দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:
মমতার স্নেহধন্য কেষ্ট বীরের মর্যাদায় ঘরে ফিরলেন। তাকে নিয়ে দলের অনুগামীদের ছিল বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। সকাল থেকেই বোলপুরের নিচুপট্টির দোতলা বাড়ির সামনে অগুনিত মানুষের ভিড়। আছে মুখ্যমন্ত্রী প্রদত্ত ওয়াই ক্যাটেগরির সুরক্ষা।
তৃণমূল কর্মীরা সমাজ মাধ্যমে সোচ্চার হয়ে স্ট্যাটাস দিতে থাকে বেশ ক'দিন ধরেই -টাইগার ইজ ব্যাক।
নিজের ডেরায় বাঘ ফিরে অগুনিত অনুরাগী দেখে কান্নায় ভেঙে পড়লেন। প্রায় আড়াই বছর আগে এগারোই অগাস্ট গরু চুরি মামলায় কেন্দ্রীয় এজেন্সি সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হন বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। তাদের কাছ থেকে আরেক কেন্দ্রীয় এজেন্সি ইডির হাতে আয় বহির্ভূত সম্পত্তি রাখার দায়ে গ্রেফতার হন। দুই কেন্দ্রীয় এজেন্সির হাত থেকে এক এক করে জামিনে মুক্ত হোন এই দোর্দণ্ড প্রতাপশালী নেতা অনুব্রত মণ্ডল। ফেরার পর দেখা গেল, ঠোঁটের নিচে সেই পুরু চওড়া জোড়া গোঁফ। তবে শরীর ভেঙেছে অনেক। কিছুটা রোগাও হয়েছেন।
তিহার জেল থেকে ফ্লাইটে কলকাতায় এবং সেখান থেকে সকন্যা নিজ বাসভবনে ফেরেন তিনি। দলীয় কার্যালয়ের ত্রিসীমানায় যেখানে কাউকে এই কয় বছর দেখা যেত না। আজ লোকারণ্য।
গাড়ি থেকে নিজের বাড়ি দেখে আবেগে জল চেপে রাখতে পারেননি অনুব্রত। মেয়ে সুকন্যা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে পাশে থেকে বলছেন, এভাবে কাঁদছো কেন?
তখন চারিদিকে "কেষ্টদা জিন্দাবাদ। জয় বাংলা ধ্বনি"। কেষ্টদা সবাইকে জোড় হাত করে নমস্কার করে চলেছেন। এদিন অবশ্য সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বাঘ বলেন, আমি কোন বিতর্কে যেতে চাই না। আদালতকে সম্মান করি।
নিজের শরীর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোমর ও পায়ে ব্যাথা। মমতা দিদিকে শারদ শুভেচ্ছা জানিয়ে স্নেহধন্য ভাই কেষ্ট বলেন, দিদি আমাকে ভালোবাসেন। আমি দিদিকে ভালোবাসি। দিদির জন্য আমি আছি।
মঙ্গলবার গীতাঞ্জলিতে প্রশাসনিক বৈঠকে তিনি উপস্থিত ছিলেন না।
নিজ বাসভবনের নীচে দলীয় কার্যালয়ে পুরানো চেয়ারে বসে কিছুক্ষণ যেন গুম মেরে গেলেন।
অন্যদিকে বাড়িতে অপেক্ষায় মামা গোপাল ঘোষ, মামিমা সহ অন্যান্য আত্মীয় পরিজনেরা। সবাই খুশিতে আত্মহারা। বীরের মতো ফুলের মালায় তাঁকে সবাই বরণ করে নিলেন।
অন্যদিকে, বাঘের ডেরায় এদিন ঢুকতে পারলেন না পুরাতন দুই শাকরেদ। আর সেই কারণে মুখ্যমন্ত্রী কি ভাই কেষ্টর নামে একটি কথাও খরচ করলেন না? বোলপুর এলেন, অথচ একটিবার দেখা হলো না!
কেষ্ট মণ্ডল নিজ বাসভবনে ঢোকার পর বিকাশ রায় চৌধুরী কেষ্ট মণ্ডলের দরজা থেকে ঘুরে গেলেন। বিকাশ রায় চৌধুরীকে পুলিশ ঢুকতে দেয়নি। আর চন্দ্রনাথ সিনহাকেও বাধ্য হয়ে ঘুরে আসতে হয়। আর তাতেই মান অভিমানের জল্পনা উঠেছে বিভিন্ন মহলে। অনেকটা ইশারায় আর আসতে হবে না এমনটাই নাকি চন্দ্রনাথকে জানান কেষ্ট। তার অন্তরের কষ্ট!
সূত্রের খবর, নানুরের কেরিম খান ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান। দল কাজল শেখকে দায়িত্ব দেওয়াই তিনি নানুরটা দেখেছিলেন। এ'ব্যাপারে নির্বিবাদী চন্দ্রনাথ সিনহা বা বিকাশ রায় চৌধুরী মাথা গলাননি। আর তাতেই কেরিম খান চন্দ্রনাথ সিনহা ও বিকাশ রায় চৌধুরীর উপর রুষ্ট হন।
কেরিম খান দিল্লিতে ফ্ল্যাট নিয়ে অনুব্রতর মামলার তদারকি করেন একদম শেষের দিকেই। অর্থ দিয়েও মামলায় সাহায্য করেন, বলে সূত্রের খবর। তাই কেরিম খান বনাম চন্দ্রনাথ সিনহা এবং বিকাশ রায় চৌধুরীর সমীকরণ তৈরি হলো। ছোটতে বাঘ বকরি অনেকেই খেলেছে। রাজনীতির বাঘ বকরি অনেককেই ভাবাতে শুরু করেছে। দেখা করতে না পেয়ে অভিমানে চন্দ্রনাথ সিনহা কিছু বলতে চাননি। তবে বিকাশ রায় চৌধুরী বলেন, আমরা দেখা করতে গেছিলাম। দাদা অনেক ক্লান্ত। পরে দেখা করে আসবো।
(www.theoffnews.com Anubrata Mondal Birbhum)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours