সোমনাথ রায়, প্রত্নগবেষক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, দুর্গাপুর:
লাতিন আমেরিকান (বলিভিয়া) উপকথা
মূল লেখক: আমালিয়া দ্য অরদোনেজ
আমার ছোট্ট সোনা বন্ধুরা, জানো তো, অনেক অনেক দিন আগে একটা বনের ধারে একদম একটা ছোওট্ট কুঁড়ে ঘরে একটা গরীব চাষা আর চাষার বৌ বাস করত কিন্তু তাদের মেয়ে ছিল ভীষণ ভীষণ সুন্দরী। সেই রূপবতী কন্যে একদিন বনে বেড়াতে গেল আর খানিকটা যাওয়ার পর দেখল একটা গাছের গোড়ায় একটা সাদা ইঁদুর ঘুমিয়ে আছে। সে তাকে হাতে তুলে নিল আর নিজের মনেই বলল - “আমি এটাকে বাড়ি নিয়ে গিয়ে পুষব”।
সে একটা ছোট্ট কিন্তু দারুণ সুন্দর জিনিস খুঁজে পেয়েছে। তাই না? কিন্তু ইঁদুরটা তাকে বলল - “আমি তোমার কাছে মিনতি করছি, দয়া করে আমাকে তোমার বাড়ি নিয়ে যেও না। আমাকে বন্দী করে রেখ না। আমি ইঁদুরদের রাজা আর তুমি যদি আমাকে ছেড়ে দাও তুমি যা চাইবে আমি তাই দেব, আমার অসাধ্য কিছু নেই”। মেয়েটি তো আহ্লাদে আটখানা, কারণ না চাইতেই জল! সে বলল - “আহা, সে তো দারুণ ব্যাপার!”
ইঁদুর বলল - “তোমারই যখনই কিছু দরকার হবে, শুধু এই ওক গাছের গোড়ায় আসবে আর বলবে - ‘আমার ছোট্ট ইঁদুর, আমার ছোট্ট সাদা ইঁদুর, একবার বাইরে এসো, তোমাকে আমার দরকার’। আমি সঙ্গে সঙ্গে তোমার সামনে হাজির হয়ে তোমার মনোবাসনা পূর্ণ করব”।
ৎৎৎমেয়েটি মনে মনে দ্রুত ভেবে নিল। তারপর সে বলল - “আরে পরেফরে নয়, আমি এখনই চাইছি। আমাদের কুঁড়ে ঘরের জায়গায় একটা সুন্দর খামার বাড়ি করে দাও”।
“ওটা হয়ে গেছে”, ইঁদুর বলল। “যাও, নিজের চোখেই দেখগে।”
মেয়েটি ছুটতে শুরু করল। যখন বাড়ি গিয়ে পৌঁছল - কী আশ্চর্য! তাদের বদখচ কুঁড়ে ঘরটার জায়গায় সুন্দর একটা খামার বাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার বাবা-মা আনন্দে আত্মহারা, আর তার তো কথাই নেই। সে ভাবল - “ইঁদুরটাকে গিয়ে আমার ধন্যবাদ দেওয়া উচিত”। সেই মুহূর্তে তার প্রেমিক এসে হাজির হল। সে ছিল একটা হাড় হাভাতে চাষা আর তাকে সত্যি কথাটা বলা দরকার। “তুমি কি আর আমাকে বিয়ের কথা বলার সাহস পাবে? আমাদের অবস্থা এখন ঢের ভাল হয়েছে। এই সুন্দর বাড়িটার দিকে একবার তাকিয়ে দেখ।”
তারপরে মেয়েটা ভাবতে লাগল - “আচ্ছা বোকামি করলাম তো! আমি কেবল একটা বাড়ি চাইতে গেলাম? আমার একটা প্রাসাদ চাওয়া উচিত ছিল।”
সে আবার ওক গাছের কাছে ফিরে গেল আর চীৎকার করে ডাকল - “আমার ছোট্ট ইঁদুর সোনা, আমার ছোট্ট সাদা ইঁদুর, দয়া করে আমাকে একটা প্রাসাদ বানিয়ে দাও।” বাড়ি ফিরে এসে দেখল সেই জায়গায় একটা প্রাসাদ তৈরি হয়ে গেছে।
প্রাসাদের প্রবেশ দ্বারে যাওয়ার আগেই সম্ভ্রান্ত পরিবারের একজন সুদর্শন যুবক তার সামনে হাজির হয়ে তাকে বিয়ে করার অনুমতি চাইল।
বিয়ের সম্ভাবনায় মেয়েটির মুখচোখ ঝলমল করে উঠল। কিন্তু তারপর ভেবে দেখল, “না, আমি এর থেকেও ভাল কিছু পেতে পারি।” সে ওই অভিজাত ছেলেটিকে পাত্তা না দিয়ে আবার সেই ওক গাছের কাছে গেল। তারপরে সে জোর গলায় দাবি করল - “আমি রাণী হতে চাই। আমি চাই তুমি আমাকে একটা রাণীর প্রাসাদ বানিয়ে দেবে”।
এবারে একটা মোক্ষম জিনিস চাওয়া হয়েছে, তাই না? সে ইঁদুর রাজাকে বলল - “আমি একজন রাজাকে বিয়ে করতে চাই”।
“খুব ভাল কথা” - ইঁদুর রাজা সঙ্গে সঙ্গে সম্মতি জানাল। সেই কন্যা আবার স্বস্থানে ফিরে গেল। সেখানে তখন রাজগৃহের উপযুক্ত একটি দুর্গপ্রাসাদ বর্তমান। সে প্রাসাদের দোরগোড়ায় পৌঁছাল আর প্রাসাদ থেকে তাকে সাদর অভ্যর্থনা করতে একজন রাজপুত্র ছাড়া আর কে বেরিয়ে আসবে? সেই সব দিন অদ্ভুত ভাল ছিল, সে সব বহুদিন আগের কথা, সেই রাজপুত্র ছিল সম্ভবত ইংল্যান্ডের রাজপুত্র বা অন্য কোন দেশের।
যাইহোক, রাজপুত্র তাকে বিয়ে করতে চাইতেই সে তৎক্ষণাৎ সানন্দে সম্মতি জানাল। কিন্তু সে আবার ফিরে গেল সেই ইঁদুরের কাছে যার এবার মাথা গরম হতে শুরু করল। সে বলল - “শোন মেয়ে, তোমার আহিঙ্কে বড্ড বেশী। কোনও কিছুতেই তোমার মন ভরে না। তুমি এখনই এটা চাইছ, তারপরেই আবার ওটা চাইছ, সবসময় আরও ভাল, আরও আরও ভাল। এবার সাবধান হও।”
মেয়েটি বলল - “তুমি কিচ্ছু ভেব না। সবকিছু একদম ফাটাফাটি। আমি রাজার ছেলেকে বিয়ে করতে চলেছি। এখন আমি শুধু চাই যে আমি যা বলব ও তাই করবে, তাহলে আমিই বকলমে রাজ্যটা চালাব।”
ইঁদুর রাজার এবার সহ্যের শেষ সীমানায় পৌঁছে গিয়েছিল। সে মেয়েটার চোখের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে শেষে বলল - “আমি তোমাকে আগেই বলেছি এত উচ্চাশা ভাল নয়। এখন বাড়ি যাও”।
মেয়েটি এই ভাবতে ভাবতে বাড়ির দিকে রওনা দিল যে সেখানে গিয়ে রাজপুত্রকে ভেড়ার মত বশংবদ দেখতে পাবে, ও যা বলবে তাই পালন করতে প্রস্তুত। কিন্তু সে কীরকম অবাক হল ভাব যখন সে গিয়ে দেখল তাদের সেই পুরনো ভাঙাচোরা কুঁড়েঘরটা ফিরে এসেছে আর সেই পুরনো জামাকাপড় পরে সেখানে বসে আছে তার হতদরিদ্র বাবা মা। সে নিজের দিকে তাকাল, সেখানেও সুন্দর ড্রেস হাওয়া হয়ে গেছে। দারুণ দারুণ সুন্দর জামাকাপড়, বিশাল অট্টালিকা, গাড়িঘোড়া, সব হাওয়া। আমি কি বলছি তোমরা বুঝতে পারছ তো?
খেলাটা বুঝতে পেরেছ? যখনই মেয়েটা কিছু চেয়েছে, ইঁদুর রাজা তাকে ধোঁকা দিয়েছে, তাই মেয়েটাই শুধু ও যা চেয়েছে তাই দেখতে পেয়েছে, তাই না? ইঁদুর রাজা তাকে পরীক্ষা করছিল। আর সে কী করল? আরও আরও আরও চাইতে লাগল। ইঁদুর রাজার মন ছিল খুব শক্তিশালী, তার সাহায্যে সে মেয়েটি যা দেখতে চেয়েছিল তাই দেখাতে পেরেছিল। কিন্তু শেষে সে লক্ষ্মণের গণ্ডী পেরিয়ে গেল আর ইঁদুর রাজা তাকে যা সত্যি যা বাস্তব তাই দেখিয়ে দিল।
(www.theoffnews.com white mouse girl Amalia The Ordonez Latin America Bolivia folk tales)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours