সুবীর পাল, এডিটর, দ্য অফনিউজ:
গত নভেম্বরে রাজ্য সরকার আয়োজন করেছিল বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট। আর ঠিক তিন মাসের মাথায় কেন্দ্রীয় সরকার অধীনস্থ মিনিস্ট্রি অফ ডেভেলপমেন্ট অফ নর্থ ইস্টার্ণ রিজিওন মন্ত্রক আয়োজন করল নর্থইস্ট ইনভেস্টরস সামিট। বণিকসভা ফিকির সহযোগে।
কেন্দ্র ও রাজ্যের রাজনৈতিক দ্বৈরথ তুঙ্গে থাকলেও সামিটের স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে উভয় সরকারের অর্জুনের পাখির চোখ যে এই তিলোত্তমা মহানগরী তা একবাক্যে মেনে নিয়েছেন স্থানীয় পুঁজিপতিরা।
সামনেই লোকসভা নির্বাচন। তাই কেন্দ্রীয় শাসক সরকারের কুশীলবেরা স্পষ্টতই অনুধাবন করেছেন, ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলে জনপ্রিয়তা করায়ত্ব করতে গেলে শুধু রাজনৈতিক মেশিনারী ব্যবহার করলেই চলবে না। সঙ্গে চাই কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ ও বিনিয়োগের সুনির্দিষ্ট পরিবেশ। একইসঙ্গে প্রয়োজন এলাকাগত আর্থিক পরিকাঠামোর উন্নয়ন। এই আপ্তবাক্যেটি বোধহয় বহু দেরিতে হলেও উপলব্ধি করেছে বর্তমানের নর্থব্লকের ক্ষমতাসীন সরকার। তাই শত বিতর্ককে কার্যত তুড়ি মেরেই উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় অর্থনৈতিক গ্রীণ করিডরের মক্কা মদিনা কলকাতাতেই সোমবার হয়ে গেল এহেন পুঁজি আমন্ত্রণের রাজসূয় যজ্ঞ। স্থানীয় তাজ বেঙ্গল হোটেলে।
পার্শ্ববর্তী বিদেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ, চীন, ভুটান, মায়ানমার ও নেপালের সীমান্ত ঘেঁষা রাজ্যগুলি হলো ত্রিপুরা, মেঘালয়, আসাম, মনিপুর, অরুনাচল প্রদেশ, মিজোরাম ও সিকিম। মূলত এই বিস্তীর্ণ এলাকা দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চল হিসেবে বহুল পরিচিত। আক্ষরিক অর্থেই এই অঞ্চল স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে উগ্রপন্থার আঁতুরঘরেই সুপরিচিত ছিল। দেশের অন্যান্য এলাকার সঙ্গে এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল করুণ দুয়োরানির মতোই। উপেক্ষার অপর নাম ছিল আঞ্চলিক কর্মসংস্থান। তবে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মেক ইন ইন্ডিয়ার ছন্দে পা মিলিয়ে বিমান পরিষেবা, সড়ক যাতায়াত ও রেল যোগাযোগে প্রভূত উন্নতি ঘটেছে সম্প্রতি। এমনকি এখানে বন্দে ভারতও ছুটছে উন্নয়নের সাক্ষী হিসেবে।
এমনই পরিবর্তিত সহায়ক পরিস্থিতিকে মূলধন করে এদিনের সামিটে কেন্দ্রীয় উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বি এল ভার্মা কোনও রাখঢাক না করেই পুঁজি বিনিয়োগের সরাসরি আমন্ত্রণ জানালেন কলকাতা সহ দেশি ও বিদেশী পুঁজিপতিদের। তিনি বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, "উন্নয়নের নিরিখে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উত্তর পূর্বাঞ্চলকে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে একসুতোয় বাঁধতে চান। তাঁর স্বপ্নকে সার্থক করে তুলতে তাই আমরা এখানকার সাতটি রাজ্যের মানচিত্রে বিনিয়োগকেই সর্বাগ্রে অগ্রাধিকার দিতে চাই। তারজন্য যাবতীয় সহায়তার হাত আমরা বাড়িয়েই রেখেছি।" তাঁর আরও মন্তব্য, "আমরা এখানে বিনিয়োগের নিমন্ত্রণ করছি আপনাদের। কেন্দ্রীয় ও সংশ্লিষ্ট সরকার আপনাদের অপেক্ষায় আছে। আমরা সবরকমের সদর্থক পরিকাঠামো ও পরিষেবা প্রদান করবো বিনিয়োগের ক্ষেত্রে।"
যথারীতি সাতটি রাজ্যের উচ্চপদস্থ সরকারি আমলারা এই মঞ্চে উপস্থিত থেকে নিজ নিজ ভৌগলিক এলাকার প্রাকৃতিক ও আঞ্চলিক সহ সাংস্কৃতিক সম্পদের প্রাচুর্যতার বর্ণনা দিচ্ছিলেন আকর্ষণীয় স্লাইড শোয়ের মাধ্যমে। প্রায় একই সুরে উপস্থিত আয়োজক কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব অনুরাধা এস চাগতিও বক্তব্য রাখেন, "দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চল প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। তাই এখানে ট্যুরিজিম ব্যবসার উন্মুক্ত দুয়ার রয়েছে। এখানকার কৃষি ও হস্তশিল্পের উৎকর্ষ বিশ্বজোড়া। চা শিল্প দুনিয়ার নজর কাড়া। আইটি সেক্টরেও এখানকার দক্ষতা যথেষ্ট উর্দ্ধমুখী। পশুসম্পদ ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে এই এলাকা আজ চুড়ান্ত পর্যায়ে প্রথম সারিতে। সৌরশক্তি ব্যবহার ও মাইক্রো হাইডেল প্রোজেক্টেও ক্রমশঃ আগুয়ান। বাঁশ, তাঁত ও হোটেল ব্যবসাতেও আজ অগ্রগন্যের ভূমিকা পালন করছে। সুতরাং বিনিয়োগের পীঠস্থান যে আজ ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চল এ নিয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই।"
মন্ত্রী ও যুগ্ম সচিবের গলায় যখন উচ্চগ্রামে বাজছে দেশের বিনিয়োগের পটভূমিতে উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় ভূমিকার স্বরলিপি ঠিক তখনই যথার্থ সিম্ফনির সঙ্গত দিলেন সামিটে উপস্থিত আন্তর্জাতিক ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পপতি খুরশেদ বক্ত চৌধুরী। তিনি বলেন, "এটা বাস্তব বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চল হলো এখন কমপ্লিট ভার্জিন সম। ব্যবসার সম্ভাবনার ক্ষেত্রেও এখানে উন্মুক্ত ময়দান রয়েছে। প্রয়োজন শুধু সরকারের উদার হস্তের নিরাপত্তা ও সহায়তা প্রদান। তাই সবার আগে দরকার বহিরাগত বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাস অর্জন প্রতিষ্ঠা করাটা। এই সামিটের পাশাপাশি বিশ্বাস প্রাপ্তির জন্য আমাদেরও অপেক্ষা করতেই হবে।"
(www.theoffnews.com - North Eastern region invest)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours