রূদ্রাণী মিশ্র, লেখিকা ও কবি, কলকাতা:
আজ আপনাদের একটি অসাধারণ বিষয় নিয়ে কিছু কথা বলব। আমি কথাগুলো বলার আগে হয়তো আপনারা বিষয়টি নিয়ে নাড়াচাড়া করেছেন। কিন্তু আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, তলিয়ে ভাবেননি কখনও। আচ্ছা খোলসা করে বলা যাক। আজ আপনাদের আমি বলব, শব্দের থেকেও জোরে কিভাবে মানুষের প্রতি মূহুর্ত্তের ব্যবহারগুলো যা অনুচ্চারিত কথাগুলোকে 'বলে' থাকে।
আপনি কী জানেন, উচ্চ মস্তিষ্কের মানুষের কাছে শব্দগুলো যেমন আছে, সত্যিকে মিথ্যে করার জন্য, আবার মিথ্যেকে সত্যি করতে 'মীরজাফর' মুখাব্যক্তি বা শারীরিক অভিব্যক্তিগুলো 'সবকিছু' চেঁচিয়ে বলতে থাকে। এজন্যই জন নেপিয়ার বলেছেন "If language was given to men to conceal their thoughts, then gesture's purpose to disclose them"-- John Napier।
এইটুকু পড়ে আপনি যদি মনে মনে ঠিক করে ফেলেন, আপনার সব অভিব্যক্তিগুলো আপনি কন্ট্রোল করবেন। তাহলে জেনে রাখুন, আপনি ভুলের স্বর্গে বাস করছেন। আরে মশাই, অতো যদি কন্ট্রোল করা যেত, তাহলে কী আর 'মীরজাফর' বলতাম? যায় না, জাস্ট কোনও মতেই ওই অভিব্যক্তিগুলোকে কন্ট্রোল করা যায় না। আপনাকে ছোট্ট উদাহরণ দিয়ে বোঝাতে চেষ্টা করছি। মনে করুন, কোনও ছোট ছেলে বা মেয়ের মা বাবা এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে গেলেন, বা, এক দেশ থেকে আরেক দেশে। সেক্ষেত্রে বড়দের মত ছোটরা চট করে ভাষা পাল্টে নিতে পারে না। তাহলে তখন সে 'কমিউনিকেট' করে কিভাবে? হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন, ওই বডি ল্যাঙ্গুয়েজকে 'হাতিয়ার' করে সে তার কথাগুলো বোঝাতে চেষ্টা করে। আরেকটি উদাহরণ দিই, আপনাদের বুঝতে সুবিধা হবে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে দেখবেন, একটা কথার খুব 'চল' আছে। মেয়েদের তৃতীয় চোখ আছে। ওরা ঠিক বোঝে, কারা নিরাপদ বা কারা ক্ষতি করতে পারে। কারো কোনও তৃতীয় চোখ থাকে না, মেয়েদেরও নেই। তারা তাদের অজ্ঞাতেই অপরপক্ষের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ পড়তে চেষ্টা করে, নিজেকে নিরাপদ রাখতে।
আমি ইদানিং জো নভ্যেরোর (Joe Navarro) বই পড়ছি। এই ভদ্রলোককে হিউম্যান লাই ডিটেক্টর বলা হয়। তিনি একজন রিটায়ার্ড FBI এজেন্ট। তার একটি বইতে তিনি বলেছেন।
হঠাৎ করে আপনার স্ত্রী ডিভোর্স ফাইল করেছেন? যা আপনি ভাবতেও পারেন নি? (এরকম মনে হয়, বেশিরভাগ বিদেশেই হয়)
হঠাৎ করে আপনি জানতে পারলেন, তিন বছর ধরে আপনার সন্তান শুকনো নেশা করছে?
হঠাৎ করে আপনার অফিস আপনাকে ফায়ার করে দিল? যেখানে আপনার মনে হয়েছিল আপনার পারফরম্যান্সে আপনার বস খুব খুশি?
এই হঠাৎ বলে কোনও শব্দ হয় না। সব দুর্ঘটনার আগে কোথাও কোনও ইঙ্গিত ছিল। আপনি 'পড়তে' পারেননি। এই জন্যই তো শার্লক হোমস তার সহকারী ওয়াটসনকে বলেছিলেন "Watson you look, but you do not observe." এই অবজারভেশন যদি আপনার অভ্যেস হয়ে যায়, তখন আর বুঝতে অসুবিধা হবে না, আপনার অপরপক্ষের মনের ভাবনা কী?
তাহলে এই নন ভার্বাল কমিউনিকেশনের কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যাক।
আপনি যদি কাউকে খুব ভালবাসেন, আপনার চোখের মনি, যাকে ইংরেজিতে পিউপিল বলে, তা বড় হয়ে যাবে। তাই আই লাভ ইউ না বললেও, আপনার অভিব্যক্তি অপরপক্ষের কাছে খবর পৌঁছে দেয়। আপনি কী জানেন, এটা বিড়ালদেরও হয়।
আপনি যদি খুব টেনশনে থাকেন, আপনার ভ্রু কুঁচকে থাকবে। আপনার দুটি ঠোঁট একটি অপরটিকে চেপে রাখবে। ফলত আপনার টেনশন আপনার আশপাশের লোকজনের কাছে পরিস্কারভাবে ফুটে উঠবে।
যদি কারো চোখ পিটপিট করে, বুঝতে হবে, সে খুব নার্ভাস হয়ে আছে। আবার কেউ ধরুন আপনার দিকে তাকিয়ে কথা বলছে না। সেক্ষেত্রে সে কোনও গিল্টি ফিলিংসে ভুগছে।
মাথার চুলকে তো আন "অফিসিয়াল রেজিউমে" বলা হয়। আবার যদি দেখেন দূরে একটি ছেলে আর মেয়ে বসে আছে, সেখানে মেয়েটি নিজের চুল আঙ্গুলে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে খেলছে, আর কথা বলছে। তখন ওদের বিরক্ত করবেন না। আহা, নিজের সেই বয়স মনে করে দেখুন না, কেমন লাগে?
এরকম নানা বিষয় আছে, যা একটু খুঁটিয়ে লক্ষ্য করলে, দেখতে পাবেন শব্দের পেছনের চিত্র ও আপনার কাছে পরিস্কার হয়ে ফুটে উঠেছে। তাই হঠাৎ যদি জানতে পারেন, খুব 'অন্তরঙ্গ' বন্ধু ব্যাকস্ট্যাবিং করেছে। অবাক না হয়ে ভাবুন, কোন ইঙ্গিতগুলো আপনি এড়িয়ে গেছেন। কারণ আপনি হিংস্র বাঘকে 'চুমু' খেতেই পারেন। তাই বলে বাঘ তো আর আপনাকে ছেড়ে দেবে না। তাই সবসময় শব্দের পেছনের চিত্র বুঝে নিয়ে, নিজেকে নিরাপদ রাখুন।
(www.theoffnews.com - speak gesture posture)
Ďorson somridhwa likhon
ReplyDelete