মোনালিসা মুখোপাধ্যায়, ফিচার রাইটার, হুগলি:
আচ্ছা নারীবাদীরা বা নেড়িবাদীরা আপনারা প্রতিবাদ করছেন রাত জাগছেন, মিটিং মিছিল করছেন ভালো কথা। কিন্তু ফেসবুক সহ টোটাল সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে পুরুষের অযথা মুণ্ডপাত করছেন কোন হিসেবে? আর যে ঘটনার জন্য করছেন তাতে কিন্তু পুরুষের সাথে মেয়েও জড়িত শুনছি। অন্তত এমন কথা হাওয়ায় তো ভাসছেই।মেয়েরা মেয়েদের শত্রু এ তো সর্বজনবিদীত। তার প্রমাণ অনেকেই পেয়েছেন তাই না? এই রিল মামণি তার মায়ের বয়েসি নেড়িরা, সারাক্ষন নেচেকুঁদে বুকের আঁচল হাফ খুলে, ক্লিভেজ প্রদর্শন করে ভিডিও করনেওয়ালিরা তারা যখন তুলসীপাতা হয়ে আসেন, আর পুরুষ বিদ্বেষ দেখান তখন মা কালি বলছি, হাসব না কাঁদব ভেবে পাই না।
যত ছেলে আছে তাদের মায়েদের তাদের ছেলেদের সুশিক্ষিত করতে হবে, ট্রেনিং দিতে হবে ব্লা ব্লা। তাদের শেখাতে হবে মেয়ে মানেই যোনি নয়। খুব ভালো কথা। তো আপনার মেয়েকেও তো শেখাতে হবে পুরুষ মানেই এটিএম কার্ড আর পুরুষাঙ্গ নয়। আজকাল ওয়ো টোয়োতে ছেলে ছেলে মিলে বিছানা ভাগ করতে যাচ্ছে শুনি না, ছেলে মেয়ে মিলে তো যায়। কেন? শুধু ছেলেদের শেখাতে হবে?সে যাই হোক। সহবত শিক্ষা দু'জনের জন্য আছে৷ সেটা সমান ভাবে প্রযোজ্য। আপনার মেয়ে নারী স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে বই খুলে ঘুরে বেড়াবে আর কেউ দু'পাতা পড়ে চলে গেলে তার দোষ? সারাক্ষণ ছেলেরা শিক্ষা নেবে আর মেয়েরা ওপেন ফোরামে সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে, অর্ধনগ্ন হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে নারীদের রিপ্রেজেন্ট করবে তাই তো?
শুনুন,অ-নেকুপুষুসুন্টুনিমুন্টুনিরা সবার শিক্ষার প্রয়োজন। ধর্ষকের মধ্যে কাজ করে বিকৃত যৌন লালসা। সে মানুষ নয়, দানব। জানেন কি একটা তেতো কথা, এখন অনেক মায়ের বয়েসি মহিলার হাতে অনেক বাচ্চা ছেলে এখনো মলেস্টেড হয়।তারা সে কথা কোনদিন বলতে পারে না। মানসিক যন্ত্রণাতে ভোগে। এই লালসা ছেলে, মেয়ে সবার থাকে। সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ এই প্রবৃত্তি জয় করে ভালোভাবে বাঁচে। তাই প্রতিবাদ করছি বলে শুধুমাত্র ছেলেদের শাপবাপান্ত করে লাভ নেই।
মনে পড়ে পুলিশ সার্জেন্ট বাপি সেন কে? রাসলীলা করে ফেরা এক মেয়ের সম্মান বাঁচাতে নববর্ষের মধ্যরাতে দুষ্কৃতকারীদের হাতে খুন হয়েছিলেন কলকাতার রাস্তায়। আর যার জন্য হয়েছিল এই ঘটনা সে মেয়েটি সাক্ষী পর্যন্ত দেয়নি। কত বড় লজ্জার কথা বলুন তো। এরকম বহু ঘটনা আছে। মেয়েদের বাঁচাতে ছেলেরা বিপদে পড়েছে। ভবিষ্যতেও পড়বে।
যারা মোমবাতি নিয়ে মিছিল করছেন, দাবি টাবি নিয়ে ফেসবুকে ও সোশ্যাল মিডিয়ায় লাফালাফি করছেন, হলপ করে বলতে পারি রাস্তায় কোনও মেয়ে বিপদে পড়লে, তারা আগে পালাবেন। এগিয়ে আসবেন ছেলেরা। বহু প্রমাণ পেয়েছি। একটি মেয়ের সাথে অন্যায় কিছু হচ্ছিল, আমি সে বাসে তখন। সেখানে আমি প্রতিবাদ করে দেখেছি, মেয়েরা চুপ। উলটে ছেলেরা এগিয়ে এসে উচিত শিক্ষা দিয়েছে তাকে। এটাই হয়। মেয়েরা পিঠ বাঁচায় বেশী। নিজের বর যদি এগিয়ে যায় তো তাকে ডেকে নেয় এই বলে, "তুমি ছাড়ো না ওরা বুঝুক।" এই তো মেয়েদের মানসিকতা। শুধু ছেলেদের ব্লেম দিয়ে এগিয়ে যাওয়া যাবে না। ভাববেন আপনার জীবনে বাবা, ভাই, দাদা, স্বামী এরাও পুরুষ। এরা রাস্তায় ধর্ষণ করতে বেরোন না তাই না? ঠিক যেমন সব মেয়ে লীলা করতে বেরোয় না, তেমনি সব ছেলেও মেয়ের শরীর দেখতে বা শুয়ে পড়তে বেরোয় না। আর লিভ ইনের যুগ, চরম স্বাধীনতার যুগ। এই যুগে আপনি যদি সারাক্ষণ বলেন ছেলেকে শেখাও, ছেলেকে শেখাও ক্যায়সে চলেগা নেড়িবাদীরা?
মানছি সবাই আমরা তুলসীতলায় বাতি দিয়ে সতী, তাই বলে দিনরাত পুরুষদের গুষ্টি উদ্ধার করব?আচ্ছা রামমোহন, বিদ্যাসাগর এরাও পুরুষ ছিলেন। মেয়েদের জন্যই তো লড়েছিলেন? তখন এতো নেড়িবাদীরা ছিলেন না অবশ্য। কথায় কথায় আমি নারী। খুব ভালো। তো সমান অধিকার চাই বলে বাসে জেনারেল সিটের সুযোগ নিয়ে ছেলেদের সিট দখল করে বসেন কেন? অথচ মেয়েদের সিটে কোনও পুরুষ হয়তো তিনি প্রকৃতই ক্লান্ত, তবুও তাকে তুলে আমরা বসব কি তাই তো? তখন আমরা অবলা। ইয়েস আমরা অবলা আমাদের মুখ ছোটে শুধু পুরুষের বিরূদ্ধে। নিজেদের যাচাই করবার সাহস আছে আমাদের?
আমরা নারীবাদী নারীবাদী। আমরা সবসময় উদ্ধার করছি সবাইকে। বাড়িতে রান্না করে উদ্ধার করছি, একটু কাজ করে উদ্ধার করছি, ছেলেমেয়ের জন্ম দিয়ে উদ্ধার করছি। বিয়ে করে স্বামীর বাড়িতে থেকে, তার নিরাপত্তার ঘেরাটোপে থেকে, সামাজিক ভাবে, আর্থিক ভাবে তার ভরসায় থেকে তারপর সে পটল তুললে তার সম্পত্তি বা পেনশন ভোগ করে কাঁদতে থাকব আমরা অবলা। মেয়েদের কোনও বাড়ি টাড়ি হয় না অথচ বরের বাড়িতে গেড়ে বসে থাকে, কেউ আপন নয় ইত্যাদি। ছেলেদের জন্য কি আছে? জন্মের পর থেকে সংসারের জোয়াল টানার জন্য তাকে প্রস্তুত করা হবে। তাকে সবার দায় নিতে হবে৷ তার ক্লান্তি নেই। চাকরি করতেই হবে। মাস গেলে ভালো মাইনে আনতে হবে এ চাপ মাথায় নিয়ে তার রোজকার লড়াই। তার কান্না নেই। কলুর বলদ সে। যদিও সে কথা আমরা ভাবি না। মেয়ে বিয়ে দিয়ে উদ্ধার করে দিই তার শ্বশুর শাশুড়িকে, এমন হাবভাব। তো দেন কেন বিয়ে? রাখুন আপনার নারীবাদীকে বাপের ঘরে। বউ যখন এসেই শাশুড়িকে বৃদ্ধাশ্রম দেখায় ছেলেকে চাপে ফেলে কোথায় থাকেন নারীবাদীরা?
আমরা মেয়েরা ভাবি কি পেলাম না। কি পাচ্ছি সে হিসাব রাখি? আমরা তার বিনিময়ে কতটা দিচ্ছি ভাবি না। পুরুষও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয় কিন্তু। মানসিক চাপ তার আজন্ম। কেউ কোনদিন তাকে বসিয়ে খাওয়াবে না। সব কষ্ট সবই মেয়েদের নয়। আমরা মেয়েরা তো ড্যাং ড্যাং করে চাকরি বাকরি না করলেও একটা ছেলের ঘাড়ে এসে বসে যাই। তারপর মাছ ভাত খেয়ে, ফ্যান চালিয়ে শুয়ে ফেসবুক জুড়ে কেঁদে বেড়াই মেয়েদের নিজের বলে কিছু হয় না। সব ছিল বাপের ঘরে। তো বিয়ে করলি ক্যান মা? বাপও তো সেই জোয়ালটা টানে। আর যারা নিজে রোজগার করেন তারা কেউ মিলেমিশে সংসার গড়েন কেউ আবার উদ্ধার করছি এমন একটা হাবভাব করেন।
এত কথা বলার উদ্দেশ্য একটাই। নারীবাদী হয়ে লাভ নেই শুধু। যুক্তি তর্কে বিচার করুন। প্রেমিকের জন্য স্বামীকে খুন মেয়েরাই করে তার উদাহরণ আছে কিছু। আগে মেয়েরা বাস্তবে মেয়েদের পাশে দাঁড়ান। রাস্তায় কোনও মেয়ে বিপদে পড়লে না পালিয়ে এগিয়ে আসুন। আপনার পাড়ায় কোনও মেয়ে তার শ্বশুরবাড়িতে অত্যাচারিত হলে তার প্রতিবাদ করুন। ছেলে-বউ তাদের শ্বশুর শাশুড়িকে খেতে না দিলে সমবেতভাবে তার প্রতিবাদ করুন। কিছু দায় আগে নিতে শিখুন। সুস্থ সমাজ গড়তে মেয়েদের ভুমিকা কম নয়৷ নিজের মেয়েকেও সে শিক্ষা দিন। সারাক্ষণ মেয়েরা বঞ্চিত বঞ্চিত করে মেয়েটার মাথা খাবেন না। যাতে না সে বড় হয়ে জঘন্যরকম পুরুষ বিদ্বেষ দেখায়।
হাতে হাত দিয়ে চলার অঙ্গীকার থাক নারীপুরুষের। পুরুষ সম্মান দিক নারীর মমতাকে, ভালবাসাকে, তার মাতৃত্বকে, তার শান্ত, শীতল, মায়াময় কোমল প্রবৃত্তিকে। আর নারী সম্মান করুক পুরুষের রক্ষা করার শক্তিকে, তার বটগাছের মত ডালপালার আড়ালে সব ভয় দূর করার সাহসিকতাকে, তার পিতৃত্বকে। একা কোনকিছুই সুন্দর নয়।
"তুমি আর আমি শুধু জীবনের খেলাঘর হাসি আর গানে ভরে তুলব।"
তাই কাদা ছোঁড়াছুড়ি না করে হাত ধরে এগোন। মনে হয় রাস্তা সুগম হবে৷ অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়া আটকাতে কেউ পারবে না। ভালো থাকুক সব মেয়ে, ভালো থাকুক সব ছেলে, সাথে আমরাও।অন্ধকার কাটুক।
(www.theoffnews male female feminist)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours