উপর্যুপরি কাজাখস্তান সমাজের প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় বিকাশের প্রধান পর্যায়গুলিও প্রকাশ করে। কাজাখস্তানের স্যান্ডিকটাউ জেলায় আকমোলা অঞ্চলে প্রতিরোধমূলক ওরমান অভিযানের অংশ হিসাবে একটি রুটিন পরিদর্শনের সময় আঞ্চলিক জরুরী পরিস্থিতি বিভাগের কর্মীরা পাথরে খোদাই করা একটি মানব মুখের আকারে একটি রহস্যময় প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের সন্ধান পেয়ে আস্তানার প্রত্নতাত্ত্বিকদের সেটি পরীক্ষা করার জন্য আমন্ত্রণ জানান৷ তাঁদের থেকে বিদেশী প্রত্নতাত্ত্বিকরাও এই ঐতিহাসিক আবিষ্কারের বিষয়ে জানতে পেরেছিলেন। একটি গ্রানাইট বোল্ডারের গায়ে খোদাই করা এই নিদর্শনটির মাপ ২৭ সেমি x ২১  সেমি এবং এটি পশ্চিম - দক্ষিণপশ্চিম দিকে অভিমুখী। এই রিলিফের পাশে একটি হরিণের ভগ্ন দশায় খোদাই মূর্তি এবং কাছাকাছি একটি পাথরের ছাদ একটি আচার-অনুষ্ঠানের স্থান বলে অনুমিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, খোদাই ভাস্কর্যটি কোন যুগের তা নির্ধারণ করা বেশ সমস্যার। বিজ্ঞানীরা এই বিষয়ে দ্বিধাবিভক্ত। একটি পক্ষ দাবি করছেন যে ব্রোঞ্জ যুগে এটির সৃষ্টি, অন্যরা অনেক পরের তুর্কি যুগে এটি তৈরি হয়েছিল বলে মনে করেন। 

‘আস্তানা টাইমস’’ জানিয়েছে যে অ্যালকি মার্গুলান ইনস্টিটিউট অফ আর্কিওলজির বিশিষ্ট বিজ্ঞানী সের্গেই ইয়ারিগিন মনে করেন যে খোদাইটি সম্ভবত ব্রোঞ্জ যুগের। ইয়ারিগিন বর্ণনা করেছেন, "মুখটি স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান, বড় চোখ, একটি দীর্ঘ সোজা নাক এবং পুরু ঠোঁট।” তিনি উল্লেখ করেছেন যে মধ্য এশিয়া এবং পূর্ব ইউরোপের ব্রোঞ্জ যুগের বসতিগুলিতে একই রকম খোদাই পাওয়া গেছে। তিনি অবশ্য দক্ষিণ সাইবেরিয়ার প্রারম্ভিক লৌহ যুগে এবং মধ্যযুগীয় তুর্কি সংস্কৃতিতে একইরকম খোদাই ভাস্কর্যের উপস্থিতির কথাও বলেছেন যা ইউরেশীয় স্টেপস জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। এই সমান্তরালতা সত্ত্বেও, ইয়ারিগিন জোর দিয়েছিলেন যে নিদর্শনটির সঠিক সময়কাল অনিশ্চিত রয়ে গেছে, কারণ এটি বিভিন্ন ঐতিহাসিক যুগের অন্তর্গত হতে পারে, এমনকি সাম্প্রতিক কালের হওয়াও অসম্ভব নয়। 

স্যান্ডিকটাউ জেলা ফায়ার সার্ভিসের কর্মচারী নুরসুলতান আশকেনভ এবং আখমেত জারিপভ এই অসামান্য আবিষ্কারটি করেছিলেন। জরুরী পরিস্থিতি বিভাগ পাথরে খোদাই মানব মুখটিকে তখন থেকে তার নিজের সুরক্ষায় রেখেছেন। স্যান্ডিকটাউ জেলার জরুরী পরিস্থিতি বিভাগের প্রধান আসাট ঝাংগোজিন বলেছেন - “আমাদের প্রাথমিক দায়িত্বে নিয়োজিত থাকাকালীন এইরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করা অত্যন্ত সন্তুষ্টির কারণ। তাছাড়াও, আমি বিশ্বাস করি যে এই আবিষ্কার শুধুমাত্র আমাদের জেলাতেই নয়, সমগ্র দেশে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে”৷ এই অঞ্চলের সকলেই আশা করছেন যে এই আবিষ্কারটি অন্যান্য প্রত্নবিদদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করবে এবং এই অঞ্চলে আরও প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানের উৎসাহ দিতে সক্ষম হবে।

পাভলোদার অঞ্চলে ব্রোঞ্জ যুগের গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার - পাভলোদার অঞ্চলের কোকটাস কমপ্লেক্সে, পাভলোদার পেডাগোজিকাল ইউনিভার্সিটির গবেষকরা প্রত্নতাত্ত্বিক খননের সময় প্রচুর সংখ্যক বিরল এবং মূল্যবান নিদর্শন পেয়েছেন। কোকটাস সাইটে ২০টিরও বেশি কবরের ঢিবি রয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি সাকা যুগের। নিদর্শনগুলির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, খ্রিস্টপূর্ব মধ্য-১৩শ থেকে ৮ম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ের একটি ব্রোঞ্জ বর্শা যা সারগারিন-আলেক্সিয়েভ সংস্কৃতি থেকে এসেছে বলে জানা যায়। অ্যাসিলবেক ইয়েলমান, একজন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, এই বর্শাটি খুঁজে পেয়েছেন, যা এলাকাটির জন্য অনন্য এক আবিষ্কার। বর্শা ছাড়াও রান্নাঘরের মৃৎপাত্রের বেশ কিছু টুকরোও আবিষ্কৃত হয়েছে। 

(www.theoffnews.com human face sculpture Kazakhstan)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours