সোমনাথ রায়, প্রত্নগবেষক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, দুর্গাপুর:

(বৃদ্ধ সন্ন্যাসী এবং একজন পন্ডিতের আখ্যান)

বিভিন্ন ধর্মশাস্ত্রে অসাধারণ পারদর্শী জনৈক বিশিষ্ট এবং বিখ্যাত পণ্ডিত ব্যক্তি একদিন এক বৃদ্ধ সন্ন্যাসীর সাক্ষাতে গিয়ে বললেন, “আমি জীবনের সারসত্য জানতে চাই। অনুগ্রহ করে আমাকে দিকনির্দেশ করুন।”

বৃদ্ধ সন্ন্যাসী শুধোলেন, “আপনি কে?”

পণ্ডিত ব্যক্তি বললেন, “আপনি জানেন না আমি কে? অসংখ্য ধর্মশাস্ত্রের আমি একজন বিদ্বান পণ্ডিত আর এই শহরে আমার বিশাল খ্যাতি আছে। আমি বহু ধর্মশাস্ত্র অধ্যয়ন করেছি সত্য, কিন্তু সত্য কী আমি এখনও জানতে পারিনি। সেই সারসত্যকে জানবার আশায় আমি আপনার কাছে এসেছি।"

বৃদ্ধ সন্ন্যাসী তাঁকে বললেন, “আপনি যা কিছু জানেন সেগুলো সব লিখিত আকারে নিয়ে আসুন, কারণ আপনি এরমধ্যেই যা যা জানেন সেগুলো আর নতুন করে শিখবার দরকার নেই। আপনি যা জানেন না সেগুলো নিয়ে আমরা যদি আলোচনা করি তাহলেই আপনার সবচেয়ে বেশি লাভ হবে।”

জ্ঞানী ব্যক্তি ফিরে গিয়ে লিখতে শুরু করলেন। তাঁর এত জ্ঞান ছিল যে তিন বছর লেগে গেল সেগুলো লিপিবদ্ধ করতে।

তিন বছর পরে পণ্ডিত মশাই বস্তার মধ্যে হাজার হাজার পাতা ভরে বৃদ্ধ সন্ন্যাসীর কাছে আবার এলেন। সেই বিশাল কাগজের স্তূপ দেখে বৃদ্ধ সন্ন্যাসী বললেন, “এই বয়সে এতো কিছু পড়া আমার পক্ষে অসম্ভব। আপনি আরও সংক্ষেপে লিখে নিয়ে আসুন।” 

জ্ঞানী ব্যক্তি ফিরে এসে সংক্ষিপ্তসার লিখতে শুরু করলেন। এতে তাঁর তিন মাস সময় লাগল।

তিন মাস পরে তিনি বৃদ্ধ সন্ন্যাসীর কাছে ফিরে এলেন। এবারে তাঁর সঙ্গে অনেক কম কাগজ থাকলেও এখনও হাজার হাজার পাতা ছিল।

বৃদ্ধ সন্ন্যাসী বললেন, “এটা এখনও বড্ড বেশি বেশি। আমার শরীর দুর্বল হয়ে গেছে। চোখে প্রায় দেখতে পাই না তাই এতো কিছু পড়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আপনি এর সারাৎসার লিখে নিয়ে আসুন।”

বিদ্বান ব্যক্তি ফিরে গেলেন আর সাত দিন পরে কয়েকটি কাগজে তাঁর জ্ঞানের বহরের সংক্ষিপ্তসার লিখে নিয়ে এলেন।

বৃদ্ধ সন্ন্যাসী সেগুলো দেখে বললেন, “আপনি তো নিজের চোখেই দেখতে পাচ্ছেন যে সত্যিই আমি একজন বুড়ো মানুষ আর বেশি পড়ার ক্ষমতা আমার নেই। কখন যে সেটা আপনি বুঝতে পারবেন!…যান, এটা আরও সংক্ষেপ করে নিয়ে আসুন।”

একথা শুনেই ওই জ্ঞানী মানুষ এবার বুঝতে পারলেন বৃদ্ধ সন্ন্যাসী এতদিন ধরে কী বলতে চেয়েছেন। তিনি তৎক্ষণাৎ পাশের একটা ঘরে চলে গেলেন আর একটা ফাঁকা সাদা কাগজ হাতে নিয়ে ফিরে এলেন।

এটা দেখে বৃদ্ধ সন্ন্যাসী ফোগলা দাঁতে মুচকি হেসে বললেন, “এই ফাঁকা কাগজ মানে আমি শূন্য, সম্পূর্ণ ফাঁকা…এবার আপনি জানবার আর শিখবার উপযুক্ত হয়ে উঠলেন কেন না আপনি সারসত্য বুঝেছেন যে আপনি কিছুই জানেন না”

প্রাপ্ত শিক্ষা:

শিক্ষার প্রথম ধাপ – আমি কিছুই জানি না সেটা জানা। আমি কিছুই জানি না – এটা উপলব্ধি করতে প্রচণ্ড সাহস আর মনের জোর থাকা প্রয়োজন। 

(www.theoffnews.com truth knowledge)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours