কাজী নূর, কবি, সাহিত্যিক ও ফিচার রাইটার, বাংলাদেশ:

'দূর নির্বাসনে যাও' শিরোনামের কবিতায় তিনি লিখেছিলেন, পিতা, দোহাই তোমার, আমাকে দোষ দিও না / সত্য এদেশে অবাঞ্ছিত, সত্য বললেই বিপদ / তুমিও বাঁচতে পারোনি, সত্য বলেছিলে বলেই  তো ... / তবুও গর্বিত, করোনি মাথা নত, অসত্যের কাছে / পশুর দাপটী রাজত্বে মনুষ্যত্ব অচল / মানুষের অবয়বে পশুরাই মূর্তিমান। এই মানুষটি সমাজের যত অসংকোচ অসঙ্গতি অন্যায় অত্যাচার, শোষণ আর নির্যাতনের বিরুদ্ধে তার ক্ষুরধার লেখনীকে অব্যহত রেখেছিলেন। সর্বদা সোচ্চার রেখেছিলেন নিজের কলমকে। তার বলিষ্ঠ লেখনি সমাজ বিরোধীদের ক্ষতির কারন হয়ে দাঁড়ায়। বারবার ওদের আপোষ সমঝোতার লোভনীয় প্রস্তাবকে উপেক্ষা করে সমাজ বিরোধীদের বিরুদ্ধে আমৃত্যু কলম ধরেছিলেন তিনি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই মানুষটির নির্ভীক কলম চলেছে ঘুণে ধরা সমাজকে বদলে দেবার প্রত্যয়ে। সৎ এবং সাহসী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ এই ব্যক্তিত্ব আমৃত্যু সাধারণ মানুষের কথা বলে গেছেন, বলেছেন দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবার কথা। কলমের কালিতে বারবারই তুলেছেন সন্ত্রাস নৈরাজ্যর শেকড়কে সমূলে উৎপাটনের কথা। এই মানুষটি কালোকে কালো আর সাদাকে সাদা বলতেন অকপটে।

ক্ষণজন্মা এই মানুষটি কখনও কোনও রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করেননি। বরং রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা সন্ত্রাসীদের কথা তিনি বারবার লিখেছেন। রাজনীতিকের লেবাস ধরে থাকা এসব সন্ত্রাসী এবং তাদের সন্ত্রাস অপকর্মের বিরুদ্ধে আপোসহীন কলম চালনা করে বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সাংবাদিকতা জগতে সৎ সাহসী এবং প্রতিবাদী সাংবাদিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন তিনি। সৎ সাংবাদিকতা চর্চার মাধ্যমে তিনি দক্ষিণ বাংলার সংবাদপত্র জগতে আলোচিত এবং অনুকরণীয় প্রবাদ পুরুষে পরিণত হন। এমনকি খবরের কাগজের অঙ্গসজ্জায় আমূল পরিবর্তন এনে আধুনিকায়নও করেছিলেন তিনি। কেবলমাত্র খবর প্রকাশই নয়, নান্দনিকতার সাথে তা পাঠকের কাছে তুলে ধরা এবং বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা উপহার দিতে তিনি ছিলেন বদ্ধ পরিকর এবং প্রবাদ প্রতিম। তার হাতে গড়া অনেক সাংবাদিক যশোর ছাড়াও রাজধানী ঢাকার প্রথম সারির বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের ডেস্ক এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে কর্মরত আছে। সাহসী সাংবাদিকতার এই উজ্বল মহিরুহ হলেন সাংবাদিক আর এম সাইফুল আলম মুকুল। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স সম্পন্ন করা আর এম সাইফুল আলম মুকুল ছিলেন দক্ষিণ বাংলার গণমানুষের আস্থার মুখপত্র যশোর থেকে প্রকাশিত প্রভাবশালী এবং জনপ্রিয় 'দৈনিক রানার' পত্রিকার সম্পাদক। তৎকালীন সময়ে 'দৈনিক রানার' এর প্রকাশক ছিলেন মুকুলের মা রাবেয়া খাতুন।

সততা আর নিষ্ঠার খেসারত স্বরুপ সাংবাদিক আর এম সাইফুল আলম মুকুলকে প্রাণ হারাতে হয়। ১৯৯৮ সালের ৩০ আগস্ট রাতে যশোর শহর থেকে বেজপাড়াস্থ নিজ বাসভবনে ফেরার পথে চারখাম্বার মোড় চিরুনি কলের নিকটে 'রানার' সম্পাদক মুকুলকে বোমা এবং বুলেটের আঘাতে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। মুকুল প্রাণ দিয়ে প্রমাণ করলেন অর্থ, প্রতিপত্তি অন্যায়ের কাছে নিজেকে সঁপে দিয়ে অর্থ উপার্জনের চেয়ে মৃত্যুুই শ্রেয়। অকুতোভয় সাংবাদিক সাইফুল আলম মুকুলের ২৪ তম হত্যাবার্ষিকী আজ ৩০ আগস্ট। হত্যার ২৪ বছর পার হলেও নানা জটিলতায় আটকে আছে বিচার প্রক্রিয়া। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় হাইকোর্ট ঘুরে মামলাটি বিচারিক আদালতে এলেও বিচার কাজ শেষ হয়নি আজও।

(www.theoffnews.com - Bangladesh M R Saiful Alam Mukul)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours