সুবীর পাল, এডিটর, দ্য অফনিউজ:

শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে সাভ্প্রতিক কালে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী থাকাকালীন পার্থ চট্টোপাধ্যায় ইডির হাতে গ্রেফতার হলে তাঁকে বাংলার মন্ত্রীসভা থেকে অপসারিত করেন বঙ্গ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে দলের মহাসচিব পদ থেকেও তাঁকে অপসারণ করা হয় তৃণমূলের তরফে। বাহ্‌ খুব ভালো পদক্ষেপ। গতকালও ঘটে গেল গরুপাচার কান্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগে সিবিআইয়ের হাতে দলের বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মন্ডলের গ্রেফতারির মতো মেগা ইভেন্ট। এক্ষেত্রেও দল প্রেস কনফারেন্স করে জানিয়ে দিল, তৃণমূল এই গ্রেফতারের বিষয়ে কোনও ভাবেই জড়াবে না। দলীয় পদে বহাল রাখলেও অনুব্রতবাবুকে নিজের লড়াই নিজেকেই লড়তে হবে। সাবাশ সাবাশ।

আপাতত দৃষ্টিতে মনে হবে, রাজ্যের শাসক দল দুর্নীতিকে মোটেও প্রশ্রয় দেয় না। রেয়াতও করে না কাউকে। অন্তত তৃণমূলের এহেন পদক্ষেপের পলিটিক্যাল ক্যাচলাইন তো তাই বলে। এছাড়া জনমানসেও তৃণমূলের আপোষহীন স্বচ্ছতা প্রসঙ্গেও একটা বাড়তি মাইলেজ হাওয়ায় ভাসিয়ে দেওয়া হল বলে অনেকেই ভাবতে পারেন। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকের একাংশ কিন্তু অন্য কথা বলছেন। পার্থবাবু ও অনুব্রতবাবুকে ইডি এবং সিবিআই গ্রেফতারের পর কেন শাসক দল এহেন ছুঁতমার্গের অবস্থান গ্রহণ করল? এই দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তো বছরর পর বছর যাবৎ নানা মহল থেকে অভিযোগ সামনে এসেছে অন্তত প্রকাশ্যে। একজন কলকাতা নিবাসী রাজ্যের মন্ত্রীসভার দ্বিতীয় নম্বর ওজনদার মন্ত্রী। অপরজন বীরভূমের উনিশ বছরের টানা দলীয় সভাপতি। একাধারে তিনি তো আবার বীরভুমের ডিফ্যাক্টো জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার ছিলেন। তাহলে দ্বিজ গ্রেফতারের পূর্বে এই অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে সরকারি ইনটেলিজেন্স এতদিন কি ঘুমাচ্ছিল? গরুপাচার কান্ড ও শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম প্রসঙ্গে সিআইডি কি শীতঘুমে ব্যস্ত ছিল। দুটি ফ্ল্যাটে জমে থাকা এতো টাকার পাহাড় বা গরু পাচারের টাকা কার অ্যাকাউন্টে জমা পড়ল তার হদিস কেন সিআইডি পেল না বা সন্ধান পাওয়ার ইচ্ছেটাও দেখাল না, এর উত্তর কি রাজ্যের পুলিশ মন্ত্রীর কাছে আছে?

আচ্ছা দলের কর্মী নেতাদের বিরুদ্ধে গুরুতর কোনও অভিযোগ উঠলে সিপিএম তো দলের অভ্যন্তরে তদন্ত করে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে দলীয় পর্যায়ে শাস্তির বহু উদাহরণের দৃষ্টান্তও রয়েছে তাদের তরফে। এক্ষেত্রে তৃণমূল কিন্তু দলীয় তদন্তের মতো কোনও রাস্তায় হাঁটেনি। তাহলে এটাই কি আজকে প্রতিষ্ঠিত নয় যে ইডি বা সিবিআই যতক্ষণ পর্যন্ত না দলের কাউকে গ্রেফতার করছে ততক্ষণ তৃণমূলের সবাই ক্লিনচিট শংসাপত্র নিয়েই দলবাজি করবেন সদর্পে সমাজের বুকে। অথচ এই সমাজেরই প্রতিটি প্রান্ত থেকে অহরহ অনিয়মের অভিযোগ যতই উঠুক না কেন শাসক দল থাকবে সেক্ষেত্রে নির্বিকার। ইন্টেলিজেন্স থাকবে এবিষয়ে নিশ্চুপ। সিআইডি থাকবে এপ্রসঙ্গে নিশ্চল। তৃণমূলের এই অদ্ভুতাচারণ কিন্তু এখানেই শেষ নয়। ঘাসফুল শিবিরের অপর দুই মন্ত্রী মদন মিত্র ও ফিরহাদ হাকিম গ্রেফতার হয়েছিলেন। দলের দুই সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাপস পাল কারাবাস করেছেন। সারদা নারদা কান্ডে এদের পাকড়াও করে সিবিআই। কয়লা কান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সিবিআই তো জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে দলের সেকেন্ড পারসম অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যয়কে? কই দল তো এদের বিরুদ্ধে দলীয় স্তরে আজ পর্যন্ত কোনও তদন্ত শুরু করেনি? কই দল তো এদের বিরুদ্ধে কখন বিবৃতিও দেয়নি অভিযুক্তদের লড়াইটা অভিযুক্তদেরকেই করতে হবে। কই মন্ত্রীসভা থেকে কাউকেই তো অপসারিত করা হননি তখন। পুলিশ আধিকারিক রাজীব কুমারকে গ্রেফতার করতে গেলে সিবিআইয়ের বিরুদ্ধেই রাস্তায় অবস্থানে বসেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এঁদের বিরুদ্ধে যেমন বলা যাবে না এখনই তাঁরা নির্দোষ আদালতের অনুমোদনে, তেমনি কোর্টের বক্তব্য অনুসারে কিন্তু পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অনুব্রত মন্ডল যে দোষী এমন ভাবারও অবকাশ নেই এখনও। আসলে আইনের খাতায় এরা সবাই অভিযুক্ত। কেউই নির্দোষ বা দোষী এখনও প্রমাণিত হয়নি। হ্যাঁ অনেকে শর্তসাপেক্ষ জামিনে মুক্ত রয়েছে মাত্র। তবু তৃণমূলে চলছে তো চলছেন দ্বিচারিতা ও দ্বিবিচারের রামরাজত্ব। আর সিবিআই বা ইডি যতক্ষণ না ইদানীং পাকড়াও করছে দলের অন্য কোনও হেভিওয়েটকে, তা অভিযোগ যতই উঠুক না কেন সমাজে, শাসক দল কিন্তু মানুষের চোখে অভিযোগের চুড়ায় বসে থাকা ওই নেতাদের আস্তিনে লুকিয়ে থাকা অতিরিক্ত মাখন চেটেপুটে খেয়েই চলবে এতেও কিন্তু সন্দেহ নেই। অন্তত নয়া জমানার তৃণমূলের হাবভাব তো তাই বলছে।

(www.theoffnews.com - Anubrata Mondal Partha Chatterjee ED CBI)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours