অসীম চট্টোপাধ্যায়, সিনিয়র জার্নালিস্ট, দুর্গাপুর:

একদিকে পঞ্চায়েত সদস্য, অন্যদিকে সংবাদপত্র বিক্রেতা, ভোর থেকে শুরু হয় জীবিকার লড়াই। এলাকায় সাদামাটা সৎ হিসেবে পরিচিত উখরা পঞ্চায়েতের সদস্য নিশিথ সৌমন্ডল।

২০১১ সালে রাজ্য রাজনীতিতে ক্ষমতার পালাবদল ঘটার পর কেটে গেছে বারোটি বছর। এ সময়ের মধ্যে রাজ্যের রাজনৈতিক আকাশে ঘটে গেছে বহু উত্থান-পতন। অনেক নেতা- নেত্রীর জীবনযাত্রার গ্রাফ অনেকটাই উর্ধমুখী হয়েছে। এমন এক আবহে সামনে এলো এক অন্য ছবি। শাসকদলের মধ্যে এখনো অনেকে রয়েছেন যাঁদের নামের সাথে কখনো জড়ায়নি দুর্নীতির কোনরকম অভিযোগ। এমনই একজন জনপ্রতিনিধি অন্ডাল ব্লকের উখরা পঞ্চায়েতের দু'বারের সদস্য নিশিথ সৌমন্ডল। উখরা গ্রামের সৌমণ্ডল পাড়ায় বাড়ি। স্ত্রী ও এক ছেলে নিয়ে সংসার। নিশিথবাবুরা তিন ভাই । পৈত্রিক বাড়ির একাংশ পেয়েছেন ভাগে, দু-কামরার সেই বাড়িতেই তিনজনের মাথা গোঁজা। নিশিথবাবু  আদতে কংগ্রেসী ঘরানার ছেলে। ১৯৯৮ সালে তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই রয়েছেন দলের সাথে। ১৯৯৮ সালে দলের প্রতিষ্ঠার পর প্রথম পঞ্চায়েত ভোটে জোড়া ফুল চিহ্নে প্রার্থী হন নিশিথবাবু। সিপিএম প্রার্থীর কাছে হেরে যান মাত্র ২২ ভোটে। নিশিথবাবু জানান, সেবার সিপিএমের সীমাহীন সন্ত্রাসের কারণে দল সব আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি। পরে‌ ২০১৩ ও ২০১৮ সালে পরপর টানা দু'বারই পঞ্চায়েত ভোটে জয়ী হন নিশিথবাবু। 

পেশায় তিনি 'সংবাদপত্র বিক্রেতা'। ভোরের আলো ফুটতেই শুরু হয় জীবিকার লড়াই। সাইকেলে চড়ে সংবাদপত্র পৌঁছে দেন বাড়ি বাড়ি। আসা যাওয়ার পথেই দেখা হয় পরিচিতদের সাথে। সাইকেল থামিয়ে শোনেন অভাব অভিযোগের কথা। রোজ এভাবেই কাজের সাথে সেরে নেন জনসংযোগের কাজও। নিশিথবাবু জানান, সংবাদপত্র বিক্রির কমিশন ও পঞ্চায়েত সদস্য হিসেবে যে ভাতা পান তাতেই চলে সংসার। এই সময়কালে চারপাশে অনেক কিছু বদলে গেলেও বদলায়নি  নিশিথবাবুর রোজনামচা। দশ বছর পঞ্চায়েত সদস্য হিসাবে দায়িত্বে থাকলেও আজ পর্যন্ত তাঁর নামের সাথে জড়ায়নি স্বজন-পোষণ বা দুর্নীতির সামান্যতম অভিযোগও। এলাকায় ও দলের মধ্যে তিনি সৎ ও কাজের মানুষ হিসাবে পরিচিত। চারিদিকে প্রলোভনের এতো হাতছানি থেকে কিভাবে নিজেকে দূরে রেখেছেন? উত্তরে নিশিথবাবু জানান, 'রোজগারের জন্য দল করি না, রাজনীতি করি মানুষের সেবার জন্য। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই আমার আদর্শ। মুখ্যমন্ত্রী হয়েও তাঁর সাদামাটা জীবনযাপন আমার অনুপ্রেরণা'। উখরা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রাজু মুখোপাধ্যায় বলেন, নিশিথবাবু সহ আরও বেশ কয়েকজন আমাদের পঞ্চায়েত সদস্য রয়েছেন যাঁদের বহু কষ্টে সংসার চলে। আফশোস, এইসব মানুষেরাই থেকে যান প্রচারের আড়ালে। স্থানীয় বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, নিশীথের মতো কর্মীরাই আমাদের দলের মুখ, দলের মূল্যবান সম্পদ। এঁদের দেখেই পঞ্চায়েত ভোটে মানুষ ভোট দেন দলকে।

(www.theoffnews.com - panchayat member honest)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours