কৃষ্ণা গুহ রায়, লেখিকা ও সমাজকর্মী, কলকাতা:

মৃত্যু, তদন্ত, শোক প্রকাশে মোমবাতি নিয়ে মৌন মিছিল, প্রতিবাদের শব্দ উচ্চকিত হতে হতে ক্রমশঃ স্তব্ধ৷ গান, কবিতা, থিয়েটার আর সোশ্যাল মিডিয়ায় ছয়লাপ নির্যাতিতার নির্যাতনের সমবেদনায়৷ আসলে জন্ম থেকেই মেয়েরা বুঝে যায় মেয়ে মানেই মাঝারি বা ছোট সাইজের মাছটা তাদের জন্য৷ কম দামী জিনিসটা তাদের জন্য৷ 

মেয়ে জন্মানোর পর বাড়ির সবার মুখটাই কালো৷ মেয়ের পরে আবার মেয়ে হওয়ার পর সবার মুখটা আরও কালো৷ আমার খুব মনে পরে আমারই এক পরিচিত পরিবারে দেখেছিলাম মা ছেলেকে ঘরের ভেতর টিউব লাইটের আলোয় পড়ার ব্যবস্থা করে দিত৷ আর মেয়ে বারান্দায় বাল্ব জ্বালিয়ে পড়ত৷ 

পণপ্রথার জন্য বধূহত্যা, কন্যাভ্রুণ হত্যা, মেয়েদের রজঃস্রাবের পর পরিবারেরই কোনও কাকা, মামা অথবা তাদেরই কোনও পুরুষ বন্ধুর আঙ্গুলগুলো অবাধ্য হয়ে ওঠে উদ্ভিন্না মেয়েটির গোপন অঙ্গে৷ যে কোনও পাবলিক ট্রান্সপোর্টে পুরুষরাই নিঃশব্দে "অঙ্গ সে অঙ্গ মিলায়"। 

রাজা রামমোহন রায় যতই লর্ড বেন্টিঙ্কের সাহায্যে সতীদাহ প্রথা বন্ধ করুক না কেন, এখনও কোনও মহিলার ক্ষেত্রেই সতীত্ব শব্দটা উচ্চারিত হয়৷ কোনও পুরুষের ক্ষেত্রে হয় না৷ 

দুজন পরিনত মনস্ক মানুষ যদি সম্পর্ক গড়ে তবে অভিযোগের তীরটা ওঠে মেয়েদের দিকেই৷ আর কোনও কাজ নেই তাদের যারা এসব পরনিন্দা, পরচর্চায় নিজেকে নিমজ্জিত রাখেন৷

এই প্রসঙ্গে বলি, যারা পরনিন্দা করেন, একটু খোঁজ নিলে দেখা যাবে আসলে তাদের নিজের জীবনেই ঘোরতর অশান্তি অথবা কাজের মতন কাজ নেই তাহলে একটু চুলকে চল্লিশ করি৷ আর সবার কাছেই এখন সেলিকল, কাজেই তাতেও যখন কাজ হয় না তখন কি আর করা যাবে? অগত্যা লুডোই খেলি৷ প্রকারান্তরে কাজের কাজ কিছু হয় না শুধুমাত্র এসব করে তারা তাদের রুচির পরিচয়টাই দেন৷

মনে পরে বানতলার ঘটনা৷ স্বাস্থ্যকর্মী অনিতা দেওয়ানের কথা৷ মনে পরে দেবযানী বণিকের কথা৷ দিল্লীর নির্ভয়া কান্ড, কামদুনি, ছোট্ট আসিফার কথা, আরও কত ঘটনা, হাথরসের গণধর্ষণ৷ সেখানে আবার ধর্ষিতার সঙ্গে আরও একটি শব্দ দলিতা৷ 

এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত অভিমত আমরা প্রতিটা মেয়েই দলিতা, সেটা কোনও না কোনওভাবেই৷ এখন সময় এসেছে নিজেকে প্রশ্ন করার৷ এর জন্য দায়ী কে? দায়ী আমরা নিজেরাই৷

নারীবাদীদেরও একটা কথা বলার আছে পুরুষরা যদি খারাপ হত তাহলে মেয়েরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল হতে পারত না৷ উদার মনস্ক পুরুষ এখনও আছেন এবং সবসময়েই থাকবেন৷

আর এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরাতো সবাই সাংবাদিক৷ নিজের ভাবনা চিন্তাকে উগরে দিই৷ তারপর নিভু আঁচে মাটির হাড়ি বসিয়ে অপেক্ষায় থাকি আবার কবে কাঠ, কয়লা দিয়ে উনুন সাজিয়ে আগুন জ্বালাবো৷

(www.theoffnews.com - women)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours