সুবীর পাল, এডিটর, দ্য অফনিউজ

উফ্ মেয়েদের স্তন বলে কথা! কি ডিলিসিয়াস মাইরি।

অপুষ্ট ছোট আকৃতির স্তন। যা অনেকাংশ মেয়েদের হীনমন্যতার পরিসরে ভরপুর। কিছু পুরুষের কাছে নিমাইয়ের উপমায় তাঁরা জেরবার। 

আবার সুডোল স্তন। যা বহু মহিলার গর্বের স্বর্গ বিচরণ। আর কিছু ফঁড়ে পুরুষতো আবার ডবকা মাল মনে করেন।

আসলে নারীরাও ভালভাবে জানেন, এই স্তনই হল পুরুষের কাছে এক অঘোম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। পুরুষ ভূমিকম্পের আগুনের দুই মেরু। যা প্রাকৃতিক প্রভাবেও একেবারেই উপেক্ষার নয়।

ওরে বাবা, গেল গেল রব নিশ্চয় উঠবে। হাজার হলেও খাতায় কলমে চোলি কে পিছে কা হ্যায় মার্কা ডোন্ট কেয়ার 'ডিজিটাল' ভারত হলেও দেশীয় রক্ষণশীল নেটিজেন সমাজে এখনও লাজবতী নপুরের রিনিঝিনির আরষ্ঠতা এখনও যাব যাব করেও গেল না। তার উপর দ্বিচারী আঁতেল বিপ্লবীর সংখ্যাও কম নয়। তাঁরা তো আবার দিনে প্রকাশ্যে ভাষণ দেন, 'নারী আমাদের মা বোন'। রাতে ওঁরাই ইনবক্সে নীল ছবি পাঠিয়ে লেখেন, 'তোমার স্তন ভেবে দাঁড়াল ধো...!' 

এই বিভক্ত পটভূমিতে দক্ষিণ এশীয় মহাদেশের এই তৃতীয় বিশ্বের অন্যতম দেশ ভারতের এক মধ্য বয়স্কা মহিলা ইন্দু হরিকুমার একদম পারফেট ব্যতিক্রমী চয়েজ। তিনি কিন্তু একদা আকারে ছোট স্তনের অধিকারিনী ছিলেন। তিনি নিজেই বলেছেন, টিন এজার বয়সে এক সময়ে তাঁর মনে হতো তিনি তাঁর অপুষ্ট স্তনের কারণে কোনও পুরুষের ভালবাসার যোগ্য নন। এমনকি তিনি ভালবাসা প্রাপ্তির লোভে বেপরোয়া ভুল যৌন সম্পর্কেও জড়িয়ে যেতে বাধ্য হন। যদি ভালবাসার ভান্ডার একটু পূর্ণ হয়, এই আশায়। এমনই স্তন সমস্যায় তিনি একদা দিশেহারা হয়ে যান। আজ তিনি মধ্য ত্রিশের নারী। ফিগারও দারুন লুক্রেটিভ। এই নিমাই উপমা থেকে তন্দুরুস্ত অ্যাখায় আসতে তাঁকে অনেক কঠিন পথ অতিক্রম করতে হয়েছে। নিজের জীবনে উপলব্ধি করেছেন স্তনের অপরিসীম মান্যতার অনুভুতিগুলি। আর তাই মহিলাদের এই চিরন্তনী এক সমস্যাই তাঁকে পথ দেখায় সমাজের উল্টো স্রোতে সাঁতর কাটার। এক নতুন স্তনের ভুবণ তৈরি করার নেশায়।

বছর খানেক আগের কথা। ইনস্টাগ্রামে শিল্পী ইন্দু হরিকুমার আচমকা এক মহিলার সঙ্গে পরিচিত হন। একদিন চ্যাট করতে গিয়ে ওই মহিলা তাঁকে জানান, তাঁর বড় আকৃতির স্তনের জন্য পুরুষদের চোখ থেকে তিনি যেন এড়াতেই পারেন না। কারও ঘরে যাবেন, রাস্তায় হাঁটবেন তো পুরুষরা তাঁর স্তনের দিকেই অর্জূনের পাখির চোখ করে বসেন। দুই জনের কথাতেই যেন ভিন্ন অভিজ্ঞতার বিভিন্ন সুর যেন এক অভিন্ন নিবিড়ত্বের জন্ম দিয়েছিল। তখনই তাঁরা ঠিক করে ফেললেন মেয়েদের এই নানাবিধ আকৃতির স্তন নিয়ে মেয়েদেরই এগিয়ে আসতে হবে। তারজন্য চাই একটা প্ল্যাটফর্ম।

দুই সখী মিলে বিগত বছর পাঁচ আগে তৈরি করলেন এক অভিনব প্ল্যাটফর্ম। এহেন বিচিত্র প্ল্যাটফর্মের নাম দিলেন "আইডেন্টিটি"। এই অদ্ভুত "আইডেন্টিটি" প্রকল্পের শেষ দুটি অ্যালফাবেট কিন্তু দুটি "টি"। যা কিনা ভীষণ রকমের ইঙ্গিতবাহী। তাই এই নামেই তাঁদের সহমত আজও প্রশ্নাতীত। কারণ সেই শেষ দুটি টি যে তাঁদের সহযাত্রার পথ দেখিয়েছে। ইন্দু হরিকুমার নিজেই বলেছেন, আমাদের এক বন্ধুর মাথায় প্রথম আসে দুই টি বিশিষ্ট আইডেন্টিটি নামটা। আমরাই ঠিক করে ফেললাম এটাই হবে প্রকৃত নাম। আমাদের ব্যতিক্রমী যাত্রাপথের।

২০১৯ সালের একেবারে প্রথম দিকের কথা। মুম্বাই নিবাসী চিত্রশিল্পী ইন্দু হরিকুমার ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্ট ড্রপ করলেন। এমনিতেও তিনি ইনস্টাগ্রামে কর্মরত ছিলেন। সেই পোস্টের মূল বিষয় ছিল স্তন। পোস্টে ব্যক্ত করলেন, মানুষের এই সমাজে নারী দেহের সবচেয়ে আকর্ষিত, সবচেয়ে আলোচিত, সবচেয়ে দর্শনীয় সবচেয়ে প্রত্যাশীত অঙ্গ হল স্তন। এর কৌতুহলে পুরুষ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। নারীও কখনও গর্বিত বা সঙ্কুচিত বা উৎকন্ঠিত আবার কখনও বা আতঙ্কিত বা কষ্টান্বিত বা আনন্দিত। একমাত্র নারীরাই যেন এইসব মানব ও নিজস্ব অনুভুতি নিয়ে তাঁদের স্তন সংক্রান্ত একান্ত ব্যক্তি অভিজ্ঞতার কথা লেখার আকারে পাঠান। সঙ্গে যেমন খুশি ছবিও পাঠাতে আবেদন জানানো হয় পোস্টে। তাজ্জব বিষয় হল পোস্টটি ট্রোল হতেই বহু মহিলা এহেন অদ্ভুত আবেদনে সারা দিতে আগ্রহী হন। শিল্পী ইন্দু বলেন, আমরা স্তন নিয়ে মহিলাদের লেখার বিষয়ে অভাবনীয় সারা পাই। শিল্পীর মতে পৃথিবীর সমস্ত নারীর তাঁর নিজস্ব স্তন সম্পর্কে আকার, অভিজ্ঞতা, অনুভুতির একটা পৃথক মনস্তর আছে। যা বিভিন্নজনের লেখাতেই স্পষ্ট।

সম্প্রতি ব্রিটেনের এক জন-সমীক্ষা করা হয়েছিল ৩৮৪ জন নারীর উপর। যার মধ্যে ৪৪ শতাংশ নারীই মনে করেন, তাঁদের স্তন যদি বড় আরও হতো তো ভালই না হতো। আর ৩১ শতাংশ নারী মন করেছিলেন তাঁদের স্তন ছোট হলে মন্দ হতো না। বাকি ২৫ শতাংশ নারী মাঝপথের সাইজেই হেঁটেছেন।

ইন্দু হরিকুমার তাঁর প্রাপ্তির লেখাগুলি পড়ে বলেছেন, সামাজিক নানা কারণে লেখিকাদের পরিচয় আমরা প্রকাশ করিনি। আমরা বুঝতেও দিইনি তাঁদের ঠিকানা কোথায়। কিন্তু এটা ঠিক লেখাগুলির ছত্রে ছত্রে রয়ে গিয়েছে, ছোট স্তনের বিরম্বনা ও কষ্টের বারোমাস্যা। তেমনি বড় স্তনের অহংকার থেকে কত নিষ্ঠুর আঘাত আক্রমনের স্বীকারোক্তিও আমরা পেয়েছি।

ইনস্টাগ্রামের আইডেন্টিটি প্রকল্পের পোস্টে কারও কারও লেখাগুলি থেকে বেড়িয়ে এসেছে, কোনও মহিলার ব্লাউজ থেকে ব্রায়ের স্ট্রাপ অজান্তে একটু বেড়িয়ে গেলে কতই না লাঞ্ছিত হয়েছেন। আবার কেউ বলেছেন তাঁর দুরন্ত স্তনের ছবি যদি বেডরুমে রাখা যেত তবে তিনি গর্বিত হতেন। আবার একটু সাহস দেখিয়ে কোনও ললনা দুই স্তনের মাঝখানের সুক্ষ্ম কমন সীমারেখার ছবিও পাঠিয়েছেন।

শিল্পী ইন্দু হরিকুমার মন্তব্য করেন, মাত্র দুই মাসেই তিনি একশোটির বেশি মনোগ্রাহী স্তনের গল্প পেয়েছেন। যে গল্পগুলির সমন্বয়ে তিনি তুলির আঁচড়ে ছবি এঁকে ফেলেছেন। যেগুলি ইতিমধ্যেই শিল্পীমহলে ব্যাপক সারা ফেলেছে। বলা যায় শৈল্পিক উৎকর্ষের মাপকাঠিতে হটকেক। ১৮ থেকে ৫০ বছরের মহিলারাই বেশি সারা দিয়েছেন। ভারতের ছোট বড় বিভিন্ন শহর থেকেই তিনি অজস্র ইমেলও পেয়েছেন। এমনকি প্রান্তিক গ্রামীণ মহিলারাও সংকোচ ভেঙ্গে বেরিয়ে এসেছেন। একটাই ভরসায়। গোপনীয়তা রক্ষায় তিনি যে একলব্য। 

এবার তিনি সেরে ফেললেন এক অভিনব পদক্ষেপ। ওই একশোটি স্তন সংক্রান্ত লেখা ও ছবি নিয়ে প্রকাশ করে ফেললেন একটি বই। ভারতের বই বাজারে স্তনের অভিনব এই টর্নেডোর ঝোড়ো সুবাস তাই আচমকাই ছড়িয়ে পড়েছে একেবারে পাঠকের বেডরুমে। ইন্দু একলব্যের স্তন কাহানিয়া বলে কথা। নতুন মোরকে নতুন মলাটে। হাজির স্তন পুরাণের সমাচার।

(www.theoffnews - Indu Harikumar breast book)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours