তানজিন তিপিয়া, লেখক ও রন্ধন বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ:

যুদ্ধ শান্তি। স্বাধীনতা দাসত্ব। অবজ্ঞতাই শক্তি।

ক্ষমতা একটি উপায় নয়; এটি একটি ধ্বংস। 

----উপন্যাস “১৯৮৪” জর্জ অরওয়েল

দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর এটি প্রথম যুদ্ধ যার সাক্ষী হতে যাচ্ছেন ইউরোপ, মাধ্যম- রাশিয়া এবং ইউক্রেন। যদিওবা ধরিত্রীতে কোন না কোন কালে কোন না কোন সময়ে চলমান যুদ্ধের রক্ত শুকোনোর প্রক্রিয়া চলমান।

বর্তমানের সংঘর্ষটি আলোচিত বেশি কারণ এখানেও দেখা যাচ্ছে একটি নীরব শীতল অদৃশ্য স্নায়ু যুদ্ধ- কে কার থেকে বেশি শক্তিধর ইউরোপ নাকি রাশিয়া একা? আসলে বিষয়টি এখন আর মানবতায় নেই, রাজনীতিতেও নেই। চলে গেছে নিজ জেদের উপর। কেউ একজন পিছ পা হলে তো তাকে গোটা বিশ্বের কথা শুনতে হবে। ছিঃ! পিছু হটেছে নিশ্চয়ই ভয়ে। এমনও গুঞ্জন কিছু বিজ্ঞ ব্যক্তিরা এই দুঃসময়েও করে যাচ্ছেন। যা এই যুদ্ধে আগুনে ঘি ধালার কাজ করছে। তাদের জন্য এটি শুধুমাত্র অনুমান বা খবরের কাগজ ভরিয়ে দেবার লেখনি বা দূরদর্শনের দর্শকদের মনোরঞ্জন দেবার উপায় কেবল। কে কিভাবে আছে? কে কিভাবে মরছে? তাতে কিছু আসে যায় না। নিজ নিজ স্বার্থে সকলে অটল, অনড়।

এই সংঘাত, উগ্রতার পেছনের গল্প জানতে বুঝতে খুব বেশি ইতিহাস ঘাটবার প্রয়োজন নেই। পাঁচ বছর বয়সী শিশুর মস্তিস্ক পরিমাণ বুদ্ধি থাকলেই যথেষ্ট। যুদ্ধ কিন্তু দুই পরাশক্তির মাঝে। ২৬ ডিসেম্বর ১৯৯১ সনে একপক্ষ ছিলেন তিনি যিনি পরীক্ষায় প্রথম হতে হতেই দ্বিতীয় হয়ে রয়ে গেলেন আর যিনি প্রথম হয়েছিলেন তিনি এমন দাবার চাল চেলেছেন যে, দ্বিতীয় স্থান অধিকারকারীর নাম নিশান গুটিয়ে দিতে কৌশলে গুম, খুন, ডাঙ্গা  যুদ্ধ, কোনও পন্থা বাদ দেননি।  কিন্তু বলে না “বাঘের বল বারো বছর” ৩০ বছর পর পাল্লা ভারি এখন সেই পরীক্ষায় দ্বিতীয় হওয়া ছাত্রটির। তিনিও ওই একই পন্থা অবলম্বন করে যেকোন উপায়ে প্রথম স্থানটি এবার চান-ই। চলুক যুদ্ধ, মরুক মানুষ, ভাসুক অর্থনীতি। নেশা তো কাটবে যতক্ষণ না ইউক্রেন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়ে শ্মশানের রুপ নেবে। কারণ মাথা নুয়ে আত্মসমর্পণ করার পক্ষে ইউক্রেনবাসীরা নয় কিন্তু। 

বিজ্ঞান প্রগতির আধুনিক যুগে আমরা ভেবেছিলাম- যুগটা কতো সমৃদ্ধ এখন তলোওয়ার নিয়ে রাজার হুকুমে জমি দখলের উদ্দেশ্যে যুদ্ধে শহীদ হতে হয় না। ঠিক, তবে সময় পাল্টেছে কিন্তু ধরণ এখনও একই। মানুষের নোংরা লোভী হিংস্র মন মানুষের কাছেই তো আছে। সেসব গুণাবলীগুলো তো আর পাল্টেনি। অতীতে তিনি ছিলেন গোলামের রাজা এখন আধুনিকায়নের জোরে তিনি গোলামদেরই  রাষ্ট্রপ্রধান বা পরাশক্তি। পার্থক্য কেবল- তখন যুদ্ধে যেতে হতো ঘোড়ায় চড়ে এখন একখানা সুইচ চাপলেই একটি শহর তাসের ঘর। 

আমরা জনগণ ঠকেছিলাম, ঠকছি, হয়তো ঠকেই যাব আপাতত। তা আবার কি করে? এই যে নিজ সৎ আয়ের অংশ থেকে কর প্রদান করে। তারা আমাদের উপার্জন দিয়ে যুদ্ধবিমান কেনেন, অস্ত্র বানান, নিউক্লিয়ার বোমা ছোড়েন আমাদেরই মতো অন্য একটি মানুষকে ধ্বংস করতে। তাই কোন না কোনভাবে আমরাও দ্বায়ী। আমরাই আমাদের দেশকে সমৃদ্ধির নামে ভয়ঙ্কর বস্তুতে পরিণত করি। প্রতিনিধি নির্বাচিত করে তার হাতে দিই ক্ষমতা নামক হাতিয়ার।

মানুষকে ধ্বংস করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল তাদের ইতিহাস সম্পর্কে তাদের নিজস্ব উপলব্ধিকে অস্বীকার করা এবং মুছে ফেলা- জর্জ অরওয়েল। 

এই রক্তাক্ত রঙ্গমঞ্চ দেখে পূর্ব রচিত কিছু পবিত্র বাক্য সত্যি মনে হবে- তোমরা তাদের ফল (আচার আচরণ/ জীবন শৈলী) দেখে চিনতে পারবে। বাইবেল, মোথি ৭:১৬। সত্য একটাই, ঋষিরা একে বিভিন্ন নামে ডাকেন- ঋক বেদ। 

তবে সময় সুযোগ সবার আসে। আজ যিনি দুর্বল কাল তিনি আবার দাপটের সঙ্গে ফিরে পাবেন উনার সম্মান সার্বভৌমত্ব শুধু অপেক্ষাটা হওয়া চাই ধৈর্য সহকারে।

(প্রচ্ছদ ছবির মানচিত্র এঁকেছেন প্রতিবেদক স্বয়ং)

(www.theoffnews.com - Russia Ukraine war)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours