দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:
কেষ্ট - কাজল দ্বৈরথে জেলা তৃণমূলে অন্য রূপ। এই দ্বন্দ্বের অবসান ঘটাতে কোর কমিটিতে অনুব্রত মন্ডল তথা কেষ্টর অন্তর্ভুক্তি। তবুও এই দ্বন্দ্ব যেন থেকেই যায়। জেলে যাওয়ার আগে জেলায় শেষ কথা ছিল কেষ্টর। তারপর পরিস্থিতি পুরো নিয়ন্ত্রণে চলে আসে কাজল শেখের হাতে। দাপুটে নেতা কাজল ফেসবুকে কেষ্ট বিরোধিতায় নেমে পড়েন। তারপর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নবজোয়ারের মাধ্যমে উত্থান কাজলের। লোকসভা নির্বাচনে সিউড়ি দুবরাজপুরে অনেকটা জায়গা উদ্ধার করতে পেরেছেন চিত্রাভিনেত্রী তথা শতাব্দী রায়। তাই কাজলের দিকে তিনি একটু হেলবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে জেলার বেশিরভাগ নেতৃত্ব কেষ্টর অনুরাগী। অবিংশবাদী নেতা হিসেবে কেষ্ট ছাড়া অন্য কাউকে মানতে তারা নারাজ।
সম্প্রতি কঙ্কালীতলা পঞ্চায়েতে কেষ্ট অনুগামী উপপ্রধানকে তার পদ থেকে সরানোর প্রচেষ্টা কিসের ঈঙ্গিত? সব মিলিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের নতুন কৌশলে কাজল শেখকে এগিয়ে দেওয়া, বিধানসভায় বুমেরাং হতে পারে বলে ধারণা তথ্যভিজ্ঞ মহলের ধারণা। বীরভূমে বিরোধী শক্তি দূর্বল। তবে, কাজল শেখ এবং কেষ্ট মণ্ডলের তারতম্য শাসক দল না করতে পারে, অনেকটাই অক্সিজেন পাবে বিরোধীদল। এই সুবিধা তারা কতটা লাগাতে পারবে, সেটা বড়ো কথা নয়। তবে বীরভূম তৃণমূল যদি রাই হয়, কেষ্ট বিনে রাই টিকবে না!
কেষ্ট যখন জেলে কেষ্টর বাড়ির দুর্গা পূজা, কালি পূজায় দায়িত্ব নিয়ে দলকে কাজল দেখিয়েছে, দেখ, আমি কেষ্টর বিরোধিতা করিনি। আমি কতো উদার। অনেক কেষ্ট অনুগামী এই দৃষ্টান্তে খুশি হন। কিন্তু কেষ্ট আসতেই কাজল, বোঝাতে চেয়েছে, ময়ুরাক্ষীর জল অনেক গড়িয়েছে। এবার বীরভূমের বেতাজ বাদশা অন্য কেউ। আর এখানেই ভোট পোলারাইজেশন হবার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। কাজল শেখ যত, মন্দিরে পূজা দেবেন, তত লাভ হবে বিজেপির, কোনও সন্দেহ নেই। কেষ্টর কীর্তন, পুরোহিতদের নিয়ে সভা, আর কাজলের মন্দির গমন এক নিত্তিতে মানুষ কোনদিন মাপবে না।
রবিবার রামপুরহাট বিধানসভা তৃণমূল কংগ্রেস বুথ সভাপতিদের নিয়ে সম্মেলনের আয়োজন হয় রামপুরহাট উচ্চবালিকা বিদ্যালয়ে। সেখানে সভার পর কাজলের সুরে সুর মেলান বীরভূম সাংসদ শতাব্দী রায়। তবে স্বীকার করলেন কোর কমিটিতে অনুব্রতর অন্তর্ভুক্তি কথা। এদিন তিনি বলেন, কোর কমিটিতে ছয় জন্য সদস্য ছিল। অনুব্রত মণ্ডলকে নিয়ে সাতজন হলো।
গতকাল বৈঠক শেষে কাজল শেখ বলেন, অনুব্রত মণ্ডল আমার রাজনৈতিক গুরু, আমার অভিভাবক। তাঁর নেতৃত্বে আস্থার কথা কোর কমিটির সকল সদস্যের মুখে শোনা যায়। কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায় চৌধুরী অনুব্রত মণ্ডলকে ক্যাপ্টেন হিসেবে জেলার সবাই মানে ও শ্রদ্ধা করেন বলে বক্তব্য রাখেন। সেই বক্তব্যে কাজল শেখ কোনও প্রতিবাদ করেননি।
তবে দিন পেরোতেই কাজলের গলায় ভিন্ন সুর শোনা যেতে থাকে। এবার সেই সুরের প্রতিধ্বনি শোনা গেল শতাব্দীর গলায়।
দলের অন্দরে গুঞ্জন উঠেছে যে, ভোটে জিতে ফের সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হতেই অবস্থান বদল করলেন শতাব্দী রায়। বীরভূম জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠক নিয়ে কাজল শেখের পাশেই দাঁড়ালেন তিনি৷ স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, অনুব্রত মণ্ডল কোনও চেয়ারপার্সন নন৷ তাঁকে কোর কমিটির সদস্য করা হয়েছে৷ এ অশুভ ইঙ্গিত ছাড়া কী? কাজল শতাব্দীর সমীকরণ, আর বিকাশ রায় চৌধুরীর দলকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা বিপরীত মুখী।
(www.theoffnews.com TMC Birbhum)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours