সুবীর পাল, এডিটর, দ্য অফনিউজ:

চোরি চোরি চুপকে চুপকে উৎপাদন অবাধে চলছে, ব্যবহার সমানে চলছে, দূষণও দাপটে চলছে।

সৌজন্যে প্লাস্টিক প্যাকেট।

চিন্তনের পরিধি বলতে আমাদের নিজস্ব সমাজে।

যেখানে সচেতনতার শুরুটা হোক না নিজেকে দিয়ে। আর একটু চেতনাযুক্ত হই না আমরা। আরম্ভটা করি না হয় যে যার ঘর থেকে। তবেই তো অচিরে ঘটবে এক স্বপ্নময় ইকো ব্যালান্স বিশ্ব।

এমনই ক্যাচ লাইনের একটা গভীর পরশ তখন তো কি স্পষ্টই না বর্ণময় রামধনু হয়ে ঝকঝক করছে উপস্থিত সবার চোখে মুখে। কেউ মাথা ঈষৎ ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানাচ্ছেন। অনেকেই আবার প্রশ্নোত্তর পর্বে সমর্থন করেছেন। দু'চারজন তো অস্ফুট স্বরে সায় দিয়ে বলছেন, বর্জ্য মুক্তির এটাই সঠিক পন্থা।

আসলে উপরিউক্ত ট্যাগগুলোর এক বাস্তব সম্মত আলোচ্য রসায়ণ ঘটেছিল কলকাতার ভারত চেম্বার অফ কমার্স'এর আপন সভাকক্ষে। গত ৪ অক্টোবর বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার অবসরে। এই বণিকসভার লেডিস ফোরামের উদ্যোগে। আলোচনার বিষয়বস্তু নির্ধারিত ছিল "সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক ব্যান এন্ড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট" শীর্ষকে। আলোচনায় অংশ নেন আয়োজক সংস্থার তিন কর্মকর্তা যথাক্রমে রাজকুমার অগ্রবাল, রেনুকা শাহ ও শিবানী বিঞ্জরাজকা।

বক্তাদের সম্মিলিত বক্তব্যে কয়েকটি তথ্য উপস্থিত সকলের কপালে ভাঁজ সৃষ্টি করেছিল অনায়াসেই। তাঁদের মতে, বিশ্বে প্লাস্টিক প্রথম উদ্ভাবন হয়েছিল ১৯০৭ সালে লিও বেকেল্যান্ডের উদ্যোগে। ১৯৫০ সাল থেকে এর বাণিজ্যিক উৎপাদন ক্রমেই মহীরুহ আকার নেয়। ১৯৭০ থেকে ১৯৯০, এই কুড়ি বছরে সারা বিশ্বের বর্জ্যের পরিমাপ বৃদ্ধি পেয়েছিল ৪ গুণ। প্লাস্টিকের বদান্যতায়। বর্তমানে গোটা পৃথিবীতে প্রতি বছর মোট প্লাস্টিক আবর্জনা সৃষ্টির পরিমাণ ৪০০ মিলিয়ন টন। এই হার বজায় থাকলে ২০৫০ সালে উক্ত বর্জ্য উৎপাদনের পরিসংখ্যান হবে বছরে ১,১০০ মিলিয়ন টন। অথচ মোট প্লাস্টিক বর্জ্যের মাত্র ৯% পুনর্ব্যবহারযোগ্য হচ্ছে, আর বাকি ৯১% এই বিশ্বে পরিবেশ দূষণের অন্যতম ভয়াবহ কারণে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

এমনই সঙ্কটময় তথ্য পরিবেশনের মধ্যেই আসল কথাটাই বলে ফেললেন এদিনের বিশেষ অতিথি বক্তা তথা রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের সচিব সদস্য এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিবেশ দফতরের প্রধান সচিব রাজেশ কুমার। তিনি জানান, আমরা মোটামুটি ভাবে উপরিউক্ত তথ্য সম্পর্কে সকলে কমবেশি ওয়াকিবহাল। প্লাস্টিক এই আধুনিক ডিজিটাল যুগে মানুষের অন্যতম সহচর ও বন্ধু। একে এড়ানো এই মুহূর্তে প্রায় অসম্ভব। বাস্তবে প্লাস্টিক কিন্তু আদৌ মানুষের কাছে ক্ষতিকারক বস্তু নয়। আসল ক্ষতির কারণ হলো প্লাস্টিক থেকে উৎসারিত বর্জ্য। আর ঠিক এখানেই আমরা আদতে সচেতন নই কেউই। আমরা এই সংক্রান্ত বিষয়ে স্লোগান তুলি, আলোচনা করি, সভা করি, অপরকে বোঝাই। ব্যাস ওই পর্যন্তই। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে আমরা কেউই সচেতন হয়েও আদপে সচেতন নই। তিনি জোরের সঙ্গে দাবি করেন, আগে আক্ষরিক অর্থে নিজেকে সচেতন করতে হবে, আপন ঘর থেকে শুরু করতে হবে। আমাদের সকলের যোগদানে সামগ্রিক পর্যায়ে সামাজিক হতে হবে। রাজেশবাবু একইসঙ্গে আবেদন করেন, ভারত চেম্বার অফ কমার্স নেতৃত্ব দিক প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহে, বিভিন্ন সমাজসেবী সংগঠন চালু করুক অভিনব বিপণন কেন্দ্র। যেখানে স্বল্প মূল্যে কিনে নেওয়া হবে প্লাস্টিক সৃষ্ট আবর্জনা। সমাজে বিভিন্ন বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের সিএসআর বিভাগের তরফে আরও বেশি সংখ্যক বর্জ্য পুনর্ব্যবহার প্রকল্প গড়ে উঠুক। তবেই তো এহেন বিপদের মোকাবেলা করা সম্ভব। অন্যথায় বিশ্বের দূষণমাত্রা রাক্ষুসে আকার ধারণ করলে সমগ্র মানবজাতির অস্তিত্বটাই বিপন্নের মুখে পড়ে যাবে অচিরে। তিনি এও বলেন, 'কেন্দ্র ও রাজ্যের প্লাস্টিকের বিষয়ে নানা বিধি নিষেধ আছে। আইনের সংস্থানও রয়েছে কঠোর ভাবে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। সমাজের প্রতিটি ঘরে ঘরে হাটে বাজারে প্রায় প্রত্যেকটা মানুষ অবাধে নিম্নমানের প্ল্যাস্টিক ব্যবহার করে চলেছে। আমরা নিজেরাই যদি অবোধ হই সরকার একা কতটা সামাল দেবে?"

তাইতো আক্ষেপের সুরে রবীন্দ্রনাথের উক্তি স্মরণ করেন, 'আমরা আরম্ভ করি, শেষ করি না; আড়ম্বর করি, কাজ করি না; যাহা অনুষ্ঠান করি তাহা বিশ্বাস করি না; যাহা বিশ্বাস করি তাহা পালন করি না...'

পরিশেষে আলোচনাচক্রের একটাই মহার্ঘ আবেদন, হে প্লাস্টিক ব্যবহারকারীগণ, তোমাদের চৈতন্য হোক।

(www.theoffnews.com plastic uses polution recycling)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours