দেবর্ষি মজুমদার, সিনিয়র জার্নালিস্ট, বীরভূম:

আমাদের দেশে বিশ্বের বলিষ্ঠতম গণতন্ত্র বিরাজমান। রাজতন্ত্র কবে বিদায় নিয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। তাহলে প্রজা কোথা থেকে এলো? অথচ আজকের এই বিশেষ দিনে আখছার ভাষণে কিম্বা শুভেচ্ছা বার্তায় জেনে না বুঝে প্রজাতন্ত্র দিবস বলা হয়। ভাববার বিষয়। যারা জেনে ইচ্ছে করে ভুল বলেন অর্থাৎ প্রজাতন্ত্র দিবস বলেন, তাদের জন্য এই লেখা নয়। তারা অসংশোধনীয়। এটা অবশ্যই ঠিক যে আমার উপর নেই ভুবনের ভার। তাই তাদের কথা বাদ থাক। যারা জানেন না, তারা বুঝলেও বুঝতে পারেন। 

আজকের এই বিশেষ দিন আমাদের কাছে গর্বের। কারণ আজকের দিনে আমরা আমাদেরকে অর্থাৎ নিজেদেরকে দেশের সংবিধান প্রদান করি। শপথ নিই সংবিধানের মর্যাদা সর্বদা রক্ষা করবো। 

এই সর্বজন শ্রদ্ধেয় সাধারণতন্ত্র দিবসে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি বিখ্যাত গানের লাইন খুবই প্রাসঙ্গিক হবে। "-- আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে--" আমাদের আলাদা করে কোনও রাজা নেই। অনেকেই ভুল করে "রিপাবলিক ডেই" এর বাংলা তর্জমা করে বলে থাকেন প্রজাতন্ত্র দিবস।" কিন্তু আমরা কেউ প্রজা নই। গণতন্ত্রে জনসাধারণ সর্বেসর্বা। তাই আমরা সাধারণতন্ত্রের জয়গান গাই। 

আমাদের প্রথম সাধারণতন্ত্র দিবস পালিত হয় ২৬ জানুয়ারি, ১৯৫১ সালে। এই বছর ২০২৫ সালে সংবিধান গৃহীত হওয়ার ৭৫ বছর পূর্ণ হচ্ছে, যা ভারতবর্ষের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক বলা যায়। এই বছর ভারত ৭৬তম সাধারণ তন্ত্র দিবস উদযাপন করছে। 

প্রতি বছর কেন্দ্র সরকার এই উপলক্ষ্যে একটি নির্দিষ্ট থিম নির্বাচন করে থাকে। এবছরের থিম 'স্বর্ণিম ভারত'। যা দেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং উন্নয়নের যাত্রাকে তুলে ধরেছে বা ধরবে।

১৫ই আগস্ট ১৯৪৭ এ ভারত স্বাধীন হলেও দেশের প্রশাসক প্রধান হিসেবে তখনও বহাল ছিলেন ষষ্ঠ জর্জ। লর্ড লুই মাউন্টব্যাটেন ছিলেন গভর্ণর জেনারেল। তখন আমাদের হাতে কোনও স্থায়ী সংবিধান ছিল না। ঔপনিবেশিক ভারত শাসন আইনে কিছু রদবদল ঘটিয়েই দেশ শাসনের কাজ চলছিল। বলে রাখা ভালো, ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২৮ আগস্ট একটি স্থায়ী সংবিধান রচনার জন্য খসড়া কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন ভীমরাও রামজি আম্বেদকর। শান্তিনিকেতনের কলাভবনের অধ্যক্ষ শিল্পাচার্য নন্দলাল বসুকে ভারতের সংবিধানের সচিত্র অলংকরণ বা নকশা চিত্রিত করার দায়িত্ব দেন ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু। সেই কাজে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে ভারতের স্বকীয় সত্ত্বা তুলে ধরতে সংবিধানের পাতায় তিনি যেমন এঁকেছেন বুদ্ধ মূর্তি, তেমনি এঁকেছেন গান্ধীজীর ডাণ্ডি অভিযান, নেতাজীর আজাদ হিন্দ ফৌজ, জাতীয় প্রতীক সারনাথের অশোক স্তম্ভের সিংহ। সারা ভারতের প্রতীক হুবহু সাদৃশ্য রেখে একত্রিত করে তিনি চিত্রিত করেছেন। জাতীয় সংহতি হিসেবে ৪ নভেম্বর ১৯৪৭ তারিখে কমিটি একটি খসড়া সংবিধান প্রস্তুত করে গণপরিষদে জমা দেয়। চুড়ান্তভাবে সংবিধান গৃহীত হওয়ার আগে ২ বছর, ১১ মাস, ১৮ দিন ব্যাপী সময়ে গণপরিষদ এই খসড়া সংবিধান আলোচনার জন্য ১৬৬ বার অধিবেশন ডাকে। এই সমস্ত অধিবেশনে জনসাধারণের প্রবেশের অধিকার ছিল। শেষে ১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর স্বাধীন ভারতের সংবিধান গৃহীত হয়। যেহেতু ১৯৩০ সালের ২৬ জানুয়ারিতে, প্রথম স্বাধীনতা দিবস পালন হয়, সেহেতু ২৬ জানুয়ারি দিনটিকে শ্রদ্ধা জানিয়ে, ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি থেকে ভারতের সংবিধান কার্যকর করা হয়। সেদিন থেকে আমরা ভারতবাসীরা এই দিনটিকে যথাযথ মর্যাদার সাথে পালন করে আসছি।

(www.theoffnews.com Republic day Indian Constitution)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours