রণজিৎ গুহ, লেখক ও সমাজকর্মী, দুর্গাপুর:
সময় গড়িয়ে যায়। ছোট বড় নানা ঘটনা লোকমুখে পল্লবিত হয়, বিকৃত হয়। প্রকৃত সত্য আড়ালে চলে যায়। অতীতকে যথাযথ স্বীকৃতি দিয়ে স্মরণে না রাখলে ইতিহাস ক্রমশ বেপথু হয়। মহালয়ার ভোরে আকাশবাণীর মহিষাসুর মর্দিনী অনুষ্ঠান তারই এক জাজ্জ্বল্যমান নমুনা। ইদানীং এই অনুষ্ঠানের সাথে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, বাণীকুমার বা কমবেশি পঙ্কজকুমার মল্লিক এর নাম উচ্চারিত হয়। সেটা কিছু ভুল নয়। অনুচিত নয়। কিন্তু নবতর প্রজন্মের কাছে এই অনুষ্ঠানের প্রাথমিক ভাবনা যাঁর মাথায় আসে এবং যিনি প্রথম এই অনুষ্ঠান বাস্তবায়িত করে আকাশবাণীতে প্রচারের ব্যবস্থা করেন তাঁর নাম অজানাই থেকে যায়।
সুসাহিত্যিকও চিত্র পরিচালক তদানিন্তন 'বেতার জগৎ' পত্রিকার সম্পাদক, প্রেমাঙ্কুর আতর্থী মহাশয় প্রথম শ্রীশ্রীচন্ডীর কাহিনী ভিত্তিক পাঠ ও গান সংকলন ও রচনা করে নতুন আঙ্গিকে একটি প্রভাতী অনুষ্ঠান করার কথা ভাবেন। এই ভাবনার ওপর ভিত্তি করে ১৯৩২ সালে বানীকুমার পন্ডিত অশোক নাথ শাস্ত্রীর সহায়তায় শ্রীশ্রীমার্কন্ডেয় চন্ডীর বিষয়কে কেন্দ্র করে 'বসন্তেশবরী' নামে একটি চম্পুকাব্য বা শ্রাব্য আলেখ্য রচনা করলেন ওই বছরই চৈত্রের শুক্লা অষ্টমীর প্রভাতে বাসন্তী ও অন্নপূর্ণা পুজোর সন্ধিক্ষণে তা আকাশবাণী থেকে সম্প্রচারিত হয়। রাইচাঁদ বড়ালের সঙ্গীত পরিচালনা, হরিশচন্দ্র বালীর রাগাশ্রিত ও পঙ্কজকুমার মল্লিকের অন্যান্য গান, চণ্ডী পাঠে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র ও বাণীকুমারের অংশগ্রহণ এই অনুষ্ঠানকে বিপুল জনপ্রিয় করে তোলে। এই জনচিত্তজয়ী 'বসন্তেশবরী'ই এখনকার মহালয়া অনুষ্ঠান বলে পরিচিত মহিষাসুরমর্দিনীর উৎস।
চম্পুকাব্যর বদলে ভিন্ন রকমের রচনা শৈলীতে মহিষাসুর বধের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাণীকুমার রচিত নতুন গীতি- আলেখ্য প্রচারিত হয় ১৯৩২ সালে দেবী পক্ষের মহাষষ্ঠীর প্রভাতে। তখনও তা 'মহিষাসুর মর্দিনী' নামে প্রচারিত হয়নি। ১৯৩৭ সাল থেকে 'মহিষাসুর বধ' অনুষ্ঠানের নাম হয় 'মহিষাসুর মর্দিনী'। এরপরেও বেশ কয়েকবার এই অনুষ্ঠানের পাঠ, গান ও শিল্পীর বদল হলেও মূল রচনা কাঠামো একই রয়ে গেছে। ৯০ বছরেও বেশি সময় ধরে এই অনুষ্ঠান জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে। এও এক গলা উঁচিয়ে বলার মত তথ্যও বটে।
(www.theoffnews.com Mahalaya)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours