মল্লিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিচার রাইটার ও লেকচারার, আহমেদাবাদ:
ছোট বেলায় মায়ের মুখে গল্প শুনে পরিচয়, গোল গোল চশমার নীচে চোখ দুটো ছোট হলেও কি শান্ত আর তেজী মনে হয়েছিল। মাকে নাকি আড়ালে কলেজের ছেলেরা সুভাষ চন্দ্র বলতো, কারণটা মেয়ের স্পর্ধা, সবাই মিলে কোনও প্রফেসরের ক্লাস বয়কট করলে, একা মা ক্লাস করতে যায়, আর তিনিও একাই একজন ছাত্রী নিয়ে পড়াতে শুরু করেন, আস্তে আস্তে একটি দুটি মেয়ে এসে যোগ দেয়, তারপর অর্ধেক ক্লাস।
সুভাষচন্দ্র মানে একটাই লাইন আমার কাছে, "যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে।" এক কালে বাঙালিকে বুকের পাঁজর জ্বালিয়ে নিয়ে চলতে ইনিই শিখিয়ে ছিলেন।
শ্যামবাজারের পাঁচ মাথার মোড়ে এসে প্রথম কলকাতা চিনতাম। ঘোড়ার মুখের দিকে, লেজের দিকে কোন রাস্তা। ১৬ বছর বয়সে মফঃস্বল থেকে আসা একলা মেয়েটি প্রাক্টিক্যাল ক্লাস করতে যেত কলেজ স্ট্রীটে আপনার মূর্তির ভরসায়।
পড়াতে পড়াতে একবার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক শংকরবাবু বলেছিলেন, "সুভাষ চন্দ্র এমন মানুষ যাঁর জন্মদিন আছে, মৃত্যু দিন নেই। একটা আশার আলোর নাম সুভাষ!"
ছোট বেলায় মাঝে মাঝে দেখতাম হাওড়া স্টেশনে, বাস স্ট্যান্ডের গায়ে লেখা, "নেতাজী ফিরে আসবেন!"
বুঝতাম ইনি একজন এমন মানুষ যিনি মৃত্যুঞ্জয়ী! যাঁর অপেক্ষায় থাকে মানুষ দিনের পর দিন। মায়ের মুখে শুনেছি শোলমরীর সাধুর কথা, মায়েদের পাড়ার ছেলেরা দল বেঁধে নাকি ওনাকে দেখতে গিয়েছিল। বুঝতে পারতাম আজও তরুণ প্রজন্ম যুগে যুগে হন্যে হয়ে যাকে খোঁজে সেই ব্যক্তিত্ব হলেন সুভাষচন্দ্র!
এরপর বিয়ের পরে দেখি আমার স্বামীর অবসর যাপন সুভাষ চন্দ্রের ওপর পড়াশুনো, জানতে পারি শশুর মশায়ের সাথে সুভাষ চন্দ্রের দাদা সুরেশ বোস এর আলাপ পরিচয়। সুরেশ বোস বলেছিলেন "সুভাষ আমায় রাখী পাঠায়।"
এসব শোনার পরে ছাই আর তার ডিএনএ টেস্টিং বড় হাস্যকর লাগে। অনুজ ধরের back from dead, conundrum আসার পর থেকে অনেক ধোঁয়াশা কাটতে থাকে। চন্দ্রচূড় ঘোষ আর অনুজ ধরের রিসার্চ জানায় তাইওয়ানের সেই বিমান দূর্ঘটনাতে মৃত্যু হয়নি ওনার, রাশিয়ার জেলে এক মহিলা সাংবাদিক দেখেছিলেন তাঁকে। এরপর তিব্বতের দুর্গম পথ ধরে অতি কষ্টে এসে পা রাখেন নিজের দেশে, ভারতবর্ষে।
মনে মনে ভাবি এক কালে যার কণ্ঠস্বর শুনে দেশবাসীর রক্ত চলকে উঠেছিল, মেয়েরা তার ডাকে অনায়াসে গায়ের গয়না খুলে দিয়েছিল সেই স্বাধীন ভারত বর্ষে এসে মানুষটি যখন জানলেন তিনি নাকি জাতীয় শত্রু, তখন কতখানি কষ্ট পেয়েছিলেন!
ভাবলে ভীষণ কষ্ট অনুভব করি। নামটি ও পেলেন ভারী অদ্ভুত গুমনামি বাবা, নামটাই যার গুম হয়ে গেছে!
সত্যিই কি তথাকথিত তদানীন্তন দেশীয় পিতা, চাচা শ্রেণির চক্রান্তকারীরা পেরেছেন ওই মানুষটিকে আপামর ভারতবাসীর মন থেকে গুম করে দিতে? এতই কি সহজ ! নেতা তো হাজার হাজার কিন্তু নেতাজী তো একজনই হন!
ভরসা, বিশ্বাসের আর এক নাম সুভাষ চন্দ্র! যিনি আজ ১২৮ বছর বয়সেও শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষদের স্বপ্ন দেখার সাহস দেন! আজও নিশ্চয় দেশের কোনও না কোনও মা সন্তানদের তাঁর গল্প বলে শেখাবেন মাথা উঁচু করে বাঁচতে। ২৩শে জানুয়ারি আসলে শিরদাঁড়া সোজা রেখে অন্যায়ের সাথে আপোষ না করার বার্তাবহ একটি দিন। জয় হিন্দ।
(www.theoffnews.com Netaji Subhash Chandra Bose)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours